মাইক্রোসফট নেতৃত্বাধীন দলের ‘যুগান্তকারী’ গবেষণা প্রত্যাহার

কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে ২০১৮ সালে ‘যুগান্তকারী’ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন মাইক্রোসফট নেতৃত্বাধীন গবেষকরা। এবার সে গবেষণা প্রতিবেদন ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা। গবেষকরা জানিয়েছেন, ভুল ছিলো প্রতিবেদনে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2021, 06:37 AM
Updated : 10 March 2021, 06:37 AM

গবেষণার দাবি ছিলো, অধরা অতিপারমাণবিক কণার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা যা আরও শক্তিশালী কম্পিউটার তৈরিতে সহযোগিতা করতে পারবে। সম্প্রতি নেচার জার্নালে গবেষকদের প্রত্যাহারের বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা “অপর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক যথাযথতা”র জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বলেও উঠে এসেছে বিবিসি প্রতিবেদনে।

গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ‘যুগান্তকারী’ আখ্যা পেয়েছিলো। যদিও কিছু বিজ্ঞানী ব্যাপারটি নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে সম্ভাব্য বৈপ্লবিক অগ্রযাত্রা হিসেবে দেখা হয়। গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আরও অনেক কাজ আরও বেশি দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মাধ্যমে।

গতানুগতিক কম্পিউটার ‘বিট’ এর ভিত্তিতে কাজ করে। বিট এর মান কখনও ‘এক’ হয়, না-হয় ‘শূন্য’ হয়। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারে বিটের সমকক্ষ ধরা হয়ে কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট’কে। এটির মান একই সময়ে শূন্য অথবা এক হতে পারে। এতে করে একাধিক গাণিতিক সমস্যার সমাধান একই সময়ে করার সম্ভাব্যতা তৈরি হয়।

বিজ্ঞানীরা কাজ করতে পারবে এমন যথেষ্ট কিউবিট সম্পন্ন ডিভাইস তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানে একদিকে যেমন গুগল ও আইবিএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, ঠিক তেমনিভাবে আরেকদিকে ডি-ওয়েভ, এবং লংকিউয়ের মতো ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীরাও কাজ অব্যাহত রেখেছে।

অন্যদিকে, মাইক্রোসফট ভিন্ন একটি রাস্তা ধরে এগোনোর ব্যাপারে প্রস্তাব রেখেছিলো। মাজোরানা কণার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিউবিট তৈরির চেষ্টা করছিলো তারা। এতে করে ভুল হওয়ার আশঙ্কা কমে আসার কথা ছিলো। মাজোরানা কণার কথা ১৯৩০ এর দশকে প্রথম জানান ইতালিয়ান পদার্থবিদ এত্তোরে মাজোরানা।

গবেষকরা ২০১৮ সালে মাজোরানা কণার অস্তিত্বের সমর্থক প্রমাণ পাওয়ার কথা দাবি করেন। কিন্তু অন্যান্য বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত হতে পারছিলেন না। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জন মর্টন বলেন, “এটি ওই ধরনের একটি বিষয় হয়ে গিয়েছে যা কাগজেই ভালো দেখা যায়। কাজের সময় বাঁধা দেওয়ার অভ্যাস রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানের।”

এখন এসে গবেষকরা জানালেন তারা ভুল করেছিলেন। তাদের ভুলের মধ্যে একটি ছিলো - কিছু ডেটার “অপ্রয়োজনীয় সংশোধন” এবং সে বিষয়টি পরিষ্কার না করা। অপর ভুলটি হলো – চিত্রলেখাকে ভুল লেবেল দিয়ে বিভ্রান্তিকর করে ফেলা।

“এ কারণে আমরা আর কোয়ান্টাইজড মাজারোনা সম্পন্ন হতে দেখার দাবি করতে পারি না এবং এটি আমরা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।” – বিবৃতিতে লিখেছেন গবেষকরা।

অন্যদিকে, স্বাধীন এক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে ডেটা ভুলভাবে উপস্থাপন করেননি গবেষকরা।

নজরদারি সেবা ‘রিট্র্যাকশন ওয়াচ’ এর তথ্য অনুসারে, নেচার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে, প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭৯টি গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু গত বছরই প্রত্যাহার হয়েছে আটটি।