দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা হিজবুল্লাহর বিভিন্ন আস্তানা থেকে দূরে থাকার জন্য ট্রেক্সট এবং ভয়েস ম্যাসেজে সতর্কবার্তা পাচ্ছে।
Published : 23 Sep 2024, 08:24 PM
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় সোমবার একদিনেই অন্তত ২৭৪ জন নিহত এবং ৭শ’র বেশি মানুষ আহত হয়েছে। প্রায় একবছরের মধ্যে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাতে এটিই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট সোমবার তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “আমরা লেবাননে হামলার পরিসর বাড়িয়েছি। উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িঘর ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামলা চলবে।”
ওদিকে, দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দারা ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিভিন্ন আস্তানা থেকে দূরে থাকার জন্য ট্রেক্সট এবং ভয়েস ম্যাসেজে সতর্কবার্তা পাচ্ছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, “ইসরায়েল লেবাননের সব শহর ও গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে। তাদের আছে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা।”
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সোমবারের ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু ও চিকিৎসাকর্মীরাও।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচে আদ্রেই এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, লেবাননে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ৩০০টিরও বেশি নিশানায় হামলা চালানো হয়েছে।
অপরদিকে হিজবুল্লাহ দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল ও বেকা এলাকা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে এবং উত্তর ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে রকেট ছুড়েছে।
এর আগে, রোববার ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে তুমুল গুলি বিনিময় হয়েছে। লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েল বিমান থেকে ঘন ঘন বোমা হামলা চালাচ্ছে। ওদিকে, হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের অনেক ভেতরে রকেট হামলা চালাচ্ছে।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের প্রাণঘাতি ড্রোন হামলার পর রোববার এর বদলায় হিজবুল্লাহ উত্তর ইসরায়েলে ১৫০ টি রকেট নিক্ষেপ করে। এসব রকেট হামলায় ইসরায়েলে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মানুষজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বুধবারের হামলায় পেজার ও ওয়াকিটকি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আহত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষ। ইসরায়েল এ হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।
লেবাননের টেলিকম কোম্পানি ওজেরোর প্রধান ইমাদ ক্রেইদিয়েহ সোমবার রয়টার্সকে বলেন, নেটওয়ার্কে ৮০ হাজারেরও বেশি স্বয়ংক্রিয় কল শনাক্ত করা হয়েছে, যেখানে লোকজনকে তাদের এলাকা খালি করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের আহ্বান 'বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ'।
সোমবার দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দাদের একটি নম্বর থেকে ফোন করে হিজবুল্লাহর যে কোনও আস্তানা থেকে এক হাজার মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। লেবাননের রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত ফোনে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কল পাওয়া গেছে।
'মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ':
লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় ভবনটি খালি করার নির্দেশ দিয়ে একটি কল এসেছে, কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো কাজ করবে না।বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে মাকারি বলেন, 'এ এক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ।
বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় সাসিন জেলার রাষ্ট্রীয় কর্মচারী জোসেফ গাফারি বলেছেন, তার আশঙ্কা, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের তীব্র হামলার জবাব দেবে। পাল্টাপাল্টি হামলায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, “হিজবুল্লাহ যদি বড় ধরনের কোনও অভিযান চালায়, তাহলে ইসরাইল এর জবাব দেবে। আমরা এটি সহ্য করতে পারছি না।”
বৈরুতের এক দোকানদার রয়টার্সকে বলেন, তিনি হামলার ভয়াবহতাকে 'যুদ্ধের ইঙ্গিত' হিসেবে দেখছেন। “তারা যদি যুদ্ধ চায়, তাহলে আমরা কী করতে পারি? এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না,” বলেন তিনি।
এর আগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার সতর্কবার্তাটি 'লেবাননের সব নেটওয়ার্ক ও প্ল্যাটফর্মে আরবি ভাষায় বলা হচ্ছে।
লেবাননে সম্ভাব্য ইসরায়েলের অনুপ্রবেশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাগারি বলেন, “উত্তর ইসরায়েলের সরিয়ে নেওয়া বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা যা কিছু প্রয়োজন তা করব। হিজবুল্লাহ আপনাদের বিপদে ফেলছে। আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে বিপদে ফেলছে।”
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তের শহরগুলোতে এবং উত্তরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভয়াবহ বোমা হামলা চালায়।
সোমবার লেবাননের বন্দর নগরী বাইব্লোসের পূর্বাঞ্চলে জনবসতিহীন একটি পাহাড়ে একটি রকেট আঘাত হেনেছে বলে স্থানীয় এক বাসিন্দা ও লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এলাকাটি খ্রিস্টান ও শিয়া অধ্যুষিত গ্রামের মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী টায়ারে রয়টার্সের সাংবাদিকরা দক্ষিণ লেবাননের ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমানের শব্দ শুনতে পেয়েছেন এবং কাছাকাছি বেশ কয়েকটি বিমান হামলার শব্দ শুনেছেন।
হিজবুল্লাহর সংবাদমাধ্যম আল-মানার জানিয়েছে, উত্তর লেবাননের হারমেল এলাকায়ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান।