ক্রাউডট্যাঙ্গল ‘বন্ধ করার পরিকল্পনায়’ মেটা

ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টের তথ্য সংগ্রহ করতে গবেষকরা যে ‘ক্রাউডট্যাঙ্গল’ টুল ব্যবহার করেন, মূল কোম্পানি মেটা তা বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে খবর এসেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2022, 12:27 PM
Updated : 24 June 2022, 12:27 PM

ডেটা ট্র্যাকিং টুল হিসেবে গবেষকদের কাছে আলাদা কদর আছে ক্রাউডট্যাঙ্গলের। ভাইরাল হওয়া পোস্ট থেকে শুরু করে ভুয়া তথ্যের প্রচার অনুসরণ করতে টুলটি ব্যবহার করেন গবেষকরা।

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, টুলটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে মেটা; ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।

বিভিন্ন সময়ে মেটার আনুষ্ঠানিক বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করতে ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের উপর নির্ভর করেছেন গবেষকরা।

ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই লেখক ও কলামিস্ট কেভিন রুস বলেছিলেন, ফেইসবুকে ডানপন্থি খবরের সূত্রগুলোর পোস্টেই ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া বেশি থাকে। এ বিষয়ে ফেইসবুকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ছিল একেবারেই ভিন্ন।

গত বছরের জুলাই মাসে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কেভিন রুস বলেছিলেন, ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে মেটায় ‘অভ্যন্তরীণ ডেটা যুদ্ধ’ চলছে। ডেটা ট্র্যাকিং টুলটি থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে কোনগুলো জনসাধারণ বা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, সে প্রশ্নে মেটার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেই মতবিভেদ আছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

ক্রাউডট্যাঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ডন সিলভারম্যান এ ক্ষেত্রে ডেটা শেয়ারের পক্ষেই ছিলেন বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে মেটা ছাড়েন সিলভারম্যান।

সহজ করে বললে, ক্রাউডট্যাঙ্গল ফেইসবুকের মালিকানাধীন একটি ডেটা ট্র্যাকিং টুল, যার মাধ্যমে সংবাদকর্মী, গবেষক, তথ্য যাচাইকারীরা প্ল্যাটফর্মতে আলোচনার শীর্ষে থাকা বিষয়বস্তু নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখার সুযোগ পেতেন।

তবে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ডেটা সংগ্রহ করে না ক্রাউডট্যাঙ্গল। বরং পুরো প্ল্যাটফর্ম থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে প্রচারিত পোস্টগুলোর লাইক, শেয়ার, ভিউ, কমেন্ট এবং রিঅ্যাকশনের তথ্য সংগ্রহ করে।

কেভিন রুস ক্রাউডট্যাঙ্গল নিয়ে মেটার অভ্যন্তরীণ ‘ডেটা যুদ্ধের’ কথা বলার পর এক টুইটার থ্রেডে তার পর্যবেক্ষণ ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন ফেইসবুকের নিউজ ফিড বিভাগের প্রধান জন হিগম্যান।

ক্রাউডট্যাঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডানপন্থি খবরের সূত্রগুলোর শীর্ষ দশের একটি তালিকা বানিয়েছিলেন রুস। ওই তালিকা নিয়ে হিগম্যানের বক্তব্য ছিল, রুসের এনগেজমেন্ট ডেটা সঠিক হলেও ওই তালিকা ‘বেশিরভাগ মানুষ ফেইসবুকে কী বেশি দেখে, তার সঠিক উপস্থাপন করে না’।

তার বদলে কোন পোস্টগুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছায়, কেবল সেই ডেটার মাধ্যমে সঠিক পর্যালোচনা সম্ভব বলে দাবি করেছিলেন হিগম্যান। কিন্তু ওই ডেটা সহজে প্রকাশ করে না ফেইসবুক।

ফেইসবুক ক্রাউডট্যাঙ্গল কিনেছিল ২০১৬ সালে। ডেটা ট্র্যাকিং টুলটি কেনার সময়ে কোম্পানিটি বলেছিল, এই টুলটি ‘যে গল্পগুলো আসলেই গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো সবার সামনে নিয়ে আসতে, পাঠক ও দর্শকদের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করতে এবং আসল ইনফ্লুয়েন্সারদের চিহ্নিত করতে’ প্রকাশকদের সহযোগিতা করবে।

ফেইসবুকের বাইরে ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটার থেকেও ফেইসবুক পোস্টের প্রচার ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ক্রাউডট্যাঙ্গল। ভোটারদের অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘কমন কজ’ এই টুলটি ব্যবহার করেই ‘ভুয়া তথ্য প্রচার করছে’- এমন পোস্টগুলো তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিল বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ।

সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ফেব্রুয়ারি মাসেই ক্রাউডট্যাঙ্গল বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করে মেটা। তবে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ‘ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট’ আইনে বিপাকে পড়ার শঙ্কায় মাঝপথে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল কোম্পানিটি। এখন ক্রাউডট্যাঙ্গল বন্ধ করার প্রক্রিয়া আবারও পুরোদমে শুরু হয়েছে।

তবে টুলটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত চালু থাকবে বলে ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন মেটার একজন মুখপাত্র। পাশাপাশি, ফেইসবুক গবেষকদের ‘আরও মূল্যবান’ টুল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।