বাড়তি নতুন ইমেইল ঠিকানা আপনার কেন দরকার?

একটা বাড়তি ইমেইল অ্যাকাউন্ট মানে বাড়তি একটা পাসওয়ার্ড, বাড়তি একটা ইনবক্স চেক করার ঝক্কি, মেইল চেক করতে বাড়তি সময় বরাদ্দ এবং কখনও কখনও বাড়তি ইমেইল ক্লায়েন্ট বা সফটওয়্যার। এর পরও অনেকেই বাড়তি একটা ইমেইল করার কথা বলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, উল্লিখিত ঝামেলাগুলো থাকার পরও কী বাড়তি ইমেইল অ্যাকাউন্ট করা উচিৎ?

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2021, 08:06 AM
Updated : 2 Oct 2021, 08:35 AM

উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। প্রযুক্তিবোদ্ধারা এ নিয়ে বিভিন্ন কারণও দেখিয়েছেন। এর মধ্যে থেকে শীর্ষ পাঁচটি কারণ চলুন আজ জেনে নেই--

আরও পেশাদার হতে চান আপনি

পেশাদার জীবনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা ধরে রাখতেই হয়। ক্ষেত্রবিশেষে পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে যোগাযোগের ভাষা ও ধরন। তাই এমন যোগাযোগের জন্য ব্যক্তিগত ইমেইল ঠিকানা ছাড়াও বাড়তি আরেকটি বিশেষায়িত ইমেইল ঠিকানার ব্যবহার অনেকক্ষেত্রেই বিবেচিত হয় পেশাদারিত্বের লক্ষণ হিসেবে।

এক্ষেত্রে ছাত্র বা কিশোর জীবনের ‘ট্রেন্ডি’ ইমেইল ঠিকানা পাল্টে নিজের পুরো নাম ব্যবহার করে নতুন ইমেইল ঠিকানা বানানোর পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্যিক সফটওয়্যারবিষয়ক ওয়েবসাইট গেটঅ্যাপ। আর যদি নিজের মালিকানায় আলাদা কোনো ডোমেইন থাকে, তবে ইমেইল ঠিকানায় ব্যবহার করুন সেই নামটিও।   

অযাচিত মেইলের বিড়ম্বনা এড়াতে

অনলাইন দুনিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে একাধিক ইমেইল ঠিকানার রয়েছে একাধিক ইতিবাচক দিক। পেশাদার বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের ইমেইল বাদে যদি দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোনো ইমেইল ঠিকানা থাকে, তবে অনলাইনের বিভিন্ন সাইটে রেজিস্টার করার ক্ষেত্রে সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে স্প্যাম, ফিশিং (Phishing) আর প্রমোশনাল মেইলের বিড়ম্বনা নিয়ন্ত্রণ করা যায় অনেকাংশে।

প্রোটন মেইল।

আজকাল অনলাইনের প্রায় সব সেবা বা ওয়েবসাইট শুরুতেই রেজিস্টার করতে বলে ব্যবহারকারীকে। এদের বেশিরভাগই হয়তো দৈনন্দিন জীবনে কোনো কাজে আসে না ব্যবহারকারীর। কিন্তু যেখানে রেজিস্টার করলেন, সেই উৎস থেকে আপনার ইমেইল ঠিকানাটি পৌঁছে যেতে পারে কোনো মেইলিং লিস্টে, এমনকি পৌঁছে যেতে পারে ডার্কওয়েবেও।

অযাচিত মেইলের বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য তাই দ্বিতীয় বা তৃতীয় ইমেইল ঠিকানা বানিয়ে ফেলাই ভালো। একবারের বেশি ব্যবহার হবে না বা হলেও কালেভদ্রে; এমন সাইট বা সেবাগুলোর জন্য রেজিস্টার করার সময় ব্যবহার করুন বিকল্প ইমেইল ঠিকানাগুলো।  

এক্ষেত্রে প্রোটনমেইলের মতো ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কেন্দ্রিক সেবা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে গেটঅ্যাপ। একবার ব্যবহারের জন্য একাধিক ইমেইল ঠিকানা বানানোর সুযোগ দেয় এই সেবাটি।

ব্যাংকিং, ক্লাউড স্টোরেজ এবং অন্য যে কোনো গোপন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর কাজে ব্যবহারের জন্যেও আলাদা ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করাই শ্রেয়।

পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে

পেশাদার কাজে ব্যবহৃত ইমেইলে পুরো নামের ব্যবহার হয়তো পেশাদারীত্বের পরিচয় দেয়। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে নিজের পরিচয় গোপন রাখাও জরুরী হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে আলাপচারিতা, কোনো ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে কমেন্ট করা বা বাজার গবেষণার জন্য রিভিউ লেখার মতো কাজগুলোতে নিজের পরিচয় গোপন রাখাই শ্রেয়। এতে সাইবার অপরাধী ও স্প্যামাররা আপনাকে হয়রানি করার সুযোগ কিছুটা হলেও কম পাবে।

জিমেইল।

যোগাযোগে ইচ্ছুক সবার জন্য আলাদা ইমেইল

বিভিন্ন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ যদি আপনার দৈনন্দিনকার কাজ হয়, তবে তার জন্য আলাদা ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করাই শ্রেয়। সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য সাইটেও যদি নিজের ইমেইল ঠিকানাটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ‘পাবলিক’ করে রাখতে হয়, সেক্ষেত্রেও এই কাজে আলাদা ইমেইলের ব্যবহার কমিয়ে আনবে ইনবক্সের ভজঘট।

এর ফলে পেশাদার জীবনের মেইল, ব্যক্তিগত ইমেইল আর বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগের ইমেইলগুলো জমা হবে আলাদা আলাদা ইনবক্সে। ইনবক্স ঘেঁটে আলাদা করে সাজাতে হবে না মেইলগুলো।    

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে অনলাইন ব্যবসার কথা। পণ্য বা সেবা নিয়ে ক্রেতার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ইমেইলের ঠিকানা সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখতে হতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি, আর ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য আরেকটি ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে এড়ানো সম্ভব ইনবক্স জটিলতা। 

সাইবার অপরাধীদের এড়াতে

পেশাদারী যোগাযোগ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন এবং অনলাইনের অপরিচিত মানুষদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো সব কাজে একই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করেন অনেকেই। কোনো কারণে একদিন যদি বেহাত হয়ে যায় ইমেইল ঠিকানাটির আইডি ও পাসওয়ার্ড, দরকারী সব তথ্য একসঙ্গে চলে যেতে পারে সাইবার অপরাধীর হাতে। এর ফলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে পারেন মেইল ঠিকানাটির মালিক।

রয়টার্স।

প্রথমত, চুরি হয়ে যেতে পারে ব্যবহারকারীর পেশাদারী জীবনের গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য। এতে যে শুধু ব্যবহারকারী নিজে বিড়ম্বনার শিকার হবেন তাই নয়, বিপাকে পড়তে পারে তার প্রতিষ্ঠানটি এবং এর সঙ্গে যুক্ত ক্রেতা বা গ্রাহকরা। আবার ওই একই ইমেইল ঠিকানা ব্যবহারে করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগের যোগাযোগের সূত্র ধরে ব্যবহারকারীর ব্যাংকিং তথ্য, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি চুরি করে নিতে পারে একজন হ্যাকার। এই তথ্যগুলো একবার একজন সাইবার অপরাধীর হাতে গেলে ভুক্তভোগীর পুরো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি করে ফেলার সুযোগ পাবে সে।

এর বাইরেও হয়রানির শিকার হতে পারেন ওই ব্যবহারকারীর বন্ধু ও স্বজনরা। ব্যবহারকারীর ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে তাদের স্প্যাম বা ম্যালওয়্যার পাঠাতে পারবে একজন হ্যাকার। আর প্রাপক হয়তো ধরে নেবেন যে তার বন্ধুই পাঠিয়েছেন ইমেইলটি। তারপর ওই স্প্যাম বা ম্যালওয়্যার লিংকে ক্লিক করে ওই ব্যক্তি নিজেও ফেঁসে যেতে পারেন হ্যাকারেদের ফাঁদে।

সাইবার আক্রমণের ভুক্তভোগী হওয়ার এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব একাধিক ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করে। পেশাদারী কাজের জন্য একটি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা একটি, ব্যক্তিগত যোগাযোগের জন্য একটি; এভাবে একাধিক ইমেইল ঠিকানা ব্যবহারের কিছুটা হলেও বাড়ে ব্যবহারকারীর অনলাইন নিরাপত্তা। একটি ঠিকানা হ্যাক হলেও, বাকিগুলো হ্যাকারের কড়াল থাবা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়।