নিজের ‘এআই ছবির’ পুরস্কার নেবেন না জার্মান শিল্পী

“এআই ও ফটোগ্রাফি একই বিষয় নয়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এআইভিত্তিক ছবি গ্রহনে প্রস্তত কি না, সেটি খুঁজে বের করতে আমি এতে নিবন্ধন করি।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2023, 04:26 PM
Updated : 17 April 2023, 04:26 PM

মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতায় এআই’র তৈরি ছবি শীর্ষ পুরস্কার জেতার কারণে ফটোগ্রাফি জগতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটির জন্য পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন শিল্পী নিজেই।

ক্যামেরায় তোলা না হলেও জার্মান শিল্পী বরিস এলডাগসেনের ‘ইলেকট্রিশিয়ান’ নামের ছবিটি ‘ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অর্গানাইজেশন’ আয়োজিত ‘সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস’-এর সৃজনশীল বিভাগে সেরা ছবির পুরস্কার জিতেছে।

এই পুরস্কার নিতে ক্রমাগত অস্বীকৃতি জানিয়ে এলডাগসেন বলেন, “এআই ও ফটোগ্রাফি একই বিষয় নয়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এআইভিত্তিক ছবি গ্রহনে প্রস্তত কি না, সেটি খুঁজে বের করতে আমি এতে নিবন্ধন করি।”

“তবে, এগুলো (প্রতিযোগিতা) এখনও প্রস্তুত হয়নি।” - বলেন তিনি।

জার্মান শিল্পীর ছবিটি ‘সুডোমনেশিয়া: ফেইক মেমরিস’ নামের এক সিরিজের অংশ। আর এটি তৈরি হয়েছে ৪০-এর দশকের ছবির ধরন ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে। তবে, বাস্তবতা হলো এটি ‘অতীতের এমন ভুল স্মৃতি, যার অস্তিত্ব কখনওই ছিল না ও কেউ এর একটি ছবিও তোলেননি।

এইসব ছবি তৈরি হয়েছে এমন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে কল্পিত ও এআই ইমেজ জেনারেটরের মাধ্যমে ২০ থেকে ৪০ বার পুনরায় এডিট করা, যেখানে ‘ইনপেইন্টিং’, ‘আউটপেইন্টিং’ ও ‘প্রম্পট হুইস্পারিং’-এর মতো বিভিন্ন কৌশল সমন্বিত করা হয়েছে।

এক ব্লগে এলডাগসেন ব্যাখ্যা করেন, তিনি নিজের আলোকচিত্রী হওয়ার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এই পুরস্কার জেতা ছবি তৈরি করেছেন। আর বিভিন্ন এআই জেনারেটরের ‘কো-ক্রিয়েটর’-এর পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ার পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

তার কাজ ফটোগ্রাফি থেকে অনুপ্রাণিত হলেও তিনি বলেন, তার এই ছবি জমা দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল এটি প্রমাণ করা যে এটা ফটোগ্রাফি নয়।

“বিভিন্ন ওপেন কলে অংশগ্রহণ করে আমি এই পার্থক্য নিয়ে সচেতন করার পাশাপাশি এআই’র তৈরি ছবির জন্য আলাদা প্রতিযোগিতা তৈরির উদ্দেশ্যে পুরস্কার আয়োজকদের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে চাই।” --বলেন তিনি।

“আপনাদের মধ্যে কয়জন জানতেন বা সন্দেহ করেছেন এটি এআই’র তৈরি? এতে কিছুটা খটকা লাগে, তাই না? এআইভিত্তিক ছবি ও ফটোগ্রাফির এমন এক পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতাও করা উচিৎ নয়। এগুলো আলাদা সত্ত্বা।” 

“আর এআই যেহেতু ফটোগ্রাফি নয়, তাই এমি এই পুরস্কার গ্রহণ করব না।”

এর পরপরই ছবিটি আয়োজন ও প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে, আয়োজকরা এখনও এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। আর এলডাগসেন লন্ডনে ভ্রমণ করে আয়োজনটিতে যোগ দেন। এমনকি নিজের এক বিবৃতি দেওয়ার জন্য তিনি (বিনা দাওয়াতে) সরাসরি মঞ্চে উঠে গিয়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।

এআই’র তৈরি ছবিটি সম্পর্কে আয়োজকরা আগে থেকেই জানতেন কি না, ওই বিষয়টি পরিষ্কার নয়। অবশ্য তাদের এই বিষয়টি অবগত করার কথা বলেছেন এলডাগসেন।

যে কোনো ক্ষেত্রেই এই পরিস্থিতি এড়িয়ে না গিয়ে বরং আয়োজকদের এটি গ্রহণ করা উচিৎ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট। গত বছর এআই’র তৈরি শিল্পকর্ম বড় পরিসরেই এই সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে। আর গত কয়েক মাসে ছবি ও শিল্প হিসাবে দুই ধরনের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছে এআই।

এনগ্যাজেট বলছে, এলডাগসেনের ছবি নিশ্চিতভাবেই এই প্রক্রিয়া সামলানোর উপায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে যখন এটি প্রচলিত কোনো ধারা দখল করে আছে।