সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির ছয়টিই লোকসানি। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি গত দুই দশকেও কখনও লভ্যাংশ নিতে পারেনি।
Published : 03 Jul 2023, 04:29 PM
ঈদের ছুটি শেষে দ্বিতীয় কর্মদিবসে লেনদেনের গতি বাড়লেও সব খাতেই দরপতনে পড়ে গেল সূচক।
৫০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১৪৬টির দর হারানোর দিন সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স কমল ১১ পয়েন্ট। আগের দিনের দরে হাতবদল হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ১৭৫।
প্রায় এক বছরের ধারাবাহিকতায় এদিনও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ফ্লোর প্রাইসে।
এদিন সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭১টি কোম্পানি। নানা কারণে লেনদেন স্থগিত তিনটির। একটির লেনদেন হয় না কখনও। ফলে ১৮টি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না।
যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার বেশিরভাই দুর্বল মৌলভিত্তির। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি লোকসানি কোম্পানি। গত এক যুগে লভ্যাংশ দিতে পারেনি, অদূর ভবিষ্যতেও কোম্পানির ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস নেই, এমন কোম্পানিও আছে অনেকগুলো।
সূচকের পতন হলেও বেড়েছে শেয়ার কেনাবেচা। লেনদেন আগের দিনের ৫১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে হয়েছে ৬৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
ফের লেনদেনের শীর্ষে বীমা
এক দিন পরেই লেনদেনের শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে বীমা খাত। এই খাতের দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে জীবন বীমাতেই আগ্রহ বেশি। তবে দুই ধরনের কোম্পানিই দর হারিয়েছে।
জীবন বীমার ১৫টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৯১ কোটি ৯০ লাখ। একটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১১টি। তিনটি কোম্পানি ছিল আগের দিনের দরে।
সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার। এসব কোম্পানির মধ্যে ৫টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৩০টির দর। ৫টি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে। ক্রেতা ছিল না দুটির।
সব মিলিয়ে এই খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ১১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
আগের লেনদেনের শীর্ষে থাকা বস্ত্র খাত আছে পিছু পিছু। এই খাতের ৫৮টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ১১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৯০ কোটি টাকার কিছু বেশি।
লেনদেন বাড়লেও দরপতন দেখেছে বস্ত্র খাতও। আটটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৮ টির দর। ২৯টি কোম্পানি ছিল আগের দিনের দরে।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে লেনদেন হয়েছে ১১১ কোটি টাকার বেশি। এই খাতে আটটি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০টির দর। তিনটি কোম্পানি লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।
এছাড়া কেবল ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
লোকসানে ডুবছে কোম্পানি, শেয়ারদর বাড়ছে
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এমন ১০টি কোম্পানির ছয়টিই লোকসানি। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি গত দুই দশকেও কখনও লভ্যাংশ নিতে পারেনি।
দর বৃদ্ধির সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হওয়া শ্যামপুর সুগার গত মার্চে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান দিয়েছে ৪১ টাকা।
গত ১ মার্চ কোম্পানির শেয়ারদর ছিল ৬৩ টাকা ১০ পয়সা। এখন দাঁড়িয়েছে ১১৫ টাকা ১০ পয়সায়।
১০ টাকার শেয়ারে নয় মাসে ৫ টাকা ৮০ পয়সা লোকসান দেওয়া প্রাইম টেক্সটাইলসের দরও বেড়েছে একই হারে।
মাসের পর মাস ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা না পাওয়া সোনারগাঁও টেক্সটাইল পরপর দ্বিতীয় দিন লেনদেন হলো দর বৃদ্ধির সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে।
চতুর্থ স্থানে থাকা জিলবাংলা সুগার মিলস তিন প্রান্তিকে ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান দিয়েছে ৫২ টাকার বেশি। দর বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।
৬.১৬ শতাংশ দর বেড়ে পঞ্চম স্থানে থাকা সাফকো স্পিনিং মিলসও লোকসানি কোম্পানি। তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৫৫ পয়সা লোকসানে আছে কোম্পানিটি।
ঈদের আগে থেকেই লাগাতার দর বাড়তে থাকা অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজের দর আরও বেড়েছে ৫.৫৫ শতাংশ। টানা চার বছর ধরে লোকসান দেওয়া কোম্পানিটি এবার তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ১ টাকা ১১ পয়সা।
নবম স্থানে থাকা লিগ্যাসি ফুটওয়্যারও লোকসানি কোম্পানি। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪.৪৭ শতাংশ।
স্বল্প মূলধনী রহিমা ফুড, সি পার্ল এবং মুন্নু অ্যাগ্রোও ছিল দর বৃদ্ধির শীর্ষে।
আগের দিনের ‘রাজা’ এবার পতনের শীর্ষে
আগের দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা বেশ কিছু কোম্পানি ছিল দরপতনের শীর্ষে।
সবচেয়ে বেশি ৭.৫৬ শতাংশ দর হারিয়েছে জাহিন স্পিনিং মিলস। সিএনএ টেক্সটাইলের দর কমেছে ৬.১৪ শতাংশ।
পেসিফিড ডেনিম, ইভিন্স টেক্সটাইলস, মেঘনা লাইফ, সেন্ট্রাল ফার্মা, জেনারেশন নেক্সট, কেয়া কসমেটিসন, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জাহিন টেক্সটাইলও ছিল এই তালিকায়।
এসব কোম্পানির দর ৫.৬৬ শতাংশ থেকে ৪.২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।