মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ চীনের

সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই এনএসএর বিরুদ্ধে চীনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল চীন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2022, 12:11 PM
Updated : 29 Sept 2022, 12:11 PM

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)’র বিরুদ্ধে দেশের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নাগরিকদের ডেটা চুরি করার অভিযোগ তুলেছে চীন।

মঙ্গলবারের হ্যাকিংয়ের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চীনের ‘ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’। প্রতিবেদনে এনএসএর হ্যাকিং কৌশলের বিস্তারিত জানিয়েছে সংস্থাটি।

সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই এনএসএর বিরুদ্ধে চীনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

এই ঘটনায় সাইবার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মঙ্গলবারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি। বেশ ক’বছর ধরেই ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগ তুলে আসছে চীন সরকার। কিন্তু এবারই প্রথম ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করলো তারা।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব দৈনিক ‘পিপল’স ডেইলি’। এতে চীনের ‘ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’ বলেছে, নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সিস্টেমে ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ হামলা চালিয়েছিল এনএসএ।

দুই পক্ষের ডিজিটাল যোগাযোগের মাঝখানে যখন হ্যাকার আড়ি পাতে, সে পরিস্থিতিকে ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ কৌশল বলে বর্ণনা করেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ম্যান-ইন-দ্য-মিডল’ কৌশল অবলম্বন করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে এনএসএর হ্যাকাররা। সেখান থেকে অন্যান্য কম্পিউটার সিস্টেম ও সফটওয়্যারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের ব্যবহৃত আইডি-পাসওয়ার্ড চুরি করে তারা।

চোরাই আইডি-পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এরপর অন্যান্য কম্পিউটার সিস্টেমের স্পর্শকাতর ডেটায় অনুপ্রবেশ করা সম্ভব হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাকাররা চীনের টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে অনুপ্রবেশ করেন বলে অভিযোগ চীনের।

প্রতিবেদনে চীনের ‘ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’ আরও দাবি করেছে, আক্রমণের অংশ হিসেবে চীনা নাগরিকদের স্পর্শকাতর ডেটা চুরি করে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে এনএসএ।

চীনের অভিযোগ সম্পর্কে এনএসএর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।

হামলার জন্য এনএসএ-কে কেন দায়ী করা হচ্ছে তার কারও জানিয়েছে চীনের ‘ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’।

হামলায় যে টুলগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল তার মধ্যে ১৬টির সঙ্গে ২০১৬ সালে হ্যাকারদের দল ‘শ্যাডো ব্রোকার’-এর হাত দিয়ে প্রকাশিত টুলের হুবহু মিল আছে। এনএসএর নিজস্ব হ্যাকিং টুল ও কৌশলে অনুপ্রবেশের জন্য পরিচিতি আছে ‘শ্যাডো ব্রোকার’-এর।

প্রতিবেদনে চীন আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে যে সময় অফিস চলে, ওই সময়েই তৎপর ছিল হ্যাকাররা। আবার পশ্চিমা দেশটির ‘মেমোরিয়াল ডে’র মতো সরকারি ছুটির দিনে নিস্ক্রিয় ছিল হ্যাকাররা।

প্রতিবেদনে চীনা কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, ইংরেজি ভাষার মার্কিন সংস্করণ ব্যবহার করছিল হ্যাকাররা; তারা যে সব ডিভাইস হ্যাকিংয়ের ব্যবহার করেছিল, সেই ডিভাইসগুলোর অপারেটিং সিস্টেম ছিল ইংরেজি ভাষার এবং ইনপুট দিতেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রচলিত কিবোর্ড ব্যবহার করেছে তারা।

সিএনবিসি বলছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় চীন বনাম যুক্তরাষ্ট্র রেষারেষির আরেকটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের অবকাঠামোর ওপর এনএসএর আক্রমণের অভিযোগগুলো। গত কয়েক বছরে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স খাত নিয়েও রেষারেষি বেড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির।

অন্যদিকে, চীনের বিরুদ্ধে হ্যাকিয়ের পাল্টা অভিযোগ তুলে আসছে যুক্তরাষ্ট্রও।