চ্যাটজিপিটি’র বিরুদ্ধে প্রথম মানহানি মামলা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়

মেয়র ব্রায়ান হুড বলেন, তিনি ঘুষ নেওয়ার অপরাধে জেল খেটেছেন– চ্যাটজিপিটি এমন ভুল তথ্য ঠিক না করলে তিনি ওপেনএআই’র বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2023, 01:47 PM
Updated : 5 April 2023, 01:47 PM

অস্ট্রেলিয়ায় চ্যাটজিপিটি’র মালিক কোম্পানি ওপেনএআই’র বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশটির এক শেহরের মেয়র। এমনটি ঘটলে জনপ্রিয় এই চ্যাটবটের বিরুদ্ধে আনা বিশ্বের প্রথম মানহানির মামলা হবে এটি।

মেলবোর্নের উত্তর-পশ্চিম থেকে একশ ২০ কিলোমিটার দূরের শহর হেপবার্ন শায়ার থেকে নির্বাচিত মেয়র ব্রায়ান হুড বলেন, তিনি ঘুষ নেওয়ার অপরাধে জেল খেটেছেন– চ্যাটজিপিটি এমন ভুল তথ্য ঠিক না করলে তিনি ওপেনএআই’র বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

গত নভেম্বরে নিজের খ্যাতি নিয়ে শঙ্কার মুখে পড়েন হুড। সে সময় তিনি জানতে পারেন, ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংকের এক সহযোগী অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলার অপরাধী হিসেবে তার নাম দিয়েছে চ্যাটজিপিটি।

‘নোট প্রিন্টিং অস্ট্রেলিয়া’ নামে পরিচিত ওই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতেন হুড। তবে, তিনিই নিজেই সেই ব্যক্তি যিনি মুদ্রা ছাপানোর কাজ পাওয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশী কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আর হুডের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগও আনা হয়নি বলে জানান তার পক্ষের আইনজীবিরা।

গেল ২১ মার্চ তারা চ্যাটজিপিটি’র মালিক কোম্পানি ওপেনএআই’র কাছে এই উদ্বেগ নিয়ে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানোর বিষয়টিও জানান আইনজীবিরা। কোম্পানিকে এই ত্রুটি ঠিক করার জন্য ২৮ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অন্যথায়, সম্ভাব্য মানহানির মামলার মুখে পড়ার হুমকির কথাও উল্লেখ ছিল এতে।

তারা আরও যোগ করেন, স্যান ফ্রানসিসকোভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানিটি এখনও হুডের আইনি নোটিশের কোনো জবাব দেয়নি। এই প্রসঙ্গে রয়টার্স ইমেইলে ওপেনএআই’র মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো সাড়া মেলেনি।

হুড এই মামলা করলে সম্ভবত এটিই প্রথম ঘটনা হবে, যেখানে চ্যাটজিপিটির ভুল তথ্যের জন্য এর নির্মাতা কোম্পানিকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। গত বছর আত্মপ্রকাশের পর থেকে ব্যপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চ্যাটবটটি। আর গেল ফেব্রুয়ারিতে নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন বিংয়েও এটি সমন্বিত করেছে মাইক্রোসফট।

এই প্রসঙ্গে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষিকভাবে কোনো মাইক্রোসফট মুখপাত্রকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

“সম্ভবত এই অর্থে এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হবে যে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আইটি স্পেস প্রকাশনার নতুন এক ক্ষেত্রে মানহানির আইন প্রয়োগ করছে।” --রয়টার্সকে বলেন হুডের পক্ষের আইনি সংস্থা ‘গর্ডন লিগাল’-এর অংশীদার জেমস নটন।

“তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তার ভূমিকার কেন্দ্রবিন্দু হলো তার খ্যাতি।” --বলেন নটন।

তিনি আরও যোগ করেন, হুড এই কর্পোরেট কেলেঙ্কারি আলোকিত করতে একটি পাবলিক রেকর্ডের ওপর নির্ভর করেছেন। তাই সমর্থকরা এই তথ্যে প্রবেশ করলে এটি তার জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ায় মানহানি মামলার জরিমানার অংক সাধারণত চার লাখ অস্ট্রেলীয় ডলার বা দুই লাখ ৭০ হাজার ডলারের আশপাশে নির্ধারিত হয়ে থাকে। হুড এই বিষয়টিও জানতেন না যে তার সম্পর্কে প্রকাশিত ভুল তথ্যে কতোজন প্রবেশ করেছে। আর এই সংখ্যাই আর্থিক জরিমানার নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। নটন বলেন, এই মানহানিকর বক্তব্যের ধরন এতটাই গুরুতর যে তিনি দুই লাখ ডলারের চেয়েও বেশি অর্থ দাবি করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, হুড মামলা করলে চ্যাটজিপিটি’র বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ যুক্ত না করেই ব্যবহারকারীদের ভুল তথ্যের ধারণা ছড়ানোর অভিযোগ তোলা হবে।

“এর অ্যালগরিদম কীভাবে এমন উত্তর দিতে পারে?’ কেউ এমন প্রশ্ন করলে এর জবাব দেওয়া বেশ জটিল।” --বলেন নটন।

“এটা খুবই অস্বচ্ছ।”