বিভিন্ন গ্রহকে আবর্তন করা মহাজাগতিক বস্তুগুলোই হচ্ছে চাঁদ। এর মধ্যে বুধ গ্রহের কোনো চাঁদ না থাকলেও বৃহস্পতি গ্রহে আছে ৯৫টি ও মঙ্গল গ্রহে আছে দুটি।
Published : 21 Sep 2024, 04:07 PM
পৃথিবীর চাঁদ সম্পর্কে সবার ধারণা থাকলেও অন্যান্য গ্রহেও বেশ কিছু চাঁদ আছে। আর বিভিন্ন গ্রহের বেলায় এইসব চাঁদের সংখ্যা ভিন্ন।
এর মধ্যে বুধ গ্রহের কোনো চাঁদ না থাকলেও বৃহস্পতি গ্রহে আছে ৯৫টি ও মঙ্গল গ্রহে আছে দুটি।
তবে, নতুন এক গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, মঙ্গল গ্রহের হয়ত আকারে বড় তৃতীয় একটি চাঁদ ছিল।
লাল রঙের গ্রহটি আকারে ডিম্বাকৃতির। গ্রহটি দেখতে পৃথিবীর মতো হলেও এটি নিজের তৃতীয় অক্ষ বরাবর ফুলে ফেপে উঠেছে। ওই গবেষণাপত্র অনুসারে, মঙ্গলের এমন বিকৃত আকারের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে একটি বিশালাকায় চাঁদ।
বিভিন্ন গ্রহকে আবর্তন করা মহাজাগতিক বস্তুগুলো সাধারণত চাঁদ হিসেবে পরিচিতি পায়। এরা আকারে মাত্র কয়েক কিলোমিটার থেকে শুরু করে বেশ কয়েক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।
এর মধ্যে পৃথিবীর চাঁদই সবার কাছে পরিচিত। কিন্তু এর বাইরে সৌরজগতের বৃহত্তম চাঁদ ‘গ্যানিমিড’ থেকে শুরু করে বৃহস্পতি গ্রহের সবচেয়ে ছোট বরফে আবৃত চাঁদ ‘ইউরোপা’ এমনকি মিথেনের হ্রদ থাকা শনি গ্রহের সবচেয়ে বড় চাঁদ ‘টাইটান’ও বেশ আকর্ষণীয়।
এদিকে, মঙ্গল গ্রহেও দুটি চাঁদ আছে; ‘ফোবস’ ও ‘ডিমস’।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউএস নেভাল অবজারভেটরি’র গবেষক মাইকেল এফ্রিমস্কি’র নেতৃত্বে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে মঙ্গল গ্রহে তৃতীয় চাঁদের সম্ভাব্য অস্তিত্ব ছিল কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়টি উঠে এসেছে।
এফ্রিমস্কি’র ব্যাখ্যা অনুসারে, মঙ্গল গ্রহের ত্রিঅক্ষীয় স্বভাব বোঝা যায় এর নিরক্ষীয় উপবৃত্তাকার আকৃতি থেকে, যা সম্ভবত সৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলের পশ্চিম গোলার্ধে থাকা বিশাল আগ্নেয় মালভূমি ‘থারসিস রাইজ’ থেকে।
এ ফুলেফেঁপে ওঠা অংশের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হল, এর অবস্থান থারসিস রাইজের প্রায় বিপরীত প্রান্তে, যা মঙ্গলের পূর্ব গোলার্ধে থাকা বিশাল আগ্নেয়গিরি অর্থাৎ ‘সিরটিস মেজর প্লানাম’ অঞ্চলে অবস্থিত।
গবেষণাপত্র অনুসারে, মঙ্গলের এমন অদ্ভুত ফুলে ফেপে ওঠা আকৃতির পেছনে দুটি ভিন্ন উপাদান কাজ করেছে, যেখানে এর প্রাথমিক আকৃতি তৈরি হয়েছিল তরুণ মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে থাকা বিশাল এক চাঁদের কারণে।
এর অবস্থান এমন এক যুগপৎ কক্ষপথে ছিল, যেখানে মঙ্গলের পৃষ্ঠ সবসময় চাঁদের দিকে মুখ করা। আর মাধ্যাকর্ষণের ক্রমাগত টান থেকে এ ত্রিঅক্ষীয় উপবৃত্তাকার আকৃতির বিবর্তন ঘটেছিল।
এ ত্রিঅক্ষীয় উপবৃত্তাকার আকৃতি দেখতে অনেকটা রাগবি বলে মতো। তবে, এর তিনটি অক্ষের দৈর্ঘ্যে ভিন্নতা ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ অক্ষটি ওই চাঁদের সঙ্গে সারিবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও বাকিগুলো জোয়ারের প্রভাবে কৃত্রিম টান অনুভব করত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মঙ্গল গ্রহের এমন আকৃতি বিকাশে কাজ করা দ্বিতীয় উপাদানটি হচ্ছে এর পৃষ্ঠের নীচে থাকা বিভিন্ন সংবহন প্রক্রিয়া।
এ ত্রিঅক্ষীয় উপবৃত্তাকার আকৃতি বিকাশের পর, মঙ্গল গ্রহের জোয়ারপ্রবণ এলাকাগুলোয় তাপমাত্রা, টেকটনিক প্লেট ও আগ্নেয়গিরির গতিবিধিও বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়া থেকেই ধীরে ধীরে হালের এ ত্রিঅক্ষীয় উপবৃত্তাকার আকৃতি বেড়ে উঠেছে।
এ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মঙ্গলে ম্যাগমার মহাসাগর থাকাকালীন এমন চাঁদের অস্তিত্ব থেকে থাকলে গ্রহটির নিরক্ষরেখায় যে অসমতা ছিল, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।