কনটেন্ট মডারেশন সামলাতে অটোমেশনমুখী মাস্ক

আগে প্রশ্নবিদ্ধ কনটেন্ট পর্যালোচনা করে প্ল্যাটফর্মে রাখা, না রাখার সিদ্ধান্তটি মানব কর্মীরা নিলেও – সে কাজটি টুইটারের মূল অ্যালগরিদমের ওপর চাপাতে চাইছেন তিনি।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 06:41 AM
Updated : 4 Dec 2022, 06:41 AM

টুইটারে দুই তৃতীয়াংশ কর্মী কমে যাওয়ার পর প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের উপস্থিতি বাড়তে থাকায় ‘অটোমেশন’-এর দিকে ঝুঁকেছেন চিফ টুইট ইলন মাস্ক। 

রয়ে যাওয়া কর্মীদের মাস্ক ‘আরও বেশি ঝুঁকি’ নিতে বলছেন বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটির নতুন নিরাপত্তা প্রধান এলা আরউইন। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেইট (সিসিডিএইচ)’ এর এক সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মাস্কের অধীনে টুইটারে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। 

এ পরিস্থিতিতে টুইটার কনটেন্ট মডারেশন প্রশ্নে ‘অটোমেশন’ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন আরউইন। ক্ষতিকর কনটেন্ট চিহ্নিত করতে কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা টুইটারের অতীত ভুলগুলোর একটি এবং এতে সময় ও শ্রম উভয়ই অপচয় হতো বলে দাবি করেছেন তিনি।

সোজা কথায়, আগে প্রশ্নবিদ্ধ কনটেন্ট পর্যালোচনা করে প্ল্যাটফর্মে রাখা, না রাখার সিদ্ধান্তটি মানব কর্মীরা নিলেও – সে কাজটি টুইটারের মূল অ্যালগরিদমের ওপর চাপাতে চাইছেন মাস্ক।

মাস্কের ব্যবস্থাপনার সাফাই গেয়ে আরউইন রয়টার্সকে বলেছেন, “তিনি কর্মীদের আরও ঝুঁকি নিয়ে, দ্রুত গতিতে কাজ করে প্ল্যাটফর্মকে নিরাপদ করে তুলতে উদ্বুদ্ধ করছেন।”

আর শিশু নিরাপত্তার প্রশ্নে টুইটার নির্ভরযোগ্য অভিযোগকারীদের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অতীতে প্রশ্নবিদ্ধ কনটেন্টে নিয়ে সঠিক অভিযোগ তুলেছেন– এমন অ্যাকাউন্টগুলো থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেন্ট মুছে দিচ্ছে টুইটার। 

শিশু নিপীড়নের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে টুইটার আগের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মকভাবে নিপীড়নমূলক হ্যাশট্যাগ এবং সার্চ রেজাল্ট মুছে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আরউইন। 

“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দলের হাতে দ্রুতগতিতে এবং যতটা সম্ভব আগ্রাসীভাবে কাজ করার ক্ষমতা আছে,” রয়টার্সকে বলেন তিনি।

সম্প্রতি টুইটারে বিদ্ধেষমূলক ও বিতর্কিত কনটেন্ট প্রচারের কারণে অতীতে নিষিদ্ধ হওয়া অ্যাকাউন্টগুলোর জন্য ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করেছেন মাস্ক। তার পরপরই মাস্কের অধীনে প্ল্যাটফর্মটিতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও আপত্তিকর ভাষার ‘ব্যাপক ফলনের’ বিষয়টি উঠে এসেছে গবেষকদের অনুসন্ধানে। 

টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিন হাজার ৭০০ কর্মী ছাটাই করেছেন মাস্ক; বাকি কর্মীদের কঠোর পরিশ্রমের আল্টিমেটাম দেওয়ার পর ইস্তফা দিয়েছেন আরও ১২শ’ কর্মী। তারপর থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্ল্যাটফর্মটির বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য মোকাবেলার সক্ষমতা।

অন্যদিকে, শুক্রবার ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ‘কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা আরও কঠোর করার এবং বাকস্বাধীনতা রক্ষার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইলন মাস্ক। 

আরউইন রয়টার্সকে বলেছেন, ব্যবসা বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধির ওপর নিজেদের পদক্ষেপগুলো কেমন প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে কর্মীদের দুশ্চিন্তা করতে মানা করেছেন মাস্ক। চিফ টুইট দিনে কয়েকবার করে প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি তার। 

২৩ নভেম্বরের এক টুইটে মাস্ক দাবি করেছিলেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রচার কমছে তার প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু গবেষকদের তথ্য বলছে, মাস্কের ওই টুইটের এক সপ্তাহ আগে থেকেই টুইটারে আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে। 

মাস্ক টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে প্ল্যাটফর্মে কৃষ্ণাঙ্গ বিরোধী টুইট বেড়েছে তিনগুণ; সমকামীদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর ভাষার ব্যবহার বেড়েছে ৩১ শতাংশ। 

আরউইনের দাবি, অর্ধেকের বেশি কর্মী হারিয়েও টুইটারের বিদ্বেষমূলক ও আপত্তিকর ভাষার কনটেন্ট মোকাবেলার সক্ষমতায় বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। 

সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ‘গোস্ট ডেটা’র সঙ্গে জোট বেঁধে টুইটার শিশু নিরাপত্তা লঙ্ঘনকারী ৪৪ হাজার অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।