বিভিন্ন অনলাইন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান নানাভাবেই পরামর্শ দিচ্ছে কীভাবে নিরাপদ থাকবেন অনলাইনে। সংকলিত এই ফিচারে আসুন জেনে নেই সে সব বিষয় সম্পর্কে-
১. আপডেট রাখুন ফোন, কম্পিউটার ও অ্যাপস
আপনার ডিভাইস বা যে প্রোগ্রামগুলো ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত, সেগুলোকে আপডেট করে নিন। অধিকাংশ ব্রাউজারই নিজে থেকে আপডেট নিয়ে নেয়, কিন্তু অনেক অ্যাপই এ কাজটি করে না। এজন্য কোনো কিছু পড়া বা দেখার জন্য যে অ্যাপগুলো ব্যবহার করছেন, সেগুলোর ওপর নজর রাখুন। নতুন কোনো আপডেট আসামাত্র আপডেট করে নিন। পুরোনো সংস্করণের অ্যাপে অনেক রকমের বাগ বা নিরাপত্তা ত্রুটি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের বাগ বা নিরাপত্তা ত্রুটির সুযোগ নিয়ে থাকে সাইবার অপরাধীরা।
“আপডেট আপনাকে অনেক সুবিধা দেবে। অ্যাপ বা সফটওয়্যারে কোনো নিরাপত্তা ত্রুটি থাকলে সেগুলো আপডেটের মাধ্যমে সারিয়ে নেওয়া হয়। অনেক নিরাপত্তা প্যাচও রিলিজ করা হয় আপডেটের মাধ্যমে। কাজেই আপডেট আসামাত্র ইনস্টল করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ- বলেছে নিরাপত্তা সংস্থা ও নর্টন অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা নর্টনলাইফলক তাদের ওয়েবসাইটে।
সেইসঙ্গে অ্যাপ ও সফটওয়্যার ডাউনলোডের বেলায় অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর বা গুগল প্লে-এর মতো নির্ভরযোগ্য উৎস ব্যবহার করুন।
২. ক্লিক করার আগে ভাবুন
ফিশিং স্ক্যাম বা জালিয়াতিতে মানুষের ভয় ও অনিশ্চিয়তাকে পুঁজি করা হয়। কোভিড-১৯ ঘিরে গড়ে উঠা অনলাইন জালিয়াতিতেও একই কাজ করা হচ্ছে। ভাইরাসের ব্যাপারে নতুন তথ্যের ভরসা দিয়ে পাঠানো এসএমএস বা ইমেইলে জুড়ে দেওয়া লিংক বা অ্যাটাচমেন্ট হতে পারে আপনার জন্য ক্ষতিকর। বেহাত হতে পারে আপনার মূল্যবান আর্থিক তথ্যাদি।
আর তাই এ বিষয়ে পরামর্শ হচ্ছে, অপরিচিত ব্যক্তি বা সংস্থার পাঠানো মেইল বা মেসেজ না খোলা, আর খুলে ফেললেও কোনোভাবেই লিংক বা অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক না করা।
মেইলটি কীভাবে লেখা হয়েছে, সেটিও দেখুন। এ ধরনের অধিকাংশ মেইলেই ভুল থাকে বা ভাষার ব্যবহার ততোটা ভালো হয় না। কষ্ট করে মেইলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যে প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া আছে, সে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।
৩. আগলে রাখুন গোপনতা
অনলাইনে বেশি সময় কাটানো মানে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করা। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজ অ্যাকাউন্টগুলোর প্রাইভেসি সেটিংস পর্যালোচনা করুন।
এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারনেট সোসাইটি ডটঅর্গ। মার্কিন এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া পরমর্শ হচ্ছে-
এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন আছে এমন মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করুন
এর মানে হচ্ছে, আপনি এবং যার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এই দুই প্রান্ত ছাড়া আপনাদের আলাপচারিতায় আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, এমন ব্যবস্থা।
আপনার ডিভাইস বা পরিষেবাগুলিতে এনক্রিপশন চালু করুন
কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
ডিফল্ট পাসওয়ার্ড, সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না।
টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন
এর মানে হচ্ছে আপনার পরিচয় দুইবার যাচাই করা হবে। একবার পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে আরেকবার ভিন্ন কোনো উপায়ে, ধরা যাক আপনার ফোনে কোনো 'পিন' কোড পাঠিয়ে। এর মাধ্যমে নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
মোবাইল ডিভাইসে ইরেইজ অপশন চালু করুন
আপনার ফোন হারিয়ে গেলে এই অপশন আপনার ওই হারিয়ে যাওয়া ডিভাইস মুছে ফেলতে সাহায্য করবে।
৪. নিরাপদে সংযুক্ত হন ভিডিও চ্যাটিংয়ে
লকডাউনের এ সময়টিতে সহকর্মী, পরিবার, বন্ধু সবার সঙ্গে যোগাযোগে ভিডিও চ্যাটিংয়ের চাহিদা খুব বেড়েছে। অনেক অ্যাপই বড় পরিসরে গ্রুপ কল করার সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে সেবাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে। নিজেদের সেবাকে ‘এন্ড-টু-এন্ড’ এনক্রিপ্টেড দাবি করার পর সে দাবি সরিয়েও নিয়েছে ভিডিও কলিং অ্যাপ জুম। গোপনতা ও নিরাপত্তা প্রশ্নে এরই মধ্যে জুম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থা।
ভিডিও চ্যাটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন জিটসি মিট। ওপেন সোর্স জিটসি মিট ব্যবহারের জন্য সফটওয়্যার ডাউনলোড বা অ্যাকাউন্ট খোলার কোনো প্রয়োজন নেই।
৫. পরিষ্কার রাখুন অনলাইন উপস্থিতি
অনলাইনে যে অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করেন না, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার উপযুক্ত সময় এটি। কারণ, এ ধরনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেও ফাঁস হয়ে যেতে পারে আপনার তথ্য।
৬. সচেতন থাকুন
মহামারীর সময়টিতে নানারকম তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। এগুলোর কোনোটি সত্য, কেনোটি মিথ্যা। বিষয়গুলো সম্পর্কে খবর রাখুন। তাহলে আপনাকে সহজে বোকা বানাতে পারবে না সাইবার অপরাধীরা। কোনো খবরের সত্যতা জানতে মূল সূত্র থেকে ঘুরে আসার চেষ্টা করুন। সেটা সম্ভব না হলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সুত্র থেকে সেটির সত্যতা যাচাই করে নিন।
ভুয়া খবর ও ভ্রান্ত তথ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখুন এবং নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের বিষয় প্রচার বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।