ল্যাপসাসকাণ্ডের ‘মাস্টারমাইন্ড’ অটিস্টিক কিশোর

‎অক্সফোর্ডের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম গ্যাং ল্যাপসাসের অন্যতম নেতা বলে অভিযোগ উঠেছে।‎

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2022, 11:00 AM
Updated : 25 March 2022, 11:03 AM

হ্যাকিং থেকে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার কামাইয়ের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করেছেন সাইবার নিরাপত্তা গবেষক এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যাকার দল।

‎সিটি অফ লন্ডন পুলিশ এই গ্যাংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাত কিশোরকে গ্রেপ্তারের কথা বললেও মাস্টামাইন্ড কিশোর এদের কেউ কি না সেটি বলতে রাজী হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

আর, কিশোরটির বাবা বিবিসিকে বলেন, তার উদ্বিগ্ন পরিবার ওই কিশোরকে কম্পিউটার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।‎

অনলাইনে “হোয়াইট” বা “ব্রিচবেস” নামধারী এই অটিস্টিক কিশোরকেই মনে করা হচ্ছে “দক্ষিণ আমেরিকাভিত্তিক” ল্যাপসাস হ্যাকারদের পালের গোদা।

তুলনামূলকভাবে নতুন এই দলটি মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং চালানোর পর গর্ব করে এ নিয়ে অনলাইনে পোস্ট করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। অল্পদিনেই ল্যাপসাস হয়ে উঠেছে ভয়ংকর হ্যাকার সাইবার-ক্রাইম গ্যাংগুলির মধ্যে একটি।‎

অক্সফোর্ডের একটি বিশেষায়িত স্কুলের শিক্ষার্থী ওই কিশোরের নাম ‎আইনি কারণে প্রকাশ করেনি বিবিসি।

‎সিটি অব লন্ডন পুলিশ একটি হ্যাকিং গ্রুপের তদন্তে নেমে ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সী সাতজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে।

“তদন্ত সাপেক্ষে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে, আমাদের তদন্ত এখনও চলছে।”‎

কিশোরটির বাবা বিবিসিকে বলেন, “আমি কিছুদিন আগেও এ ধরনের কিছুই জানতাম না। সে কখনও হ্যাকিং সম্পর্কে কথা বলেনি। তবে ও কম্পিউটারে খুব ভালো এবং কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় কাজ করে।”

“আমি সব সময় ভেবেছি, সে হয়তো গেইম খেলছে।”

‎বিবিসিও ওই কিশোরের মা’র সঙ্গেও কথা বলেছে, তবে, তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।‎

খোঁজ মিলল যেভাবে

নিজেদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে ‘হোয়াইট’কে তার আগের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় বা বের করে দেওয়া হয়। এরপর আগের দলের সদস্যরা তার নাম-পরিচয় এবং কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেয় - যেটি হ্যাকিং জগতে ডক্স করা নামে পরিচিত।

‎তারা তার হ্যাকিং ক্যারিয়ারের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনীও পোস্ট করেছে।

“কয়েক বছরের কর্মকাণ্ডে তার নেট অর্জন প্রায় তিনশ বিটকয়েন, (যার মূল্য প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ ডলার)। এখন 'ল্যাপসাস' নামে পরিচিত একটি উচ্চাভিলাসী র‌্যানসমওয়্যার দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং চালিয়েছে।”

এই বর্ণনার সঙ্গে ছিল তার প্রকৃত নাম, ঠিকানা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি।

‎ব্লুমবার্গের প্রথম প্রতিবেদন অনুসারে,‎‎ সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা প্রায় এক বছর ধরে "হোয়াইট"কে অনুসরণ করছেন এবং ল্যাপসাস এবং অন্যান্য হ্যাকিংয়ের ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র বের করেছেন।‎

“আমরা গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তার নাম সম্পর্কে জানি এবং ডক্সিংয়ের আগেই তাকে শনাক্ত করেছি।" বলেন সাইবার নিরাপত্তা তদন্ত সংস্থা ইউনিট ২২১বি এর প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা অ্যালিসন নিক্সন।‎

সাইবার-নিরাপত্ত কোম্পানি ‎"ইউনিট ২২১বি পালো অল্টোর সঙ্গে কাজ করে হোয়াইটকে শনাক্ত করে। এরপর গোটা ২০২১ সাল জুড়েই তার কর্মকাণ্ড নজরে রাখছিল এবং পর্যায়ক্রমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তার সর্বশেষ অপরাধ সম্পর্কে জানিয়ে রাখছিল।‎

‎মিজ নিক্সন বলেছেন, গবেষকরা ওই কিশোরের অনলাইন অ্যাকাউন্টের প্রায় অবিচ্ছিন্ন প্রবাহের মাধ্যমে সংযুক্ত ক্রিয়াকলাপের একটি ট্রেইলের মাধ্যমে তাকে অনুসরণ করেছিলেন।‎ অভিযুক্ত ‍কিশোর তার ফেলে যাওয়া চিহ্ন পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেনি।

অল্পসময়ে কুখ্যাতি

‎ল্যাপসাস সাইবার-চাঁদাবাজির দলটি হাই-প্রোফাইল টার্গেট এবং মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। এরই মধ্যে চ্যানেলটির গ্রাহক সংখ্যা ৪৭ হাজার হয়েছে।

বুধবার চ্যানেলটিতে সর্বশেষ পোস্ট করা বার্তায় উল্লেখ ছিল- “আমাদের কয়েকজন সদস্যের ৩০ মার্চ ২০২২ সাল পর্যন্ত ছুটি রয়েছে। আমরা হয়তো কিছু সময়ের জন্য চুপ করে থাকবো। বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ - আমরা যতো দ্রুত সম্ভব জিনিসপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করব।‎”

সাইবার-নিরাপত্তা সংস্থা ডিজিটাল শ্যাডোস-এর ‎ক্রিস মরগান বলেছেন, “গ্রুপের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়, তবে, ল্যাপসাস এর প্রাথমিক ক্রিয়াকলা পব্রাজিলের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে পরিচালিত হওয়ায় কিছু গবেষকের অনুমান ছিল গ্রুপটি সম্ভবত দক্ষিণ আমেরিকা ভিত্তিক।”