বৈদ্যুতিক গাড়ি: ইলন মাস্ক ও টেসলার এক দশক

আরেকটি দশকের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে বিশ্ব। বিদ্যুত চালিত গাড়ির চাহিদা ও বাজারে উল্লেখযোগ্য মাত্রার পরিবর্তন এসেছে এ দশকে। আর এ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ইলন মাস্ক ও তার প্রতিষ্ঠান টেসলা।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2019, 08:11 AM
Updated : 24 Dec 2019, 08:11 AM

আদতে কিন্তু এতোটা মসৃণ ছিল না পথচলা। টেসলা ও ইলন মাস্ক বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরেছে মার্কিন বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বস। চলুন প্রতিবেদনটির আলোকে জেনে নেই কীভাবে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন ইলন মাস্ক ও তার প্রতিষ্ঠানটি।

টেসলা যে একদিন বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে তা কল্পনার বাইরে ছিল ২০০৯ সালের জানুয়ারিতেও। তখন মাস্কের সঙ্গে কথা বললে মনে হতোই না যে একদিন বাজার ঘুরিয়ে দেবেন তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান। টেসলার অবশ্য তখন খুবই দুর্দিন। খুব একটা ভালো অবস্থানে ছিলেন না ইলন মাস্কও।

বাজার মন্দার মধ্যে পড়ে সে সময় প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে টেসলার অর্থ। এদিকে বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি রোডস্টারের ক্রেতা পেতে সমস্যা হচ্ছে। অর্থাভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে টেসলার মিশিগান কার্যালয়। সবমিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থা। এ সময়টিতে টেসলার পাশে এসে দাঁড়াল জার্মান বহুজাগতিক গাড়ি নির্মাতা ডাইমলার।

নিজেদের পরীক্ষামূলক বিদ্যুত চালিত মার্সেইডিজ গাড়ির জন্য ব্যাটারি ও মোটরের প্রয়োজন ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ব্যাটারি ও মোটর পেতে টেসলার সঙ্গে হাত মেলাল প্রতিষ্ঠানটি। হিসেবে খুব ছোট একটি চুক্তি। কিন্তু ওই চুক্তিটি সে যাত্রা জীবন বাঁচাল টেসলার। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে শুরু করলো প্রতিষ্ঠানটি।

অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানের মতো টেসলাকেও সহযোগিতা করেছে মার্কিন সরকার। বিকল্প জ্বালানী প্রচারণার জন্য বরাদ্দ সরকারী ভর্তুকী পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের উন্নয়নে সে সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে টেসলা। জাপানিজ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটার কাছ থেকে ২০১০ সালে ‘মথবলড প্ল্যান্ট’ কেনে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ফ্রেমন্টে অবস্থিত ওই প্ল্যান্টটি কেনার মধ্য দিয়ে মূলধারার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে টেসলা।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ঋণ পাওয়ার ফলেই প্ল্যান্টটি কিনতে পেরেছিল টেসলা। ওই প্ল্যান্টটি কিনতে না পারলে হয়তো দেখা মিলতো না ২০১২ সালের মডেল এস সেডানের। ওই গাড়িটিই টেসলাকে পৌঁছে দেয় অন্য একটি মাত্রায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে বাজারে আসে ‘ফ্যালকন উইং ডোরের’ মডেল এক্স গাড়িটি। প্রশংসিত হয় টেসলার ওই উদোগ্যটিও। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ২০১৭ সালে বাজারে আসা মডেল ৩ সেডান গাড়িটি নিয়ে।

প্রথম সাশ্রয়ী মূল্যের টেসলা গাড়ি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় মডেল ৩ সেডান গাড়িটি। কিন্তু গাড়িটি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক।           

কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কীভাবে ৩৫ হাজার ডলারে বিক্রি করবেন এই গাড়ি। কারণ, সবাই জানে ওই দামেই বাজারে আসছে টেসলা মডেল ৩। বিষয়টি মাসের পর মাস ভুগিয়েছে মাস্ক ও টেসলা কর্মীদের। কয়েক মাসের নরক যন্ত্রণার পর গাড়িটিকে বাজারে আনার পর অবশ্য ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৮ সালে বাজারে পা রেখেই টেসলার সব বিক্রি রেকর্ডের শীর্ষে উঠে যায় গাড়িটি। ২০২০ সালে টেসলা মডেল ৩ প্রযুক্তির আলোকে ও ছাঁচে তৈরি ‘মডেল ওয়াই’ আসার কথা রয়েছে।

এরই মধ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবরে নিজেদের নতুন ট্রাক ‘সাইবারট্রাক’ দেখিয়েছে টেসলা। শুরুতে বিতর্কের জন্ম দিলেও এখন সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন গাড়িটির জন্য। গতানুগতিক পিক-আপ ধাঁচের ট্রাকের নকশা থেকে সরে এসে নতুন নকশা দেওয়া হয়েছে ‘সাইবারট্রাক’কে।

বর্তমানে টেসলার রয়েছে বিশাল অনুসারী দল। ইলন মাস্কের অনুসারীর সংখ্যাটিও নেহায়েত কম নয়। নিজের স্বপ্ন সবার সঙ্গে বিলি-বন্টন করে নিয়েছেন দুই হাজার ৬৬০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক ইলন মাস্ক। টেসলা প্রধানের ওই সম্পদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে টেসলা’ও। তার মোট সম্পদের ২৫ শতাংশই এসেছে টেসলার মাধ্যমে।

বিশ্বে এখন বিদ্যুচালিত গাড়ি শিল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন ইলন মাস্ক ও টেসলা। সমস্যাও কিন্তু কম হচ্ছে না। আগুন, নিরাপত্তা, কারখানা গোলযোগ, ব্যবস্থাপনার চাপ এরকম নানা ইসুতে বারবার আলোচনায় উঠে আসছে টেসলা। অন্যদিকে টুইটারের মাধ্যমে নিজের মন্তব্য সরাসরি জানিয়ে একাধিকবার ঝামেলায় পড়েছেন ইলন মাস্কও। তারপরেও বলতে হয়, খারাপ অবস্থানে নেই টেসলা প্রধান ও টেসলা।

২০২০ সালটি খ্যাতনামা গাড়ি নির্মাতা হিসেবে শুরু করতে যাচ্ছে টেসলা। ২০০৯ সালের মতো স্টার্ট-আপ পর্যায়ে আটকে নেই প্রতিষ্ঠানটি। হাতে নতুন লক্ষ্যও নিয়েছেন মাস্ক। বছরে চার লাখের বদলে দুই কোটি গাড়ি তৈরি করতে চাচ্ছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে মাস্ক বলেছেন, “বিশ্ব কমবাস্টন ইঞ্জিন চালিত গাড়ি থেকে যতটা সরে আসবে, নতুন গাড়ির চাহিদা ততটাই বাড়বে।”