ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নাক গলিয়ে ফাঁসছেন কিম কারদাশিয়ান

বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া ‘সুপরামর্শ’ ভক্তদের জানিয়ে ফেঁসে গেছেন কিম কারদাশিয়ান; ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে এই মার্কিন রিয়ালিটি শো তারকার বিরুদ্ধে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Jan 2022, 11:27 AM
Updated : 13 Jan 2022, 11:27 AM

শুধু কারদাশিয়ান নন, ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রতারণার মামলায় আসামিদের মধ্যে আরো আছেন সাবেক বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার, বাস্কেটবল খেলোয়ার পল পিয়ার্স।

ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে দায়ের করা ওই ক্লাস অ্যাকশন মামলার বাদীপক্ষের অভিযোগ ‘ইথেরিয়ামম্যাক্স’ নামের একটি ডিজিটাল মুদ্রার নির্মাতাদের ‘পাম্প অ্যান্ড ডাম্প’ প্রতারণা কৌশলের অংশ ছিলেন ওই তিন পশ্চিমা তারকা ব্যক্তিত্ব। নামের মিল থাকলেও হালের আলোচিত ‘ইথেরিয়াম’ ক্রিপ্টোকারেন্সির সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা বা আইনি সম্পর্ক নেই ইথেরিয়ামম্যাক্সের; এর নির্মাতারাও আছেন আসামির তালিকায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এই খাতে প্রতারণার ঘটনা। বিশেষ করে, প্রতারকদের ‘পাম্প অ্যান্ড ডাম্প’ কৌশল অবলম্বনের খবর শোনা যাচ্ছে হরহামেশাই। এই কৌশলে নতুন কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে বাজারে ওই ডিজিটাল মুদ্রার দাম বাড়ায় প্রতারক। তারপর, এই খাত নিয়ে অজ্ঞ কোনো বিনিয়োগকারীকে বোকা বানিয়ে আকাশচুম্বী দামে তার কাছে বেচে দেওয়া ওই ডিজিটাল মুদ্রা। সর্বোচ্চ দামে ভুয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি বেচে দিয়ে মুনাফা উঠিয়ে নেয় প্রতারক, মাঝখান থেকে অর্থ হারান সর্বশেষ বিনিয়োগকারী।

মামলার নথিতে বাদিপক্ষ অভিযোগ করেছেন, ইথেরিয়ামম্যাক্সের “নির্বাহীরা বেশ কয়েকজন সেলিব্রেটির সহযোগিতা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইথেরিয়ামম্যাক্স সম্পর্কে ভুয়া অথবা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের। 

মামলার আসামি সেলিব্রেটিরা “বিনিয়োগকারীদের বড় মুনাফা” কামাইয়ের সক্ষমতা নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন যার ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সিটির দাম কৃত্রিমভাবে বেড়ে গিয়েছিল এবং “ভুক্তভোগীরা বেশি দামে কিনে বিনিয়োগ হারিয়েছেন”। পরবর্তীতে নির্বাহীরাও “বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজস্ব ইম্যাক্স টোকেন বেশি দামে বেচে মুনাফা কামিয়েছেন।” 

“সোজা কথায় ইথেরিয়ামম্যাক্সের সম্পূর্ণ ব্যবসা কৌশলই বাজারজাতকরণ এবং প্রচারণা কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল, অনেক সময়েই যা এসেছে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ সেলিব্রেটিদের কাছ থেকে এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের বোকা বানিয়ে ভুয়া আর্থিক লাভের সুযোগে বিশ্বাস করানো হয়েছে।”-- বলা হয়েছে মামলার অভিযোগে। 

সাবেক বাস্কেটবল তারকা পল পিয়ার্স ২০২১ সালের মে মাসে টুইটারে ইথেরিয়ামম্যাক্স নিয়ে বেশ জোরেশোরেই প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। ওই একই সময়ে অবসরে থাকা বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদারের সঙ্গে  ইউটিউবার লোগান পলের বক্সিং ম্যাচটিকেও প্রচারণার কাজে ব্যবহার করেছিল ইথেরিয়ামম্যাক্স।

এক ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্মেলনে ইথেরিয়ামম্যাক্স নিয়ে প্রচারণা চালানোর অভিযোগও আছে মেওয়েদারের বিরুদ্ধে। তবে এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রভাব সম্ভবত কারদাশিয়ানই ফেলেছিলেন; ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়েছিলেন, “এটা কোনো আর্থিক পরামর্শ নয় কিন্তু বন্ধুরা ইথেরিয়ামম্যাক্স নিয়ে আমাকে যা বলছে, তাই শেয়ার করছি।”

কারদাশিয়ান ও সেলিব্রেটিদের প্রচারণার মুখে ইথেরিয়ামম্যাক্সের দাম বেড়ে যায় এক হাজার ৩০০ শতাংশ। ওই সুযোগে মামলার আসামিরা বিপুল পরিমাণ ইথেরিয়ামম্যাক্স টোকেন বেচে ‘ব্যাপক মুনাফা উঠিয়ে নিয়েছেন” বলে আদালতে অভিযোগ করেছে বাদীপক্ষ। বেশি দামে টোকেন বেচে আসামিরা ব্যাপক মুনাফা কামালেও ফেঁসে গেছেন ক্রেতারা। কারদাশিয়ানের পোস্টের এক মাসের মাথায় ইথেরিয়ামম্যাক্সের ইতিহাসে সর্বনিম্ন দামে নেমে আসে ডিজিটাল মুদ্রাটি।

মামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইথেরিয়ামম্যাক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্মিতা স্টিভ জেন্টাইল। “সাম্প্রতিক অভিযোগগুলোর বিভ্রান্তিকর বর্ণনা ইথেরিয়ামম্যাক্স প্রকল্প নিয়ে ভুয়া তথ্যে ভরা”-- মন্তব্য করেছেন তিনি।

“আমরা অভিযোগগুলো অস্বীকার করছি এবং সত্য সামনে আসার অপেক্ষা করছি।”

কারদাশিয়ান, পিয়ার্স এবং মেওয়েদারের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য জানতে পারেনি বিবিসি।