যে কারণে ছয় ঘণ্টা অফলাইনে ছিল ফেইসবুক

সম্প্রতি বড় মাপের বিভ্রাটের কবলে পড়েছিল ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার। ব্যবহারকারীরা অনেক চেষ্টা করেও প্রবেশ করতে পারেননি সেবাগুলোতে। প্রায় ছয় ঘণ্টা ফেইসবুক মালিকানাধীন কোনো সেবা ছাড়াই চলতে হয়েছে গোটা বিশ্বের বহু ব্যবহারকারীকে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2021, 12:56 PM
Updated : 5 Oct 2021, 12:56 PM

এর মাশুল গুণতে হয়েছে ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গকেও। সাম্প্রতিক এ বিভ্রাট এবং তথ্য ফাঁসের ঘটনা যৌথভাবে প্রভাব ফেলেছে ফেইসবুকের শেয়ার দরে। ফলাফল হিসেবে জাকারবার্গের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে হাপিস হয়ে গেছে ছয়শ’ কোটি ডলার। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকা থেকেও কয়েক ঘর নিচে নেমে এসেছেন তিনি। এক সময়ে তিনের ঘরে থাকা জাকারবার্গের অবস্থান এখন ছয়ে।

বিভ্রাট এতোটাই প্রকট ছিলো যে সাধারণ মানুষ তো বটেই, ফেইসবুক কর্মী ও ঠিকাদাররাও নিজ নিজ ‘ওয়ার্ক অ্যাকাউন্টে’ লগ-ইন করতে পারেননি। সে কারণেই হয়তো সামাজিক মাধ্যম জায়ান্টটির এ বিভ্রাটকে ২০০৮ সালের পরে “সবচেয়ে বাজে সেবা বিভ্রাট” আখ্যা দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।

কিন্তু ঠিক কী কারণে বিভ্রাটের কবলে পড়েছিল ফেইসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম? কেনই বা এতোটা সময় লেগেছে সেবা ফিরিয়ে আনতে? 

যা জানা গেছে-

ফেইসবুক এক বিবৃতিতে বলেছে, নিজেদের ডেটা সেন্টারের মধ্যে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক সমন্বয়কারী ‘ব্যাকবোন রাউটারে’র কনফিগারেশন পরিবর্তনের কারণেই বিভ্রাটের কবলে পড়তে হয়েছিল তাদের। থমকে গিয়েছিল সব সেবা। শুধু ফেইসবুকই নয়, তাদের সবকিছুই গায়েব হয়ে গিয়েছিল অনলাইন থেকে।

অন্যদিকে, এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে ক্লাউডফ্লেয়ার। তারা বলছে, গোটা ঘটনার সঙ্গে দুটি বিষয় জড়িত। এর একটি ‘ডোমেইন নেইম সিস্টেম’ (ডিএনএস), আর অন্যটি ‘বর্ডার গেটওয়ে প্রটোকল’ (বিজিপি)।

ইন্টারনেটের পুরোটা জুড়েই রয়েছে অসংখ্য সংযুক্ত নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করে বিজিপি। সাধারণত বিজিপি-ই বলে দেয় নেটওয়ার্ককে কোথায় যেতে হবে। অন্যদিকে, ডিএনএস হল প্রত্যেক ওয়েবসাইটের অবস্থান সম্পর্কিত ‘অ্যাড্রেস সিস্টেম’ -- আইপি অ্যাড্রেস।

এক কথায় বলা যায়, বিজিপি হলো ‘রোডম্যাপ’ যা ‘আইপি অ্যাড্রেস’ পর্যন্ত যাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী রাস্তাটি খুঁজে বের করে।

সোমবার একাধিক আপডেটের মাধ্যমে ফেইসবুক বিজিপি-কে জানায়, তাদের সেবা পর্যন্ত যাওয়ার যে পথগুলো ছিল, তা আর নেই। ফলে যারা ফেইসবুকে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন, তারা আদতে পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

এতে শুধু ফেইসবুক নয়, প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব সেবা (হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার) আক্রান্ত হয়েছিল। এমনকি ফেইসবুকের অভ্যন্তরীন সিস্টেমও বিভ্রাটের হাত থেকে রেহাই পায়নি। অফিস থেকে ছিটকে পড়েছিলেন ফেইসবুক কর্মীরা, ব্যবহার করতে পারেননি নিজেদের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মও। 

সমাধানে দেরি হয়েছে যে কারণে-

ফেইসবুকের অভ্যন্তরীন সিস্টেমও বিভ্রাটের কবলে পড়ায় কর্মীদের জন্য সমস্যা শনাক্ত ও সমাধান করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সিকিউরিটি পাস সিস্টেম বিভ্রাটের কবলে পড়ায় যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম, ওয়ার্কপ্লেস এবং অফিসে প্রবেশ করতে পারছিলেন না খোদ প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরাই।

এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের যুক্তরাজ্য সংস্করণের প্রযুক্তি সম্পাদক অ্যালেক্স হার্ন টুইটারে লিখেছেন, “ফেইসবুক সবই চালায় ফেইসবুকের মাধ্যমে।” ফলে সাধারণত ফেইসবুক যেভাবে সমস্যার সমাধান করে, সে রাস্তা কাজ করছিল না।

সমাধান হলো যেভাবে-

মূল সমস্যা কী হয়েছিল এবং কীভাবে তা ঠিক করা হয়েছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তেমন কিছু জানায়নি ফেইসবুক।

তবে, একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজ সার্ভারে কারিগরি টিম পাঠিয়েছিল সামাজিক মাধ্যম জায়ান্টটি, এবং যেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেখানে ম্যানুয়ালি সার্ভার রিসেট করে সমস্যার সমাধান করেছে।

পরিশেষে-

গার্ডিয়ান বলেছে, সাম্প্রতিক বিভ্রাটটি সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু এই বিভ্রাট সম্পূর্ণরূপে এড়ানোর কোনো উপায়ও নেই।

পত্রিকাটি আরও বলেছে, একক কোনো পয়েন্টের ব্যর্থতায় যে অসংখ্য অনলাইন সেবা নির্ভরশীল মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়, সে বিষয়টি ফেইসবুক বিভ্রাট, ২০২০ সালের ক্লাউডফ্লেয়ার বিভ্রাট এবং জুনের ফাস্টলি বিভ্রাট থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি, ‘অনলাইন সেলস ওয়েবসাইট’সহ নানাবিধ সেবায় লগ ইন করতেও ফেইসবুক ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অনেক দেশে আবার যোগাযোগের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।

ফলে ফেইসবুকের সাম্প্রতিক এ বিভ্রাট আদতে প্রভাব ফেলেছে শত শত কোটি মানুষের জীবনে।

অনেকে আবার বিভ্রাটের সময়ে ব্যক্তিগত ডেটার সুরক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গার্ডিয়ান এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছে, ফেইসবুক সচল থাকার সময়ে ব্যক্তিগত ডেটা যতোটা ঝুঁকির মুখে থাকে, বিভ্রাটকালীনও ততোটাই ছিলো।

সহজ করে বললে, বিভ্রাটের কারণে ব্যক্তিগত ডেটা বাড়তি কোনো ঝুঁকির মুখে পড়েনি।