কনডম, মাদক, প্রসাধনী- সব তথ্য আঙ্গুলের ছাপে

সন্দেহভাজন ব্যক্তি তার চুলে কোন ব্র্যান্ডের জেল ব্যবহার করেন বা তিনি কোনো কনডম ব্যবহার করেছিলেন কিনা- আদালতে এ ধরনের এ তথ্য উপস্থাপনে সহায়তা করবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি। 

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2017, 02:32 PM
Updated : 10 Oct 2017, 02:32 PM

এই কৌশলে একটি আঙ্গুলের ছাপ থেকে বিভিন্ন উপাদান শনাক্তে এক ধরনের বর্ণালীবিক্ষণ ব্যবহার করা হয়। সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির সম্পর্কে এর মাধ্যমে ‘বিভিন্ন ধরনের’ তথ্য পাওয়া যাবে, এমনকি কোনো অ্যালকোহল বা মাদক দ্রব্যের ব্যবহার করেছেন কিনা তাও- গবেষকরা এমনটাই দাবি করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হালাম ইউনিভার্সিটির গবেষক দল পরীক্ষামূলকভাবে এই কৌশল চালাতে দেশটির ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশ-এর সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রকল্পের প্রধান ড. সিমোনা ফ্রান্সিস বলেন, ৩০ বছর পুরানো কোনো ছাপ থেকেও রক্ত শনাক্ত করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। তিনি বলেন, “ধর্ষণ বা খুনের মতো গুরুতর মামলাগুলোতে আমি এই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখতে চাই। এটি অত্যন্ত আধুনিক। এটি ব্যয়বহুল কিন্তু এই ব্যয় যুক্তিযুক্ত।” 

এই প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করবে?

>>এই বিশ্লেষণা কৌশল আঙ্গুলের ছাপের ভাঁজে থাকা বিভিন্ন উপাদান শনাক্তে ব্যবহৃত হয়।

>>প্রাপ্ত নমুনাকে বাষ্পে পরিণত করে তারপর একটি বায়ুশুন্য জায়গায় এতে বৈদ্যুতিক ও চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের মাধ্যমে পুড়িয়ে কাজ করা হয়।

>>এই অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের উপাদান বিভিন্নভাবে আচরণ করে, যার মানে হচ্ছে শেফিল্ড হালাম ইউনিভার্সিটি-এর গবেষকদল আঙ্গুলের ছাপে প্রাপ্ত উপাদান শনাক্ত করতে পারবে।

>>এই কৌশলে প্রাপ্ত তথ্য বিচিত্র ধরনের হয়। যেমন, এতে পাওয়া প্রোটিনগুলো থেকে বিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন ব্যক্তি পুরুষ নাকি নারী ছিলেন। 

বিবিসি

গবেষকরা ২০১২ সাল থেকে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশ-এর সঙ্গে এই প্রযুক্তি পরীক্ষায় কাজ করছেন। ড. ফ্রান্সিস বলেন, “আপনি যদি ভাবেন একটি আঙ্গুলের ছাপ আসলে কী, এটি আসলে ঘাম ছাড়া আর কিছুই না, আর ঘাম একটি জৈবিক উপাদান।” 

“এতে আপনার দেহ থেকে আসা উপাদানগুলো থাকে, সেই সঙ্গে আপনার আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে মিশে যাওয়া অন্যান্য উপাদানগুলোও থাকে, তাই যে পরিমাণ তথ্য উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে সেটি বিশাল।”

ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার পুলিশ-এর হাম্বার রিজিওনাল সায়েন্টিফিক সাপোর্ট ও ইয়র্কশায়ার-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নিল ডেনিসন বলেন, “আমরা অপরাধীদের সঙ্গে স্পষ্টভাবে তাল মিলিয়ে আগাতে খুব, খুবই আগ্রহী আর এটি একটি উপায় যা দিয়ে আমরা তা করতে পারি।”

আঙ্গুলের ছাপ থেকে এই বর্ণালীবিক্ষণ ব্যবহারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা সম্ভব- 

>> ব্যক্তির লিঙ্গপরিচয়।

>> ওই ব্যক্তি কোনো রক্ত স্পর্শ করেছিলেন কিনা আর এই রক্ত মানুষের নাকি অন্য কোনো প্রাণির।

>> তিনি কোনো মাদক নিয়েছিলেন কিনা। কোকেইন, গাঁজায় থাকা রাসায়নিক টিএইচসি, হেরোইন, আফিটেমাইন আর অন্যান্য মাদক শনাক্ত করা যাবে।

>> কোনো প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার করেছিলেন কিনা।

>> ওই ব্যক্তি কনডমে থাকা কোনো লুব্রিকেন্ট ধরেছিলেন কিনা, এমনকি জানা যাবে ওই কনডমের ব্র্যান্ডও।

>> আরও জানা যাবে তিনি রসুন ও ক্যাফেইনের মতো কোনো ধরনের খাদ্য ও পানীয় নিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য ৮০ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে।