তদন্তকারীরা আশা করছেন, এ প্রাণবন্ত হলোগ্রাম ওই অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে ও এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণে সাহায্য করবে।
Published : 11 Nov 2024, 04:34 PM
আমস্টারডামের রেড লাইট এলাকায় এখন ভীতি ছড়াচ্ছে একজন তরুনী যৌন কর্মীর হলোগ্রাম।
৩ডি’র মাধ্যমে তৈরি ওই ছবিতে দেখানো যৌন কর্মীকে ডেনিম প্যান্ট ও চিতাবাঘের ছাপওয়ালা অন্তর্বাস পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, তার পেট থেকে বুক পর্যন্ত একটি ট্যাটুও দেখা গেছে, যেখানে সবার মনযোগ আকর্ষণের জন্য ছবিতে থাকা নারী জানালায় ঠক ঠক শব্দ করছেন।
এদিকে, তাকে সামনের দিকে এগিয়ে এসে একটি কাঁচের ওপর নিঃশ্বাস ফেলার পাশাপাশি ‘হেল্প’ শব্দটিও লিখতে দেখা গেছে।
বার্নাডেট ‘বেটি’ এসজাবো নামের ১৯ বছর বয়সী হাঙ্গেরীয় এক নারীকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এই হলোগ্রামটি নকশা করা হয়েছে, যিনি ২০০৯ সালে মা হওয়ার কয়েক মাস পরই হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডে তাকে এলোপাথারি ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। ১৫ বছর ধরে এই ঘটনার কোনো সমাধান মেলেনি। এবার মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে প্রথমবারের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন ডাচ গোয়েন্দারা।
হত্যার শিকার ওই তরুণীর ছবিটি বসানো হয়েছে একটি জানালার পেছনে, যেখানে হাজারের বেশি কম বয়সী নারী এই ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় কাজ করে জীবন যাপন করছেন।
তদন্তকারীরা আশা করছেন, এ প্রাণবন্ত হলোগ্রাম ওই অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে ও এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণে সাহায্য করবে।
বেটির হত্যাকারীরা এখন পর্যন্ত ধরা পড়েনি। কিন্তু গোয়েন্দা কর্মকর্তা অ্যান ড্রেইজার-হিমসকার্ক চাইছেন এ প্রেক্ষাপট বদলে দিতে।
“একজন তরুণী নারী, যার বয়স মাত্র ১৯, তার জীবন কতটা ভয়াবহ উপায়ে কেড়ে নেওয়া হল।”
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, এসজাবো’র জীবন খুবই জটিল ছিল, যেখানে কষ্ট পেয়েও টিকে থাকার মতো গল্প ছিল তার।
১৮ বছর বয়সে তিনি আমস্টারডামে পাড়ি জমান ও এর পরপরই তিনি গর্ভবতী হন। এ অবস্থাতেই তিনি নিজের কাজ চালিয়ে গেছেন। পুত্র সন্তান প্রসব করার পরপরই তিনি কাজে ফিরেছিলেন বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে।
কিন্তু ২০০৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে দুইজন যৌন কর্মী কাজের বিরতি চলাকালীন এ তরুণী মায়ের খোঁজ নিতে এসেছিলেন। তাদের কৌতুহলের কারণ ছিল, তার রুমে সাধারণত যে মিউজিকটি বাজে, সেটি আর বাজছিল না।
প্লাস্টিকে আবৃত খাট, ভ্যানিটি টেবল ও সিংক থাকা ছোট রুমটিতে প্রবেশ করে তারা দেখতে পান, সেখানে বেটি এসজাবো’র নিথর দেহ পড়ে আছে।
সন্তান প্রসব করার তিন মাস পর তিনি হত্যার শিকার হলেন। আর শিশুটিকে লালন পালনের জন্য এতিমখানায় দেওয়া হয়, যে কখনোই নিজের মা সম্পর্কে জানতে পারেনি। আর এ বিষয়টিই গোয়েন্দাদের এ ঘটনা নিয়ে আরও তদন্ত করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করলেও হত্যাকারীকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি তারা সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া সম্ভাব্য স্বাক্ষীদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
লাল রঙের নিয়ন জানালার আড়ালে স্বল্প পোশাক পরিহিত ওই নারীর দিকে তাকিয়ে থাকা লোকজনের বেশিরভাগই পর্যটক। পুলিশের সন্দেহ, হত্যাকারী সম্ভবত বিদেশ থেকে এসেছিল।
এখন তারা সেইসব ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছে, যারা হয়ত ওই সময় আমস্টারডাম ভ্রমণে এসেছিলেন। এমনকি এ ঘটনার সম্ভাব্য স্বাক্ষীদের আকৃষ্ট করতে ৩০ হাজার ইউরোর আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, আমস্টারডামের পরিচিত যৌন পল্লীগুলোকে শহরের বাইরের কোনো ‘ইরোটিক জোন’-এ নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্ক চলছে, যেখানে এসজাবো’র হলোগ্রাম ওই এলাকার যৌন কর্মীদের দুর্দশার চিত্রও তুলে ধরে। এমনকি এইসব এলাকায় বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু হলেও সেখানে বিপদের ঝুঁকি আগের মতোই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, যৌন কর্মীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গেলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
এই ধরনের হিংসাত্মক অপরাধ যে নেদারল্যান্ডসের অন্যতম ব্যস্ত নাইটস্পটে ঘটতে পারে, তা তদন্তকারীদের আজও বিস্মিত করে চলেছে।
এটি ঐতিহাসিক রেড-লাইট এলাকা, যেখানে একসময় তরুণী যৌন কর্মী বেটি থাকতেন ও কাজ করতেন, তার ডিজিটাল উপস্থিতি পথচারীদের আজও মনে করিয়ে দেয় যে, মামলাটির সমাধান এখনও হয়নি।