হ্যাকিংয়ে অভিযুক্ত রাশিয়ার চার সরকারী কর্মী

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার স্রোতের মধ্যেই দেশটির চারজন সরকারী কর্মীর বিরুদ্ধে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে অভিযোগে সায় দিচ্ছে পশ্চিমা অনেক দেশই।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 01:47 PM
Updated : 25 March 2022, 01:47 PM

‘যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগটি এনেছে বৃহস্পতিবার। এতে রাশিয়ার চার সরকারী কর্মীর বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে শক্তি খাত এবং ১৩৫ দেশের কম্পিউটার লক্ষ্য করে হ্যাকিং অভিযান পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্তদের একজন এভজেনি ভিক্তোরোভিচ গ্ল্যাদকিখ। তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা গুরুত্বপুর্ণ অবকাঠামোয় ক্ষতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে ওয়াশিংটন ডিসির ‘ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে’। ওই আক্রমণের ফলে, জরুরীভিত্তিতে ওই অবকাঠামো বন্ধ করে দিতে হয়েছিল।

অভিযুক্ত গ্ল্যাদকিখ মস্কোর ‘সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট অফ কেমিস্ট্রি অ্যান্ড মেকানিক্স’-এ তার চাকরীর অংশ হিসেবে হ্যাকিং কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছেন। যেটিতে ‘ট্রিটন’ নামের একটি বিপজ্জনক ম্যালওয়্যার রয়েছে। একে অনেক সময় ‘ট্রিসিস’ বা ‘হ্যাটম্যান’ও বলা হয়ে থাকে।

অভিযুক্তরা গত বছর জুন মাস থেকে মার্কিন নজরদারিতে ছিল। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি, কানসাস অঙ্গরাজ্যে আরেকটি অভিযোগ বলছে, রাশিয়ার ‘ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস’ (এফএসবি) বৈশ্বিকভাবে শক্তি সম্পর্কিত শত শত কম্পিউটার লক্ষ্য করে হ্যাকিং অভিযান পরিচালনা করেছে। এ অভিযোগটিও গত বছর দায়ের করা বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

এফএসবি হ্যাকারদের ম্যালওয়্যারের উপস্থিতি ১৭ হাজারেরও বেশি ডিভাইসে পাওয়া গিয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে কানসাসে দায়ের করা অভিযোগটিতে।

২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হ্যাকিং কার্যক্রমগুলো সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি রয়েছে অভিযোগে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার স্রোতের বিপরীতে রাশিয়ার নতুন করে সাইবার হামলার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় কর্মীরা এ অভিযোগগুলো প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

“জরুরী প্রয়োজনে মার্কিন ব্যবসাগুলোর প্রতিরক্ষায় আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।”-- বলেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা ও. মোনাকো।

“যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য রাশিয়া সমর্থিত হ্যাকাররা চরম হুমকিস্বরূপ।”

রাশিয়ার হ্যাকিং নিয়ে মূল সমস্যাটি হচ্ছে, অতীতে দেশটি খুব দুর্বলভাবে ম্যালওয়্যার নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে, কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তৈরি ম্যালওয়্যারও বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরা।

উদাহরণ হিসেবে, ২০১৭ সালে ‘নটপেটিয়া’ ইউক্রেইনের কম্পিউটারকে লক্ষ্য করলেও, এতে ডেনমার্ক, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রও আক্রান্ত হয়।

এক যৌথ বিবৃতিতে হ্যাকিংয়ের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেছে যুক্তরাজ্যের কর্মীরা ।

“রাশিয়ার জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করে আক্রমণ আগে থেকেই নির্ধারিত এবং বিপজ্জনক।”--বলেছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব লিজ ট্রাস।

“যারা মানুষ, ব্যবসা এবং অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করছে তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমরা ক্রেমলিনকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি। আমরা এটি সহ্য করব না।”

ওয়াশিংটনে রাশিয়ান দূতাবাস বৃহস্পতিবার আনা অভিযোগের তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দেয়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নিউইয়র্ক টাইমস।

রাশিয়ার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে সমর্পণের কোনো নজির নেই বলে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযুক্ত চারজনের বিচার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।