শৈশবে কলমের মাথা গিলে ফেলার দীর্ঘ ২১ বছর পর এক যুবকের ফুসফুস থেকে সেটি অস্ত্রোপচার করে বের করে এনেছেন ভারতের হায়দ্রাবাদের চিকিৎসকরা।
Published : 19 Feb 2025, 08:18 PM
মাত্র পাঁচবছর বয়সে এক শিশুর গিলে ফেলা একটি কলমের মাথা ২১ বছর পর ফুসফুস থেকে অস্ত্রোপচার করে বের করে এনেছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দ্রাবাদে। সেখানকার কোন্ডাপুরে কেআইএমএস হাসপাতালের চিকিৎসকরা এই অস্ত্রোপচার করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ লিখেছে, করিমনগরের ২৬ বছর বয়সী ওই যুবক শৈশবে অসাবধানতাবশত ১ সেন্টিমিটার আকৃতির প্লাস্টিকের কলমের মাথাটি গিলে ফেলেছিলেন। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে তার দেহে রয়ে যাওয়া এই বস্তু লাগাতার কাশি এবং ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
গত এক মাসে যুবকের অবস্থার অবনতি হলে তিনি চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। চিকিৎসকরা জানান, তার ফুসফুসে কিছু সমস্যা আছে। গত দশদিনে যুবকের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাওয়ায় তিনি ঘুমাতে পারছিলেন না। এরপর সিটি স্ক্যানে তার বাম ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ে।
পরবর্তীতে কেআইএমএস হাসপাতালে আরও স্ক্যান করার পর অস্ত্রোপচার করে ফুসফুসে আটকে থাকা প্লাস্টিকের কলমের ক্যাপ বের করা হয়। তার এই চিকিৎসায় নেতৃত্ব দেন কনসালট্যান্ট ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজিস্ট ডা. শুভকর নাদেলা।
তিনি বলেন, “রোগী আসার পর আমরা সিটি স্ক্যান করি। স্ক্যানে তার ফুসফুসে একটি মাংসপিণ্ডের মতো কাঠামো দেখায়। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, কোনো কিছু আটকে গিয়েছে, যার ফলে তার এই দীর্ঘদিনের কাশি। তবে স্ক্যানের পর জানতে পারি, আটকে থাকা জিনিসটি আসলে একটি কলমের মাথা।”
বিভ্রান্তি দূর করতে চিকিৎসকরা যুবকটির বড় ভাইকে ডেকে তার শৈশবের ঘটনা জানতে চান। এরপরই ভাইয়ের কাছ থেকে চিকিৎসকরা জানতে পারেন শৈশবে যুবকের কলমের ক্যাপ গিলে ফেলার ঘটনা।
ছোটসময় ওই ঘটনার পরই তাকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়াও হয়েছিল। তবে পরীক্ষা করে কিছুই না পাওয়ায় চিকিৎসক মনে করেছিলেন, বস্তুটি পরিপাকনালীর মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে বের হয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা ফুসফুস থেকে কলমের মাথাটি বের করতে প্রায় তিন ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার করেন। ‘ফ্লেক্সিবল ব্রঙ্কোস্কোপি’ দিয়ে চিকিৎসকরা সফলভাবে সেটি বের করার আগে তার আশেপাশে লেগে থাকা টিস্যু, লসিকা গ্রন্থি পরিষ্কার করেন।
“শরীরের ভিতরে এত দীর্ঘ সময় কোনও বস্তু থাকা খুবই বিপজ্জনক,” বলেন চিকিৎসক নাদেলা। তিনি আরও বলেন, “রোগী যদি আরও দেরি করতেন, তাহলে তার ফুসফুসের টিস্যু স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত এবং আক্রান্ত অংশটিও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করার দরকার পড়তে পারত।”