অস্ত্র, ইইউ সদস্যপদের জন্য দেনদরবারে ব্রাসেলস যাচ্ছেন জেলেনস্কি

ইইউর সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের বেলজিয়ামের রাজধানীতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ারও কথা রয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2023, 11:26 AM
Updated : 9 Feb 2023, 11:26 AM

রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে আরও অস্ত্র চাইতে এবং ইউক্রেইনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা দ্রুত শুরুর জন্য ইউরোপীয় নেতাদের কাছে দেনদরবার করতে ব্রাসেলস যাচ্ছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

ইউরোপ সফরের তৃতীয় বিরতিতে বৃহস্পতিবার ইইউর সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি তার বেলজিয়ামের রাজধানীতে অবস্থিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ারও কথা রয়েছে।

ইউক্রেইনের এ নেতা তার আকাঙ্ক্ষিত সবকিছুর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক আশ্বাস না পেলেও এই সফর তাকে রাশিয়ার সেনা অভিযান শুরুর পর প্রথমবার ইইউর ২৭ দেশের নেতার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করে কিইভের চাহিদা জানানোর সুযোগ করে দেবে, বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে জানামতে দ্বিতীয়বার ইউক্রেইন ছাড়লেন জেলেনস্কি, এর আগে ডিসেম্বরে আকস্মিক এক সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন তিনি।

এবার তার যাত্রা শুরু হয় বুধবার লন্ডন নেমে; সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ইউক্রেইনের পাইলটদের জন্য অত্যাধুনিক নেটো যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণের আশ্বাস আদায় করে নিয়েছেন।

প্যারিসে ডিনারে তিনি একত্রিত হয়েছিলেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে। সেখানেও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্টের কিইভের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র চেয়েছেন।

“ফ্রান্স ও জার্মানির গেম চেঞ্জার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, আজকের আলোচনকে আমি সেরকমভাবেই দেখছি। যত দ্রুত আমরা ভারী দূরপাল্লার অস্ত্র পাবো, আমাদের পাইলটরা অত্যাধুনিক বিমান পাবে, তত দ্রুত রাশিয়ার আগ্রাসনের সমাপ্তি ঘটবে,” বলেছেন জেলেনস্কি।

ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায়ও তিনি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের ওপর জোর দিয়েছেন, যেখানে তিনি নেটোর বিমানকে ‘উইংস ফর ফ্রিডম’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সুনাক রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেইনে জঙ্গিবিমান পাঠানোর প্রসঙ্গে বলেন, কোনোকিছুই আলোচনার বাইরে নয়।

রয়টার্স বলছে, ব্রিটেনের এই ঘোষণা কিইভে যুদ্ধবিমান পাঠানোর ঘোষণা নয়; কিন্তু এটি এমন একটি সংকেত যা অন্য দেশগুলোর জন্য বিমান পাঠানোর পথ খুলে দিতে পারে।

পশ্চিমা দেশগুলো এখন পর্যন্ত ইউক্রেইনকে সেই ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ও বিমান থেকে বিরত রয়েছে, যেগুলো দিয়ে কিইভ রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে আঘাত হানতে পারে।         

তবে ধীরে ধীরে তারা সেই ‘সীমারেখা’ তুলে নিচ্ছে। একসময় ইউক্রেইনে অত্যাধুনিক ট্যাংক পাঠানোর ব্যাপারেও আপত্তি ছিল তাদের। কিন্তু সম্প্রতি তারা সেখানে ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যদিও তাতে ইউক্রেইনের জন্য তেমন লাভ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যে কারণে জেলেনস্কিসহ কিইভের কর্মকর্তারা এখন অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও আরও দূরপাল্লার অস্ত্রশস্ত্রের জন্য পশ্চিমা মিত্রদের দ্বারস্থ হয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেইনে এফ-১৬ জঙ্গিবিমান দেওয়ার প্রস্তাব ফের নাকচ করে দিলেও কয়েকদিনের মধ্যে দেশটির জন্য ২০০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা ঘোষণা করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে; এবারের সহায়তায় ওয়াশিংটন কিইভকে বোমাসহ গত বছরের দ্বিগুণ পাল্লার রকেট দেবে বলেই ধারণা সবার।

যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার দূতাবাস ইউক্রেইনে বিমান পাঠানোর ব্যাপারে লন্ডনকে সতর্ক করে বলেছে, এ ধরনের পদক্ষেপের প্রভাব সমগ্র বিশ্বের ওপরই পড়বে।

বৃহস্পতিবারের ইইউ সম্মেলনে ইউক্রেইন তাদেরকে সদস্য করে নেওয়ার আলোচনা কয়েক মাসের মধ্যে শুরু করতে ব্যাপক চাপ দেবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।

প্যারিসে শলৎসকে কিইভের এ সংক্রান্ত উদ্বেগে সমর্থন দিতেও দেখা গেছে।

“আমি ব্রাসেলকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, ইউক্রেইন ইউরোপীয় পরিবারেরই সদস্য,” বুধবার বলেছেন তিনি।

ইউক্রেইনের এক কর্মকর্তারা বলেছেন, “ইইউতে যোগদানের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত যে এ বছরই হবে, সে ব্যাপারে ইউক্রেইন নিশ্চিত।”

রয়টার্স লিখেছে, ইইউর অনেক দেশ সদস্যপদপ্রাপ্তির আলোচনা শুরুর মাধ্যমে ইউক্রেইনের ‘মনোবল বৃদ্ধি’ করতে চাইলেও জোটের অনেক দেশই এ ব্যাপারে বেশ সাবধানতার সঙ্গে এগুতে আগ্রহী। আলোচনা শুরুর আগে সদস্য হতে চাওয়া দেশের অবশ্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযানসহ অনেকগুলো শর্ত পূরণ করতে হবে- এই ব্যাপারের ওপরই জোর দিচ্ছেন তারা।

এবারের সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর ইইউর নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা।

বুধবার শলৎস বার্লিনে বলেছেন, যুদ্ধের বর্ষপূর্তির কাছাকাছি সময়ে ইইউ মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করবে।

ইইউ যে ২৪ ফেব্রুয়ারি বা তার কাছাকাছি সময়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার দশম প্যাকেজ আরোপ করতে যাচ্ছে, কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতমাসেই তা রয়টার্সকে বলেছিল।

পূর্বাঞ্চলে চলছে তুমুল লড়াই

বুধবারও পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে তীব্র রুশ হামলা অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছে ইউক্রেইনের সামরিক বাহিনী।

মস্কোর বাহিনীর মনোযোগ এখন কুপিয়ানস্ক, লিমান, বাখমুত ও আভিভকার বিভিন্ন এলাকা দখলে, ফেইসবুকে বলেছে ইউক্রেইনের জেনারেল স্টাফ।

রাশিয়া উত্তর, উত্তরপূর্ব এবং মধ্যাঞ্চলীয় সুমাই, খারকিভ ও জাপোরিঝিয়াতেও বিমান হামলা ও গোলা ছুড়েছে, বলেছে তারা।  

রয়টার্স নিরপেক্ষভাবে এসব ভাষ্য যাচাই করে দেখতে পারেনি।

গত বছরের দ্বিতীয়ভাগে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেইনের বড় ধরনের সাফল্যের পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া ফ্রন্টগুলোতে লাখো নতুন সেনা পাঠিয়ে ‘মোমেন্টাম’ নিজেদের দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

গত কয়েকমাসের শীতকালীন যুদ্ধে তারা ইউক্রেইনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। দুই পক্ষই এই শীতকালীন যুদ্ধকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাণঘাতী লড়াই বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।

কিইভ বলছে, সেনা পাঠানোর বর্ষপূর্তি ধরে রাশিয়া ইউক্রেইনে বড় ধরনের আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছে।

ইউক্রেইনের সঙ্গে পশ্চিমাদের জোটবদ্ধ হওয়াকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি অ্যাখ্যা দিয়ে রাশিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেশী সেনা পাঠিয়ে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে তারা ইউক্রেইনের বেশকিছু অঞ্চলকে নিজেদের সীমানাভুক্তও করেছে।

ইউক্রেইন ও এর পশ্চিমা মিত্ররা বলছে, জমি দখল করতে রাশিয়া বিনা উসকানিতে আক্রমণ শুরু করেছে।