লঞ্চ সাইট: ফ্লোরিডায় অবস্থিত নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চপ্যাড ৩৯বি।
উৎক্ষেপণের সময়: বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিট।
মিশনের দৈর্ঘ্য: অন্তত ২৫ দিন ১১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট।
গন্তব্য: চাঁদের ‘ডিস্ট্যাস্ট রেট্রোগেড অরবিট (ডিআরও)’।
মোট দূরত্ব পাড়ি: প্রায় ২১ লাখ কিলোমিটার।
অবতরণ: প্রশান্ত মহাসাগরের স্যান ফ্রান্সিসকো উপকূলে।
ফেরার সময়ে গতি: ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার কিলোমিটার।
ফেরার সম্ভাব্য তারিখ: ১১ ডিসেম্বর, ২০২২।
ওরিয়নকে চাঁদে যাওয়ার বাড়তি গতি জুগিয়ে আলাদা হয়ে গেছে আইসিপিএস সিস্টেম আর আরএল-১০ ইঞ্জিন। চাঁদের পথে একাই উড়ছে ওরিয়ন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার মাইলের বেশি উচ্চতায় ঘণ্টায় প্রায় ২০ হাজার মাইল গতিতে চাঁদের দিকে ছুটে চলেছে মহাকাশযানটি।
আবার চালু হয়েছে আরএল-১০ ইঞ্জিন; চলবে টানা ১৮ মিনিট। ‘ট্রান্স লুনার ইনজেকশন বার্ন’-এর মাধ্যমে চাঁদে যাওয়ার জন্য বাড়তি গতি জুগিয়ে মূল মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে যাবে আইসিপিএস সিস্টেম, একা হয়ে পড়বে ওরিয়ন।
২০ সেকেন্ডের জন্য আইসিপিএস সিস্টেমের আরএল-১০ ইঞ্জিন চালু করে গতিপথে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছে ওরিয়ন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার মাইলের বেশি উচ্চতায় ঘণ্টায় ১৪ হাজার মাইলের বেশি গতিতে ছুটছে ওরিয়ন।
চার সোলার প্যানেলের ‘ডানা’ মেলে ধরেছে ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফট। এরপর, গতিপথে পরিবর্তন এনে চাঁদের দিকে ঘুরে যাবে ওরিয়ন।
সফল উৎক্ষেপণ উদযাপন করতে নাসার পুরনো প্রথা মেনে নিজের টাই কেটে ফেলেছেন আর্টেমিস ওয়ান মিশনের লঞ্চ ডিরেক্টর চার্লি-ব্ল্যাকওয়েল থম্পসন। আর মহাকাশে ১৪ হাজার মাইলের বেশি গতিতে ছুটছে ওরিয়ন স্পেস ক্র্যাফট।
আট মিনিটের ফ্লাইট শেষে ৫ লাখ ৩১ হাজার ফুট উচ্চতায় আলাদা হয়েছে এসএলএস রকেটের কোর স্টেজ। ঘণ্টায় ১৭ হাজার মাইলের বেশি গতিতে ছুটছে আর্টেমিস ওয়ান।
অবশেষে উৎক্ষেপণ, চাঁদের পথে রওনা দিয়েছে আর্টেমিস ওয়ান। আলাদা হয়েছে বুস্টার রকেট।
শুরু হয়েছে কাউন্টডাউন। বাকি ১০ মিনিটেরও কম।
আর্টেমিস ওয়ান উৎক্ষেপণে আর কোনো বাধা নেই। উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকৌশলীরা। উৎক্ষেপণের অনুমতি দিয়েছেন লঞ্চ ডিরেক্টর।
১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত নভোচারী নেইল আর্মস্ট্রং এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। মহাশূন্যে মানব সভ্যতার চিহ্ন পৌঁছে দিয়ে মহাকাশ অভিযানের স্বর্ণযুগের সূচনা করে ওই মুহূর্ত।
৫০ বছর পর চাঁদকে আবারও নতুন করে ছুঁয়ে দেখতে চাইছে মানব জাতি। আর যারা অ্যাপোলো মিশনের সাক্ষী হতে পারেননি, আর্টেমিস মিশন তাদের প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
নতুন এই মিশন আগের তুলনায় একটু ভিন্ন হবে। নাসা আগামীতে প্রথম নারী ও প্রথম ভিন্ন বর্ণের কাউকে চাঁদে পাঠাবে। এর পেছনে কারণ একটাই- মহাকাশ সবার জন্যই উন্মুক্ত।
চাঁদের পিঠে অবতরণ দিয়ে নাসা নতুন এক যুগের সূচনা করতে চাইছে আসলে। আগামীতে মঙ্গলের বুকে মানুষকে নিয়ে যেতে চায় নাসা। আর ওই অভিযান নিশ্চিতভাবে মানবজাতির ইতিহাসে আরেক বিরাট মাইলফলক হবে।
আর্টেমিস ওয়ান উৎক্ষেপণ আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মিশনের পরিচালক।
পৃথিবীতে ফেরার সময়ে ওরিয়ন মহাকাশযানের গতি হবে ঘণ্টায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার। বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় মহাকাশযানটির বাইরের স্তরের তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে ৫ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট।
এর আগে অন্য কোনো মহাকাশযান এত দ্রুত গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেনি এবং কোনো মহাকাশযানের বাইরের স্তরের তাপমাত্রা ৫ হাজার ডিগ্রিতেও পৌঁছায়নি।
তাই নাসার বিজ্ঞানীদের কাছে আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে ওরিয়ন স্পেসক্র্যাফটের হিট শিল্ড। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হিট শিল্ড কার্যকর প্রমাণিত হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। ভবিষ্যৎ নভোচারীদের জীবনের নিরাপত্তাও নির্ভর করবে এর ওপর।
আর্টেমিস ওয়ানে মানুষ না থাকলেও এবারের চন্দ্রাভিযান ভরপুর বৈচিত্র্যময় যাত্রীতে। কমান্ডার মুনিকিন ক্যামপোস ছাড়াও স্নুপি ও শন দ্য শিপ নামে দুই বিশেষ নভোচারীও আছে ওরিয়নে।
ক্যাপসুলের যাত্রীদের কেবিনে তিন ম্যানিকিনের সঙ্গে কেবিনে শূন্য মাধ্যাকর্ষণ সূচক হয়ে ভেসে বেড়াতে কেমন লাগছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করবে দুই জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র।
আর তিন ম্যানিকিনের মধ্যে একটির নামকরণ করতে ভক্তদের ভোট নিয়েছিল নাসা। সেখান থেকেই নিজের নামটি পেয়েছেন কমান্ডার মুনিকিন ক্যামপোস।
রকেটের কোর স্টেজে তরল হাইড্রোজেন পাঠাচ্ছে নাসা। ঘণ্টা দুয়েক আগে লিক ধরা পড়েছিল তরল জ্বালানি সরবরাহের লাইনে। সশরীরে লঞ্চপ্যাডে গিয়ে নাট-বল্টু টাইট দিয়ে লিক সারাই করেছেন ‘রেড ক্রু’ কর্মীরা।
নতুন কোনো লিক চিহ্নিত হয়নি বলে জানিয়েছে নাসা। ‘ইন্টেরিম ক্রায়োজেনিক প্রোপালশন স্টেজ (আইসিপিএস)'-এ তরল হাইড্রোজেন ভরছেন নাসার প্রকৌশলীরা।
মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চপ্যাড ‘৩৯বি’-তে অপেক্ষা করছে আর্টেমিস ওয়ান।
বুধবার, বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪ মিনিট থেকে শুরু হবে নাসার নির্ধারিত দুই ঘণ্টার ‘লঞ্চ উইন্ডো’। সব ঠিকঠাক এগোলে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২টা ৪ মিনিটেই চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হবে আর্টেমিস ওয়ানের।
এর আগে পরপর তিনবারের চেষ্টাতেও উৎক্ষেপণ করতে পারেনি নাসা। প্রথম দুবারের উৎক্ষেপণ ভেস্তে গিয়েছিল কারিগারি জটিলতায়। শেষবার হারিকেন ইয়ানের ভয়ে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভেহিকল অ্যাসেমব্লি বিল্ডিং (ভিএবি)-তে ফেরত গিয়েছিল আর্টেমিস ওয়ান।