সমালোচকরা বলছেন, গোটা পৃথিবীতে প্লাস্টিক দূষণ যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, ওই তুলনায় এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
Published : 16 Jan 2023, 05:42 PM
প্লাস্টিকের ডিসপোজেবল কাটলারি, প্লেট, বাটি, ট্রে ও বেলুন লাঠির পাশাপাশি নির্দিষ্ট কয়েক ধরনের পলিস্টাইরিন কাপ ও ফুড কন্টেইনার ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে ইংল্যান্ড। এর ফলে, ‘একবার ব্যবহারের’ প্লাস্টিক বন্ধে দেশটি আরও ধাপ এগিয়ে গেল।
এইজাতীয় জিনিসপত্র বাংলাদেশে কথ্য ভাষায় ‘ওয়ান টাইম’ ব্যবহার্য জিনিস বলে পরিচিত।
একবার এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দেশটির লোকজন বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা, রেস্তোরা, খাদ্য বিক্রেতা ও অন্যান্য জায়গা’সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর এককালীন ব্যবহারের প্লাস্টিক পণ্য কিনতে পারবেন না।
ইংল্যান্ডের সরকারী ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে এ বছরের অক্টোবর থেকে।
তবে, দেশটির ‘এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপনসিবিলিটি স্কিম’-এর তালিকাভুক্ত থাকায় ‘প্রি-প্যাকেজ’ করা খাদ্য সামগ্রীর বেলায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই উদ্যোগ বিভিন্ন কোম্পানিকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং ব্যবহারের পাশাপাশি দেশটির ‘উচ্চ পুনর্ব্যবহারযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণে’ সহায়তা দেবে।
এই আসন্ন নিষেধাজ্ঞা দেশটির প্লাস্টিক পণ্য বিষয়ক বিদ্যমান নীতিমালাকে বিস্তৃত করবে। ২০১৮ সালে প্লাস্টিকের ‘মাইক্রোবিড’ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। বিভিন্ন ব্যক্তিগত সৌন্দর্যভিত্তিক পণ্যে এইসব ক্ষুদ্রাকারের প্লাস্টিক টুকরা ব্যবহৃত হতো। আর এগুলো সামুদ্রিক জীবনের ক্ষতি করতে পারে।
২০২০ সালে দেশটি এককালীন ব্যবহারের প্লাস্টিক স্ট্র, ড্রিংক স্টিয়ারার ও কটন সোয়াব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি অন্তত ৩০ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়নি, এমন প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবস্থা আমদানিতে কর আরোপ করেছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের বেলাতেও দেশটি আর্থিক ফি নিয়ে থাকে।
“এই বছরের শেষে নিষেধাজ্ঞা চালু করে আমরা সকল পরিহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্যের ব্যবহার তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমরা দ্বিগুণ উদ্যোমে কাজ করছি।” --এক বিবৃতিতে বলেন ইংল্যান্ডের পরিবেশ মন্ত্রী রেবেকা পাও।
গত বছর ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে প্লাস্টিকের কাটলারি ও প্লেট বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়ার পর ইংল্যান্ডের তরফ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা এলো। ২০২১ সালে একই পদক্ষেপ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এর পরও সমালোচকরা যুক্তি দেখাচ্ছেন, গোটা পৃথিবীতে প্লাস্টিক দূষণ যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, ওই তুলনায় এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ানের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জন ভিদাল বলেন, ইংল্যান্ডের নিষেধাজ্ঞার ‘পরিধি খুবই সংকীর্ণ’ কারণ এতে প্লাস্টিকের পানির বোতল ও ব্যাগের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন দহন চুল্লিতে প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর বিষয়টিও উল্লেখ নেই এতে।
অন্যদিকে, পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ‘গ্রিনপিস ইউকে’র’ একজন প্রতিনিধি এ পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তিনি এটিও বলছেন, এই পদক্ষেপ ‘অনেক আগেই আসা উচিৎ ছিল’ আর এটি এখনও প্লাস্টিকের ব্যবহার থামানোর ‘বিশাল সমুদ্রসম কার্যক্রমের’ কেবলই ছোট এক অংশ।
ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এককালীন ব্যবহারের প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে দেশটি ভেজা টিস্যু, টোবাকো ও স্যাশে’র ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি ‘সতর্কতার সঙ্গে’ বিবেচনা করে দেখছে।
গ্রাহকরা কীভাবে সঠিক উপায়ে প্লাস্টিক ধ্বংস করবে, তা জানাতে বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্যে লেবেল যোগ করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে ইংল্যান্ড। এ ছাড়া, দেশটি ‘বোতল ফেরত দেওয়ার’ এক প্রকল্প নিয়েও কাজ করছে।