ক্রিপ্টোকারেন্সি: ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি নয়, সরকারি মুদ্রা চায় ভারত

ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ডিজিটাল মুদ্রা প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে সরছে না ভারত। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে নতুন আইনের পরিকল্পনা করেছে দেশটির সরকার। এর মাধ্যমে ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের অধীনে রাষ্ট্রীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলন করতে চায় ভারত।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2021, 09:48 AM
Updated : 25 Nov 2021, 09:48 AM

বিবিসি জানিয়েছে, ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশ্নে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসবে-- এমন প্রত্যাশা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ভারত সরকারের সাম্প্রতিক এক বুলেটিন থেকে আভাস মিলছে, ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ডিজিটাল মুদ্রার উপর যে নিষেধাজ্ঞা আছে, তাই প্রস্তাবিত ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অফিশিয়াল ডিজিটাল কারেন্সি বিলে’ যোগ হবে।

বিটকয়েন বা ইথারের মতো ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এর মূল প্রযুক্তি ব্লকচেইনের ব্যবহার নিয়ে প্রচারণাকে সমর্থন করবে ভারত সরকার। প্রস্তাবিত আইনের ভবিষ্যত নিয়ে ঘোষণা আসার পর ভারতের স্থানীয় বাজারে দাম পড়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির।

বিবিসি জানিয়েছে, আসন্ন শীতেই কার্যকর হতে পারে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যান্ড রেগুলেশন অফ অফিশিয়াল ডিজিটাল কারেন্সি বিল’। প্রস্তাবিত আইনটির মূল উদ্দেশ্য “রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ডিজিটাল মুদ্রার প্রচলনের জন্য একটি সুবিধাজনক অবকাঠামো নির্মাণ।”

বিবিসি জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে প্রস্তাবিত আইনটির যে খসড়া জমা দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে মিল রয়েছে ভারত সরকারের বর্তমান পরিকল্পনার, একযোগে বাজারের সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনাতেই অনড় আছে ভারত।

ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশ্নে ভারত সরকার কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসতে পারে এমন প্রত্যাশা বেড়েছিল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে; সংশ্লিষ্টরা আশা করছিলেন লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা না করে ডিজিটাল মুত্রাগুলোকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করবে দেশটির সরকার।

তবে প্রস্তাবিত আইনটির বর্তমান খসড়া জনসাধারণের জন্য এখনও উন্মুক্ত করেনি ভারত সরকার, তাই আগের খসড়ার সঙ্গে বর্তমান খসড়ার মূল পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

ভারত সরকার কঠোর অবস্থানে অনড় থাকার খবর প্রকাশের পর ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনেদেনের ভারতীয় সাইটগুলোতে দাম পড়েছে বিটকয়েন, শিবা ইনু এবং ডোজকয়েনের। 

তবে ক্রিপ্টোকারিন্সর বৈশ্বিক বাজারের উপর এর তেমন কোনো বড় প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এই প্রসঙ্গে ‘ক্রিপ্টো ট্রেডার’ লেখক গ্লেন গুডম্যান বলেন, “এমনকি চীন ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করার পরেও - এবং সেটা একটা বড় বিষয় ছিল - ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার পুরোপুরি ধসে যায়নি।” 

তবে ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রস্তাবিত আইনের অধীনে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন চালু থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যদি ক্রেতা নির্দিষ্ট শর্ত মেনে পরিচালিত বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনেন।” 

প্রস্তাবিত আইনে মূলত কে বা কারা ক্রিপ্টোকারেন্সি সৃষ্টি করতে পারবেন, তার উপর বিধি-নিষেধ আরোপ আসতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

ডিজিটাল মুদ্রাবিষয়ক সংবাদের সাইট কয়েনডেস্ক বলছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশ্নে রক্ষণশীল আচরণ করছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। ২০২০ সালের মার্চ মাসে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের উপর দুই বছর ধরে চলমান আরবিআইয়ের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

সম্প্রতি “সামষ্টিক অর্থনীতি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার দৃষ্ঠিকোণ থেকে” ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশ্নে আরবিআইয়ে “গুরুতর আশঙ্কা রয়েছে” বলে জানান ব্যাংকটির গভর্নর শাক্তিকান্তা দাস। ক্রিপ্টোকারেন্সি ছাড়াও ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

তবে চীনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা এবং এল সালভাদরের নতুন বিটকয়েন শহর প্রতিষ্ঠার ঘোষণার প্রতি দৃষ্ঠি আকর্ষণ করে গুডম্যান বলেন, “বিভিন্ন দেশের সরকার ভিন্নভাবে বিষয়টি বিবেচনা করছে; হুমকি হিসেবে, সুযোগ হিসেবে অথবা দুটির মাঝে নতুন কিছু হিসাবে।”

চীন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি বাদে বাকি সব মুছে দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন গুডম্যান। “তারা ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর আধিপত্য করতে চায়, এবং আমার মনে হচ্ছে ভারত সরকারও একই রকমের কিছু করতে চায়।”

“তারা মনে করছে, যদি চীন এটা করতে পারে তাহলে আমরাও পারবো।”