আইনে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে কোনটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর ফরাসি সরকার এর অপব্যবহার করতে পারে বিভিন্ন পরিবেশ কর্মী ও গুরুতর হুমকি নয় এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে, এমন শঙ্কাও রয়েছে।
Published : 08 Jul 2023, 03:21 PM
অভিযুক্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে শীঘ্রই সুদূরপ্রসারী এক ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সম্প্রতি নতুন এক আইন পাশ হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গোপনে সন্দেহভাজনদের ফোন, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও জিপিএস লোকেশনে প্রবেশের সুযোগ দেবে।
আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োগযোগ্য এই নজরদারির ক্ষমতা কোনো সংবাদকর্মী, আইনজীবী বা অন্য কোনো ‘স্পর্শকাতর পেশায়’ থাকা কারো ওপর প্রয়োগ করা যাবে না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ফরাসি সংবাদপত্র ‘ল্য মঁদ’।
গুরুতর মামলায় নজরদারি সীমিত করার লক্ষ্যেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর এর ব্যপ্তিকাল সর্বোচ্চ ছয় মাস। আর লোকেশন ট্র্যাকিং কেবল সেইসব অভিযুক্তের বেলায় প্রযোজ্য হবে, অপরাধ প্রমাণ হলে যাদের পাঁচ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।
ফ্রান্সের সিনেট এর আগেও বিলটির একটি সংস্করণ পাশ করেছে। তবে, এটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে আইনসভার অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।
নাগরিক স্বাধীনতা বিষয়ক অধিকারকর্মীরা এই পদক্ষেপে শঙ্কিত। এর আগে আইনটির সম্ভাব্য অপব্যবহারের কথা তুলে ধরেছে ডিজিটাল অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘লা কোয়াদরাতঁ দ্যু নেত’।
আইনে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে কোনটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর ফরাসি সরকার এর অপব্যবহার করতে পারে বিভিন্ন পরিবেশ কর্মী ও গুরুতর হুমকি নয় এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে, এমন শঙ্কাও রয়েছে।
সংগঠনটি বলেছে, এই ধরনের আইন গুরুতর অপরাধের বাইরেও ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে। যেমন, ‘জেনেটিক রেজিস্ট্রেশন’ শুধু যৌন নিপীড়কদের বেলায় ব্যবহার করার কথা থাকলেও হলেও এখন তা বেশিরভাগ অপরাধের বেলাতেই প্রয়োগ হচ্ছে।
সংগঠনটি আরও বলছে, গোপনে নজরদারীর বিষয়টি নিরাপত্তা ত্রুটির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে, কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেলে পুলিশ সেটি ঠিক করতে বলার বদলে এর সুযোগ নেওয়ার জন্য কোনো সতর্কবার্তা না-ও দিতে পারে।
ফ্রান্সের ন্যায়বিচার মন্ত্রী এরিক দুপদ-মরেতি বলছেন, বছরে এই ক্ষমতা কেবল ‘কয়েক ডজন’ মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ইংরেজ লেখক জর্জ ওরওয়েলের বিখ্যাত উপন্যাস ‘১৯৮৪’-এ দেখানো নজরদারি ব্যবস্থার সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। তিনি বলছেন, এটি জীবন বাঁচাবে।
বিভিন্ন ডিভাইসে ফরাসি সরকারের নজরদারি নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই নতুন এই আইন এল। এরইমধ্যে নজরদারী সফটওয়্যার নির্মাতা ইসরায়েলভিত্তিক ‘এনএসও গ্রুপ’ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বী, কর্মী এমনকি রাজনীতিবিদদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।