অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির ১০ বছর ধরে স্ত্রীকে অচেতন করে অন্যদের দিয়ে ধর্ষণ করানোর সেই ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন এই পুরুষরা।
Published : 12 Dec 2024, 12:33 AM
তারা কেউ তরুণ, কেউ বৃদ্ধ, কেউ মোটা, কেউ পাতলা, কেউ কৃষ্ণাঙ্গ, কেউ বা শ্বেতাঙ্গ। তাদের মধ্যে কেউ দমকলকর্মী, কেউ গাড়িচালক, কেউ সেনা, কেউ বা নিরাপত্তারক্ষী, এমনকি একজন সাংবাদিক ও ডিজে আছেন। এই পুরুষদের সংখ্যা ৫০।
ফ্রান্সে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যক্তির ১০ বছর ধরে স্ত্রীকে অচেতন করে অন্য পুরুষ দিয়ে ধর্ষণ করানোর সেই হতবাক করা ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন এই ৫০ জন।
৭২ বছর বয়স্ক ডমিনিক পেলিকোতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রথমে তার স্ত্রী জিজেল পেলিকোতকে মাদকের নেশায় অচেতন করতেন, এরপর অন্য পুরুষ দিয়ে তাকে ধর্ষণ করাতেন। ধর্ষণ করানোর জন্য অনলাইনে লোক খুঁজতেন ডমিনিক।
১০ বছর ধরে ৯২ বার এভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন স্ত্রী জিজেল। ৭২ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেই ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অ্যাভিগনোনে গত সেপ্টেম্বর থেকে এই মামলায় ডমিনিকের বিচার চলছে।
বিবিসি জানায়, আগামী সপ্তাহে মামলার বিচার শেষে অভিযুক্তদের সাজার রায় হতে পারে। দোষী সাব্যস্ত হলে সম্মিলিতভাবে ৫০ জন পুরুষের কারাদণ্ডের মেয়াদ হবে ৬০০ বছরের বেশি।
অভিযুক্তদের বেশির ভাগই এসেছেন জিজেল এর গ্রাম মাজানের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যকার ছোট শহর ও গ্রাম থেকে।
অভিযুক্তদের মধ্যে একজন ৬৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ক্রীড়া কোচ। তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তার চার বছরের কারাদণ্ড হবে। আরেক অভিযুক্ত হলেন, ৬৩ বছর বয়সী রোমেইন ভি।
তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তার ১৮ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এই ব্যক্তি নিজে এইচআইভি সংক্রমিত ছিলেন জানার পরও জিজেল-কে বিভিন্ন সময় কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়েই ৬ বার ধর্ষণ করেছেন।
যদিও রোমেইন ভি’র আইনজীবী বলছেন, তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাই এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ভয় নেই।
কৌঁসুলিরা এই মামলায় এমন বিস্তারিত খুঁটিনাটি জানতে পেরেছেন। কারণ, জিজেল পেলিকোতের স্বামী ডমিনিক এক দশকের বেশি সময় ধরে স্ত্রীকে ধর্ষণ করানোর সব ঘটনা ভিডিও করে রেখেছিলেন।
ডমিনিক নিজে আদালতে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ স্বীকার করেছেন এবং আদালতকে বলেছেন, তার সঙ্গে অভিযুক্ত ৫০ জনও দোষী। ভিডিও’র কারণে অভিযুক্তরা দোষ অস্বীকার করতে পারবেন না।
তবে ফ্রান্স ধর্ষণবিরোধী আইনানুযায়ী, ‘সহিংসতা, জবরদস্তি, হুমকি বা আকস্মিকভাবে’ যৌন নিপীড়ন করা হলে তাকে ধর্ষণ বলা যাবে। এতে ভুক্তভোগীর অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনের কথা বলা হয়নি।
এই আইনের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, জিজেল পেলিকোত অনুমতি দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তাই ওই ঘটনা ধর্ষণ হতে পারে না।
স্বেচ্ছাসেবী এক দমকলকর্মী বলেন, ‘আমার শরীর তাকে ধর্ষণ করেছে, কিন্তু আমার মস্তিষ্ক এতে সায় দেয়নি।’
৫০ জন পুরুষের মধ্যে আছেন ৬৩ বছর বয়সী জেন-পিয়ারি নামের আরেকজন। তিনি জিজেল-কে ধর্ষণে অভিযুক্ত হননি। তবে ডমিনিককে দেখে জেন-পিয়ারি নিজের স্ত্রীকে কীভাবে অপব্যবহার করবেন সে শিক্ষা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
ডমিনিকের দেখাদেখি পিয়ারি পাঁচ বছর ধরে এমন কাজ করেন বলে স্বীকার করেছেন। তার এই অপরাধের জন্য তিনি ডমিনিককে দুষেছেন। কৌঁসুলিরা পিয়ারির ১৭ বছরের কারাদণ্ড চেয়েছেন।