লাখো মানুষের কাছে বিশ্বকাপের উন্মাদনা পৌঁছে দিচ্ছে টিকটক

টিকটকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের ফলোয়ারই কেবল বাড়ছে না, পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাচ্ছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2022, 09:44 AM
Updated : 11 Dec 2022, 09:44 AM

কাতার বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে শর্ট-ফর্ম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম টিকটকেও; কোম্পানির সর্বশেষ হিসেব বলছে, প্ল্যাটফর্মে ১ হাজার ২০০ কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে  #FifaWorldCup জুড়ে দেওয়া ভিডিওগুলো।

১০ লাখের বেশি নতুন ফলোয়ার পেয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখী হওয়া ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দলের অফিশিয়াল টিকটক অ্যাকাউন্ট।

টিকটকে কেবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা বাড়ছে– এমন নয়; বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে কনটেন্ট নির্মাতা ও ইনফ্লুয়েন্সারদের পালেও নতুন হাওয়া লেগেছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

কাতার বিশ্বকাপ কর্তৃপক্ষের আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় জিতে বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ সশরীরে দেখার সুযোগ হয়েছে টিকটকের কনটেন্ট নির্মাতা বেন ব্ল্যাকের। কেবল ম্যাচ দেখতে মাঠেই উপস্থিত হননি তিনি, পুরো অভিজ্ঞতা নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রচারও করছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৭ কোটির বেশি ভিউ পেয়েছে বিশ্বকাপ নিয়ে বেন ব্ল্যাকের তৈরি ভিডিওগুলো।

“ভেবে দেখলে সংখ্যাটা অদ্ভুতই মনে হয়। বিশ্বকাপ আসলে কেমন, সেটা ভক্তদের একটা বড় অংশের কাছে তুলে ধরছে (টিকটক) এবং আমি মনে করি এটা খুবই শক্তিশালী,” বিবিসিকে বলেছেন ২৪ বছর বয়সী বেন ব্ল্যাক।

তার মত স্টেডিয়ামে হাজির হতে না পারলেও এসেক্সে নিজের বাড়িতে বসে ম্যাচের বিশ্লেষণী ভিডিও বানাচ্ছেন অ্যালিস আব্রাহামস।

২২ বছর বয়সী এই টিকটকারের ভাষ্যে, “এটা খুবই ভালো আর ইতিবাচক আবহ। আমি রাশিয়ার বিশ্বকাপের চেয়েও এবারের বিশ্বকাপ বেশি উপভোগ করছি।”

আছে বোঝাপড়া, পাল্টাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি

নাচের ভিডিও বানিয়ে টিকটকে ২০ লাখের বেশি ফলোয়ার পেয়েছেন ১৯ বছর বয়সী জুনিয়র পেরেইরা। তবে ফলোয়ারের সংখ্যা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোর চেষ্টা করেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তিনি।

“কে কার চেয়ে ভালো করতে পারে, কে বেশি ভিউ আর ভক্ত পায় এ বিষয়গুলো নিয়ে কিঞ্চিৎ প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু দিন শেষে আমরা সবাই আসলে একই কাজ করছি এবং আমরা একে অন্যকে সম্মান করি। আমরা আমাদের কনটেন্ট ভাবনা নিয়ে যেমন আলোচনা করি, তেমনি একে অন্যকে অভিনন্দনও জানাই।”

কিন্তু ফুটবলের মত টিকটকেও সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটে না।

এমনই এক পরিস্থিতির উদাহরণ হিসেবে আব্রাহামস বিবিসিকে বলেছেন, “গ্রুপ পর্যায়ে এমন একটা অবস্থা ছিল যে জাপান আর কোস্টারিকা স্পেন ও জার্মানিকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিচ্ছিল। আমি এ বিষয়ে টিকটক বানানো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আর অনেক উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্পেন উৎরে যায়।”

জুনিয়র পেরেইরার ভাষ্যে, সে সময় টিকটকের কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়া ছিল, “ইয়েস, কনটেন্ট। আমার মনে হয়, কনটেন্ট নির্মাতাদের সবার ওই ৬০ সেকেন্ডে একই অনুভূতি হয়েছিল।”

কাতারে মাঠে বসে খেলা দেখার সময়েও নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে বেন ব্ল্যাকের। ব্রাজিল আর ক্যামেরুনের ম্যাচ দেখতে ব্রাজিলের জার্সি পরে মাঠে গিয়ে প্রথমে কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন।

“আমি আমার আসনে যাওয়ার পর ক্যামরুনের ভক্তদের ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি একা ব্রাজিলের জার্সি পড়ে ছিলাম। কিন্তু ক্যামেরুন ভক্তরা আমাকে বুকে টেনে নিয়েছিল। পরের ৯০ মিনিট ধরে আমরা পুরো দমে পার্টি করেছি।”

সেদিনের ম্যাচ দেখার পর ব্ল্যাক যে টিকটক ভিডিও বানিয়েছিলেন, তাতে আর ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুনের ম্যাচ গুরুত্ব পায়নি; গুরুত্ব পেয়েছিল ক্যামেরুন দলের ভক্তদের সঙ্গে বসে খেলা দেখার নানা মজার অভিজ্ঞতা।

কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে মানবাধিকার বিতর্ক অব্যাহত থাকলেও, টিকটকে বিশ্বকাপের ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলো উঠে আসায় টুর্নামেন্টকে ঘিরে থাকা সার্বিক সমালোচনার চাপ কিছুটা হলেও কমছে বলে উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। 

সমলিঙ্গের সম্পর্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর অভিবাসী শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতার। এসব কারণে ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়েই কাতার বিশ্বকাপ দেখতে বসেছিলেন অ্যালিস আব্রাহামস।

কিন্তু বেন ব্ল্যাকের মত মানুষদের ধারণ করা ভিডিও আর তাদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা দেখে আগের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও পাল্টাচ্ছে বলে বিবিসিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।