বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার বানাবে সরকার: জব্বার

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের দৈনন্দিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যোগাযোগের উপযোগী সফটওয়্যার তৈরি করছে আইসিটি বিভাগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 03:06 PM
Updated : 8 Nov 2018, 03:10 PM

বৃহস্পতিবার ঢাকার জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এক কর্মশালায় এ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

ডাক-টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বলেন, “ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের প্রতিবন্ধীতা দূর করতে বাংলা ভাষাভিত্তিক যোগাযোগের এই সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে।

যাদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক, কিন্তু বলতে বা শুনতে পারেন না, তারা এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে এ কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়া উদ্দিন বক্তব্য দেন।

জিয়া উদ্দিন বলেন, “এর মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে সাইন ল্যাংগুয়েজ, মুখভঙ্গি বা জেসচারকে ইউনিকোড টেক্সটে রূপান্তর করা এবং তা থেকে অটোমেটিক স্পিচ জেনারেট করা।” 

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা একটি মোবাইল ফোনের ক্যামেরার সামনে হাত, হাতের আঙুল ও মুখমণ্ডলের নড়াচড়ার মাধ্যমে বাংলা সাইন ল্যাংগুয়েজ দেখাবেন। মোবাইলের অ্যাপ সেই ‘ইশারা ভাষা’ শনাক্ত করে তাকে বাংলা ইউনিকোড টেক্সটে রূপান্তর করে অন্যপ্রান্তে দেখাবে। পাশাপাশি ওই টেক্সট বাংলা কথায় রূপান্তরিত হবে।

‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ সফটওয়্যার তৈরি হবে। এই সফটওয়্যারের নাম হবে ‘অটোমেটিক রিয়েল টাইম বাংলা সাইন-জেসচার ডিটেকশন অ্যান্ড টেক্সট-স্পিচ জেনারেশন সিস্টেম’।

এই সফটওয়্যার নির্দিষ্ট কোনো ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল হবে না। সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল বা সম পর্যায়ের ডিভাইসেই তা কাজ করবে।

ইশারা ভাষা নির্ণয়ে মোশন ইমেজ প্রসেসিং পদ্ধতির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিশেষ করে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এই সফটওয়্যারে।

একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তার দৈনন্দিন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে যতগুলো পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন এর প্রায় সবগুলোই এই সফটওয়্যারের আওতাভুক্ত থাকবে।

যেমন চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও রোগের বর্ণনা, পুলিশের কাছে আইনি সহায়তা ও পরিস্থিতি বর্ণনা, ক্লাসরুম, রেস্তোরাঁ, দোকান, এয়ারপোর্ট, বিনোদন কেন্দ্র, পারিবারিক আলাপচারিতা, কুশল জিজ্ঞাসা ইত্যাদি পরিস্থিতি থেকে  ‘সাইন টু টেক্সট অ্যান্ড স্পিচ’ তৈরি করতে পারবে সফটওয়্যারটি।

‘প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার উন্নয়ন’ বিষয়ক এই কর্মশালায় বুয়েট, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ জাতীয় প্রতিবন্ধী সংস্থা এবং সিডিডির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ দশমিক ৬ শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাক প্রতিবন্ধী।

১৯৯৪ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ করা হয় বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান ।এরপর ২০০৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলা ইশারা ভাষার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পরিপত্র জারি করে।

২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী প্রতিবছর ৭ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালন করা হচ্ছে।