পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতে যাবে। সেই মতোই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
Published : 21 Jan 2025, 08:15 PM
ভারতে পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা হয়েছে সোমবার। এরপর দিনই সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার।
সোমবার রাতেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার উচ্চ আদালতে যাবে। সেই মতো মঙ্গলবার সকালেই মামলা দায়ের এবং গৃহীত হয়েছে।
এই তড়িঘড়ির কারণ, মমতার এ সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক’। অর্থাৎ, মমতা একজন প্রশাসক হিসাবে ভেবেচিন্তে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গত আগস্টে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস অপরাধ সারা দেশে নারীর নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়ে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এ ঘটনার বিচার এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবিতে পুরো দেশের মানুষ প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
হাসপাতালের অভ্যন্তরে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্ন ছিল কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। আরজি কর নিয়ে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকার সময় মমতা দাবি তুলেছিলেন, ধর্ষক-খুনির ফাঁসি চান তিনি।
তার পর ওই মামলার তদন্তভার আদালতের নির্দেশে যায় সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু নিম্ন আদালতে সিবিআই যে তথ্যপ্রমাণ পেশ করেছে, তার ভিত্তিতেই মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে দোষী সাব্যস্ত করে সঞ্জয়কে আজীবন কারাবাসের (বা আমৃত্যু কারাবাস বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড) নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস তার রায়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কেন তিনি মনে করছেন না আরজি করের ঘটনা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’, যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন।
তার পরেই তিনি জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন জানাবে রাজ্য সরকার। এরপর সেপথেই এগুলেন তিনি।
আদালতের রায়ে খুশি হননি নিহত চিকিৎসকের বাবা-মাও। মায়ের দাবি ছিল, এ ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে সিবিআই। সেই কারণেই বিচারক সঞ্জয়কে সর্বোচ্চ শাস্তি দেননি।
ওদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটি অবশ্যই একটি 'রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার' মামলা, যা মৃত্যুদণ্ডের দাবি রাখে।”
তিনি আরও বলেন, “বিচারক কীভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন যে এটি রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার নয়?!”
মঙ্গলবার একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পশিচমবঙ্গ সরকার এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে চায়।
অন্যদিকে, সঞ্জয় রায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আসামীপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা এই দোষী সাব্যস্তকরণের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।