জমির মূল্য বুঝি, সফটওয়্যারের মূল্য বুঝি না: মোস্তাফা জব্বার

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, “পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা কিছু টাকা বাঁচাই, কিন্তু এটা করে যে কত বড় ক্ষতি করছি তা বুঝতেছি না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2022, 06:26 PM
Updated : 13 Oct 2022, 06:26 PM

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় দেশের সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

তিনি বলেছেন, “মেধাস্বত্বের মূল্য বোঝা দরকার। বাড়িঘর জমিজমার মূল্য বুঝি, সফটওয়্যারের মূল্য বুঝি না। আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছি, আড়াই লাখ টাকার একটা ল্যাপটপ যে কিনতে পারে, সে ৪০০ টাকা দিয়া একটা বাংলা সফটওয়্যার কিনতে পারে না। এটা হলো মানসিকতা। মানসিকতার ফলে উইন্ডোজ থেকে শুরু করে হেন কিছু নাই, যা আমরা পাইরেটেড ব্যবহার করি না।”

‘সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি আয়োজিত ‘সাইবার সুরক্ষা: কী, কেন, কীভাবে’ শীর্ষক এক কর্মশালায় কথা বলছিলেন জব্বার।

কর্মশালায় উপস্থিত তরুণদের সচেতন করতে তিনি বলেন, “পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমরা কিছু টাকা বাঁচাই, কিন্তু এটা করে যে কত বড় ক্ষতি করছি তা বুঝতেছি না। কারণ যারা পাইরেটেড সফটওয়্যার প্রোভাইড করছে, তারা কিছু না কিছু স্বার্থ তো উদ্ধার করেই।”

বাবা-মায়েদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, এ যুগে সন্তান লালন-পালন করার ক্ষেত্রে তাদের উচিত ‘প্যারেন্টাল গাইডেন্স’ ব্যবহার করা। 

“তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এ পর্যন্ত ২৬ হাজার পর্নগ্রাফি ওয়েবসাইট আমরা বন্ধ করতে পেরেছি। ২০১৮ সালে আমরা টপ টেনে ছিলাম। এখন একশতেও নাই।”

মন্ত্রী বলেন, আগে তারা যে পরিমাণ সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ পেতেন, তা এখন অনেকাংশে কমে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় তরুণদের তিনি ‘টু স্টেপ ভেরিফিকেশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “এটা যদি আপনি না করেন, পুলিশ গিয়ে আপনাকে সচেতন করতে পারবে না। বিটিআরসির পক্ষে ব্যক্তি পর্যায়ে গিয়ে সচেতন করা তো সম্ভব না।”

ডিজিটাল অপরাধ এখন গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার উপজেলা পর্যায়ে প্রত্যেক থানায় সাইবার ক্রাইম ইউনিট তৈরির পরামর্শ দেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। তার ভাষায়, “আমরা যত ডিজিটাল হচ্ছি, বিপদের সম্ভাবনা বাড়ছে।” 

সাইবার অপরাধ নির্মূলে সরকারের ‘লড়াইয়ের’ কথা ‍তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যখন যুদ্ধটা শুরু করছিলাম, তখন ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মত শুরু করছিলাম। তখন তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও ছিল না।

“এখন অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তীব্র সমালোচনা করেন। কিন্তু আইনটি যখন করেছিলাম, তখন সাংবাদিক নেতাদের এমন কেউ ছিলেন না যারা ওই আলোচনার মধ্যে আংশগ্রহণ করেননি, একমত হননি। সর্বসম্মতিক্রমে অনুমতি দেওয়ার পরেই কিন্তু আমরা পার্লামেন্টে গিয়েছি।”

ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) তারেক এম বরকতউল্লাহ সাইবার সিকিউরিটির ব্যাপারে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনিও মন্ত্রীর মত বলেন, “পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে ব্যাংকিং ক্ষেত্রে। আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, কারণ এখানে ম্যাক্সিমাম কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি। এছাড়া আমরা আমাদের সফটওয়্যার আপডেট করি না। অ্যান্ড্রয়েড বলেন বা আইওএস, সফটওয়্যার আপডেটেড রাখাটা দরকার।”

সাইবার অপরাধের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ পৃথিবীর কোনো দেশের পুলিশের থেকে দুর্বল না দাবি করে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, “ইন্টারনেট এখন দেশের সব জায়গায় পৌঁছে গেছে, তাই আমাদের এখন পঞ্চগড় বা কক্সবাজার পর্যন্ত ভাবতে হয়। তবে আমরা এখন অনেকটাই সফল। ২০২১ সাল পর্যন্ত যেটা ছিল… এখন সেটা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি আমরা।”

অনুষ্ঠানে আত্মসচেতনার ওপর জোর দিয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “আপনি একটা ঘর তৈরি করলেন, সেই ঘরে স্বাভাবিকভাবেই দরজা থাকবে। কিন্তু আপনি তখন মাথায় রাখবেন যে চোর আসতে পারে। একইভাবে আপনি আপনার ডিজিটাল ঘরের দরজা বন্ধ না করে ঘুমিয়ে থাকলে সেই নিরাপত্তা তো কেউ দিতে পারবে না।”

তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্টে বাংলাদেশের সক্ষমতা বেড়েছে। গতবছর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গ্লোবাল র‍্যাংকিং ছিল ৮৪, এখন ২৯ নম্বরে।  

অপরিচিত লিংকে ক্লিক করতে নিষেধ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “৩ মাস আগে আমার কাছে যতগুলা ফাইল আসত, এখন আমার কাছে তার থেকে চারগুণ বেশি ফাইল আসে।”

এ অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।