এল সালভাদরে ‘অনুমোদিত মুদ্রা’ বিটকয়েনের  যাত্রা শুরু

আর্থিক লেনদেনের সরকার স্বীকৃত মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে বিটকয়েন। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ‘লিগাল টোকেন’ বিটকয়েনের প্রচলন করেছে এল সালভাদর। ফলে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার ও সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্কে যোগ হলো নতুন মাত্রা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2021, 01:21 PM
Updated : 7 Sept 2021, 01:21 PM

‘লিগাল টোকেন’ হিসেবে এল সালভাদরে বিটকয়েনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ৭ সেপ্টেম্বর। লেনদেনের মাধ্যমে হিসেবে বিটকয়েন গ্রহণ করতে সক্ষম এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত ডিজিটাল মুদ্রাটি গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকেই।

বিবিসি জানিয়েছে, দেশটির কয়েক লাখ নাগরিক সরকারি ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ ডাউনলোড করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়ালেটগুলোতে আগে থেকেই ৩০ ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন থাকবে।

দেশটির নাগরিকদের বিটকয়েন ব্যবহারের উদ্বুদ্ধ করতে এবং সরকারি উদ্যোগকে সমর্থন জানাতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার বিটকয়েন ভক্তরা ৩০ ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন কিনছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

দেশটির নাগরিকদের মধ্যে নতুন মুদ্রা নিয়ে আগ্রহ এবং আশঙ্কা উভয়ই আছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। এই প্রসঙ্গে দেশটির ২৬ বছর বয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভার ড্যানিয়েল হার্কিউলিস বলেন, “বিটকয়েন আসছে জেনে গত দুই মাস ধরেই আমি এটা গ্রহণ করছি। একটু আগেই একজন এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য ৪০ ডলার ভাড়া বিটকয়েনে দিয়েছে আমাকে। তবে এটা বিরল ঘটনা। কেবল ১০ শতাংশ যাত্রী বিটকয়েন দিয়ে ভাড়া মেটাতে চায়”।

বিটকয়েন স্থানীয় মুদ্রায় (মার্কিন ডলার) পরিবর্তনের খরচ ১০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি। তাই বিটকয়েন ওয়ালেট ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবের মতো ব্যবহার করছেন ড্যানিয়েল।

অদূর ভবিষ্যতে এক হাজার বিটকয়েনের মালিক হওয়ার আশা করলেও, ডিজিটাল মুদ্রাটির দামের পতন নিয়ে আশঙ্কিত তিনি, “এটা আমার জন্য ভয়ের বিষয়। সারাদিনের কষ্টের কাজ থেকে পাওয়া টাকা হারানো ভালো কিছু হবে না”।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার ওঠা-নামা করেছে বিটকয়েনের বাজার মূল্য। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই প্রতিটি বিটকয়েনের দাম ছিলো ১০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের এপ্রিলে বিটকয়েনের দাম বেড়ে পৌঁছায় ৬৩ হাজার ডলারে। আবার জুলাই মাসে দাম কমে নেমে আসে ৩০ হাজার ডলারে।

এল সালভাদরে বিটকয়েনের আনুষ্ঠানিক প্রচলনকে কেন্দ্র করে বিটকয়েনের দাম আবার বেড়ে ৫১ হাজার ডলারের পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে সেন্ট্রাল অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটির এক জরিপ বলছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেবল ৪.৮ শতাংশ বিটকয়েন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। আইনগত মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের ব্যবহারে নারাজি বলে জানিয়েছেন ৬৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। বিশেষ করে দেশটির অল্প শিক্ষিত, বয়সে বৃদ্ধ এবং পুরনো ধরনের মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন লেনদেনে আগ্রহী নন।

তবে বিটকয়েনের প্রচলন ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চেষ্টার কমতি নেই এল সালভাদর সরকারের। ডলারকে বিটকয়েনের রূপান্তরিত করার জন্য দেশটির বিভিন্ন জায়গায় দুইশ’র বেশি ক্যাশ মেশিন বসিয়েছে দেশটির সরকার।

অন্যদিকে, বিটকয়েন প্রচলনের বিরোধীতা করে রাজধানী স্যান সালভাদরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দেশটির নাগরিকরা।

ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রশ্নে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের উল্টোপথে হাঁটছে এল সালভাদর। আইন ও নীতিমালার কড়াকড়ি আরোপ করে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

তবে, এল সালভাদর বিটকয়েন প্রচলনকারী একমাত্র দেশ হবে না বলে আশা করছেন দেশটির আমেরিকা প্রবাসী সাবেক নাগরিক গার্সন মার্টিনেজ। “আমাদের দেশ এই অনিবার্য পরিবর্তনের প্রথম দেশ, এটা ভেবে যে কতোটা খুশি লাগছে, কতোটা আশাবাদী হচ্ছি, সেটা বলে বুঝানোর মতো নয়। সালভাদরিয়ান হওয়ার সেরা সময় এটা।”