চিপ শিল্পে রাশিয়ার আক্রমণের আশঙ্কা হোয়াইট হাউজের

নিজ দেশের চিপ উৎপাদন শিল্পকে সরবরাহ ব্যবস্থার বিকল্প পথ খুঁজে রাখতে বলেছে হোয়াইট হাউজ। গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের সরবরাহ ব্যবস্থায় রাশিয়ার আক্রমণের আশঙ্কা করছে মার্কিন সরকার।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2022, 12:44 PM
Updated : 12 Feb 2022, 12:45 PM

রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক মনোভাবের সম্ভাব্য প্রভাবের আশঙ্কা আলোচনায় এসেছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘টেকসেট’-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, নিওন ও প্যালাডিয়ামসহ অন্যান্য কাঁচামালের জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেইনের বিভিন্ন সূত্রের উপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

টেকসেট-এর গবেষণা বলছে, সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাণ উপযোগী নিওনের ৯০ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে ইউক্রেইন। উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত প্যালাডিয়ামের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসে রাশিয়া থেকে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, হোয়াইট হাউজের নিরাপত্তা কাউন্সিল প্রধান পিটার হারেল এবং তার কর্মীরা চিপ উৎপাদন শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যোগাযোগ রাখছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেইনের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে বিকল্প খোঁজার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

চিপ নির্মাতাদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউজ বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। তবে, উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেইন আক্রমণ করলে সেটি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে বাইডেন প্রশাসন।

“প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যে কাজ চলছে, তার একটি অংশ এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে যে রাশিয়া সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে তার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রস্তুত থাকে।”

আন্তর্জাতিক চিপ উৎপাদক এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ‘এসইএমআই’ ভাইস প্রেসিডেন্টে জো পাসেত্তি সম্প্রতি এক ইমেইল পাঠিয়ে সংগঠনের কোনো সদস্য রাশিয়া-ইউক্রেইন বিবাদের ফলে কাঁচামাল নিয়ে বিপাকে পড়ার আশঙ্কায় আছেন কি না জানতে চেয়েছেন। ওই ইমেইল দেখার সুযোগ হয়েছে রয়টার্সের।

“আজকের কলে যে আলোচনা হয়েছে, দয়া করে অ্যাটাচমেন্ট দেখুন… রাশিয়া/ইউক্রেইনে উৎপাদিত বিভিন্ন সেমিকন্ডাক্টর কাাঁচামাল প্রসঙ্গে, আপনার প্রতিষ্ঠান ওই রশদের সরবরাহে বাধার আশঙ্কা করলে অবশ্যই জানাবেন আমাকে”-- ইমেইলে লিখেছেন পাসেত্তি। ইমেইলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া নথিতে ছিল টেকসেটের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ।

আলোচিত কাঁচামালগুলোর মধ্যে নিওন উৎপাদিত হয় রাশিয়ার স্টিল উৎপাদনের উপজাত বা ‘বাইপ্রোডাক্ট’ হিসেবে। এরপর এটি শোধন করা হয় ইউক্রেইনে। অন্যদিকে, সেন্সর এবং মেমোরি চিপ নির্মাণে ব্যবহৃত হয় প্যালাডিয়াম।

ইউক্রেইনে হামলা চালালে রাশিয়ার উপর রপ্তানী নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। ইউক্রেইন সীমান্তে এক লাখ সৈন্যের সমাবেশ ঘটালেও দেশটির উপর আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া সরকার।

এমন পরিস্থিতিতে কাঁচামালের বিকল্প সূত্র খুঁজছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। নাম গোপন রাখার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেন, “ইউক্রেইনে যুদ্ধ লাগলেও তাতে সরবরাহ ব্যবস্থায় আটকে যাবে না। বরং এতে দাম বেড়ে যাবে। বাজার ছোট হয়ে আসবে। তবে, এতে সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাদের উৎপাদন থেমে যাবে না।”

চিপনির্মাতা ইনটেলও নিওন সরবরাহ ব্যবস্থার উপর রাশিয়া-ইউক্রেইন দ্বন্দ্বের কোনো বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র উইলিয়াম মস।

তারপরও পুরো বিষয়টি শঙ্কিত হওয়ার মতোই গুরুতর বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স। টেকসেটের ধারণা, আগামী চার বছরে সকল কাঁচামালের চাহিদা বাড়বে ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর নিওনের দাম বেড়েছিল ছয়শ শতাংশ।