নতুন এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় ধুমপানের বিষয়টি কম প্রকাশ করলেও তারা নিকোটিনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
Published : 26 Mar 2024, 04:11 PM
ধূমপান আসক্তি তাহলে লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়! সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা উদঘাটন করতে পেরেছেন নারীদের ধূমপানে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তারা।
নারীর যৌন বৈশিষ্ট্য যে হরমোনের কারণে হয় সেটির নাম ‘ইস্ট্রোজেন’। আর পুরুষালী বৈশিষ্ট্যের পেছনে কাজ করা হরমোনের নাম টেস্টেস্টেরন।
গবেষণা বলছে, নারীদের যৌন হরমোন ‘ইস্ট্রোজেন’, নিকোটিনে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ানোর পেছনেও কাজ করে। আর সম্ভবত চিকিৎসা খাতের বেলাতেও বিষয়টি একেবারে নতুন।
নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় ধুমপানের বিষয়টি কম প্রকাশ করলেও তারা নিকোটিনের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তাই পরবর্তীতে ধূমপান ত্যাগ করার ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় বেশি লড়াই করতে হয়।
ধূমপায়ীদের মধ্যে বৈষম্যটি খুঁজে বের করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ কেনটাকি’র গবেষকরা উদঘাটন করেন, এর সঙ্গে হরমোনের কোনও যোগসূত্র থাকতে পারে।
পিএইচডি’র ছাত্র স্যালি পসের নেতৃত্বাধীন গবেষণা দলটি পরীক্ষা করে দেখেছে, ‘অলফ্যাক্টোমেডিন’-এর অভিব্যক্তিকে প্ররোচিত করে থাকে ইস্ট্রোজেন হরমোন, যা মানব মস্তিষ্কের আসক্তি প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত এক ধরনের প্রোটিন।
এ গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, ‘অলফ্যাক্টোমেডিন’কে দমন করতে পারে নিকোটিন। এর মানে, ইস্ট্রোজেন, নিকোটিন ও অলফ্যাক্টোমেডিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার কারণে সম্ভবত নারীদেরকে ধূমপান আসক্তি নিয়ে বেশি লড়াই করতে হয়।
পস আশা করেন, ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটি নতুন এ রোগের চিকিৎসার জন্য সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে ও নারীদের ধূমপান বন্ধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
“গবেষণাটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে, ঠিক কী কারণে নিকোটিন ব্যবহারের প্রভাব নারীদের ওপর বেশি, আর এটি এ আসক্তির চিকিৎসায় লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনায় সহায়ক হবে।”
“যেসব নারী আসক্তি নিয়ে লড়াই করছেন, তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর সম্ভাবনা দেখায় আমাদের এ গবেষণা।”
“আমরা যদি নিশ্চিত হতে পারি যে, ইস্ট্রোজেন অলফ্যাক্টোমেডিনের মাধ্যমে নিকোটিন সেবন করার স্পৃহাকে বাড়িয়ে তোলে, তাহলে আমরা এমন ওষুধ তৈরি করতে পারি, যা এর প্রভাব আটকে দিতে পারে।”
গবেষণা দলটি বিভিন্ন এমন জিন পরীক্ষা করেছে, যেগুলো এস্ট্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটাতে পারে। এর উদ্দেশ্য ছিল, কোন হরমোনগুলো মস্তিষ্কে কাজ করে, তা শনাক্ত করা।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন, কেবল এক শ্রেণীর জিন এই মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে, যেগুলো অলফ্যাক্টোমেডিনের জন্য কোডিংয়ের কাজ করে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে অলফ্যাক্টোমেডিন, ইস্ট্রোজেন ও নিকোটিনের মিথস্ক্রিয়া আরও ভালভাবে বুঝতে একাধিক পরীক্ষা করতে হয়েছিল গবেষকদের।
মানুষের জড়ায়ু কোষ ও ইঁদুরের ওপর চালানো পরীক্ষার ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, অলফ্যাক্টোমেডিন ইস্ট্রোজেন হরমোনকে সক্রিয় করে তোলে, যা নিকোটিনের উপস্থিতিকে দমন করে। পাশাপাশি, নিকোটিন আসক্তি প্রক্রিয়া চালাতে এটি একটি ‘ফিডব্যাক লুপ’ হিসাবেও কাজ করতে পারে।
ভালো অনুভব করার পেছনে মস্তিষ্কের কর্মপদ্ধতির বিভিন্ন পর্যায়কে সক্রিয় করে এটি করা সম্ভব,' বলেছেন পস।
ইস্ট্রোজেন নিকোটিন আসক্তিতে অবদান রাখে কি না তা নিশ্চিত করতে দলটি এখন এ নিয়ে আরও গবেষণা করতে চায়।
গবেষকরা বুঝতে চাইছেন, কীভাবে অলফ্যাক্টোমেডিন নিয়ন্ত্রিত সিগন্যালিং ব্যবস্থা কাজ করে, বিশেষ করে কীভাবে নারীদের নিকোটিন ব্যবহারের বেলায়।
পস বলেছেন, গবেষণার এ তথ্য সকল নারীর জন্য সহায়ক হবে, বিশেষ করে যারা গর্ভনিরোধক পিল আকারে বা হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির মাধ্যমে ইস্ট্রোজেন গ্রহণ করে থাকেন, তাদের জন্য।
“কারণ আমাদের গবেষণায় পাওয়া ফল সঠিক হলে এ বিষয়গুলো নারীর নিকোটিনে আসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।”