রাষ্ট্রসমর্থিত হ্যাকার আর সাইবার অপরাধীদের মধ্যে দূরত্ব কমছে

‘হ্যাকার’ শব্দটি একসময় সাইবার অপরাধীর সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। রাষ্ট্রসমর্থিত হ্যাকার আর সাইবার অপরাধীদের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করা ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2022, 12:25 PM
Updated : 2 June 2022, 12:25 PM

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া, ইরান এবং চীনের মতো দেশগুলোর রাষ্ট্রসমর্থিত হ্যাকারদের দৌরাত্ব বেড়েছে। দেশের সরকারের পক্ষ নিয়ে সাইবার নজরদারি থেকে শুরু করে তথ্য চুরির মতো বিভিন্ন কাজে অংশ নিচ্ছেন এই হ্যাকাররা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, ওই একই কাজগুলো রাষ্ট্রের সমর্থনের অনুপস্থিতিতে বেআইনি অপরাধ কর্মকাণ্ড হিসেবেই স্বীকৃত।

এমন পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের জন্য সাইবার হামলা মোকাবেলার কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠছে বলে বুধবারে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্যাকারদের র‌্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্ষেত্রবিশেষে স্পষ্টভাবেই ক্রেমলিনকে সমর্থন জানিয়েছে হ্যাকাররা। এক্ষেত্রে রাশিয়ার হ্যাকাররা ডিজিটাল কালোবাজার থেকে কেনা বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আড়ালের চেষ্টা করেছেন বলে উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে।

তাৎক্ষণিকভাবে সাইবার হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করে মূল হোতাকে চিহ্নিত করা এমনিতেই কঠিন কাজ। এমন অবস্থায় দেশের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আর পরিচয় লুকানোর নানা টুলের ব্যবহার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ ওলসেন।

“কিছু ক্ষেত্রে এই দলগুলোকে গেয়েন্দা সংস্থাগুলো উৎসাহিত করছে। তারা কেবল স্বীকৃতিই পাচ্ছে না, তারা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সরাসরি সমর্থন পাচ্ছে,” ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের আয়োজিত সাইবারসিকিউরিটি ফোরামে এই মন্তব্য করেছেন ওলসেন।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হ্যাকারদের দলগুলোকে ভেঙে দিতে তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কিন্তু সাইবার অপরাধীদের সঙ্গে আর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সংমিশ্রণ সে প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এক্ষেত্রে সাইবার হামলা মোকাবেলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতিয়ার অপরিবর্তিত রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ওলসেন। “এই অনুপ্রবেশগুলো মোকাবেলায় সরকারের আইনি অস্ত্র একই থেকে যাচ্ছে; আক্রমণকারী কোনো রাষ্ট্র সমর্থিত হ্যাকার বা সাইবার অপরাধী- যাই হোক না কেন।”

বুধবার দিনের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেন, এই পার্থক্যগুলো বিশ্লেষণ করাই তার সংস্থার সাইবার নিরাপত্তা প্রচেষ্টার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“একজন অপরাধী কখন তার আশ্রদাতার এজেন্টে পরিণত হয়?” প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

“এক্ষেত্রে কি আর্থিক লেনদেন হতেই হবে, নাকি যখন তারা জনসমক্ষে বিদেশি সরকারকে সমর্থন জানায়?”

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক হামলার শুরু হওয়ার পর খোলাখুলি ভাবেই ক্রেমলিনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল বহুল আলোচিত হ্যাকারদের দল ‘কন্টি’। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা হ্যাকারদের দলটির সঙ্গে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত করেছিলেন আগেই।

ক্রেমলিনকে সমর্থন জানানোর পর থেকেই ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে হ্যাকারদের দলটি। ফাঁস হয়ে গেছে দলটির সদস্যদের অনলাইন আলাপচারিতার স্ক্রিনশট। হ্যাকারদের দলটির মূল সদস্যদের পরিচয় আর অবস্থান বিষয়ে তথ্যের জন্য দেড় কোটি ডলারের পুরষ্কারও ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্চ মাসের এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছিল, শুধু গত বছরেই হাসপাতাল, স্থানীয় সরকার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর র‌্যানসমওয়্যার হামলা চালিয়ে ২০ কোটি ডলার মুক্তিপণ নিয়েছিল কন্টি।