বস্ত্রের পর ‘ঘুম ভাঙল’ সিমেন্টের, উত্থানে ফিরল পুঁজিবাজার

সূচক ১১ পয়েন্ট বৃদ্ধির দিনে দর বেড়েছে ৮৭টি কোম্পানির; হাতবদল হয়েছে ৮৩১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 09:34 AM
Updated : 9 May 2023, 09:34 AM

বস্ত্র খাতের পর এবার সিমেন্ট খাতের শেয়ারে আগ্রহ বাড়তে দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পর লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টের দারুণ প্রান্তিক প্রতিবেদন এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ খাতের সাতটি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি টাকারও বেশি। আর এই লেনদেনের মধ্যে ৫৬ কোটি টাকার বেশি হয়েছে লাফার্জ হোলসিমে।

টাকার অংকে লেনদেনের হিসাবে এ খাতটি অবশ্য চতুর্থ স্থানে ছিল।

লেনদেনের শীর্ষে ছিল ১১টি কোম্পানিকে নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এই খাতে হাতবদল হয়েছে ১১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার

বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর নিয়ে তুমুল আলোচনা থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। এই খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি টাকার বেশি।

ওধুষ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয়েছে ৯০ কোটি টাকার বেশি। এটি ছিল লেনদেনের আগ্রহের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে।

আগের দিন ‘ঘুম ভেঙে’ শত কোটি টাকার বেশি লেনদেন হওয়া বস্ত্র খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। আগের দিন এক শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল এই খাতের লেনদেন।

সার্বিক দিক দিয়ে বিনিয়োগকারীদের খারাপ যায়নি দিনটি। ১১ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির দিন দর বেড়েছে ৮৭টি কোম্পানির, হারিয়েছে ৫৭টি আর ২০৯টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।

সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৩৫৩টি কোম্পানির শেয়ার। ৩৭টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।

সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৮৩১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৭৬০ কোটি টাকার কিছু কম। 

সিমেন্ট খাতের ‘মন্দা’ কাটছে

আগের দিন লাফার্জ হোলসিমের পর্ষদ সভায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৬২ পয়সা করে ১৯০ কোটি টাকার বেশি আয়ের তথ্য জানিয়েছে। আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল অর্ধেক।

এই হিসাব প্রকাশের পর লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে কোম্পানিটি। হাতবদল হয় ৮০ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৯টি শেয়ার।

তবে বিপুল পরিমাণ শেয়ার হাতবদল হলেও দাম বাড়েনি খুব একটা। আগের দিনের দরের চেয়ে ৮০ পয়সা যোগ হয়েছে কেবল।

গত ৩০ এপ্রিল থেকে এ কোম্পানির শেয়ারে আগ্রহ দেখা দেয়। এর আগে ফ্লোর প্রাইসেও এর ক্রেতা ছিল না বললেই চলে।

লাফার্জের আগে বিনিয়োগকারীদের ‘সুসংবাদ’ দিয়েছে আরেক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। ২০২২ সালে শেয়ার প্রতি চার টাকার বেশি লোকসানের তথ্য জানালেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেই শেয়ার প্রতি ৬ টাকা ৮৫ পয়সা আয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে পরিচালনা পর্ষদ।

এ খবরে ১০ কর্মদিবসেরও কম সময়ে শেয়ারদর ১৭৯ টাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ টাকা ছুঁয়ে ফেলে।

এর আগে ক্রাউন সিমেন্ট এবং প্রিমিয়ার সিমেন্টও আয় বৃদ্ধির তথ্য জানিয়েছে। কেবল মেঘনা সিমেন্টের আয় কমেছে আর আরামিট সিমেন্টের লোকসান বেড়েছে। কনফিডেন্স সিমেন্ট এখনও তৃতীয় প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করেনি।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি

এ তালিকার শীর্ষে ছিল মিডল্যান্ড ব্যাংক, যার দর সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশ ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। আগের দিন দর ছিল ১৪ টাকা, বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা।

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন কেবলসের দরও বেড়েছে একই হারে। আগের দিন ছিল ১৮৭ টাকাঠ ১৮ টাকা ৭০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছ ২০৫ টাকা ৭০ পয়সা।

গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা লোকসান দেখানোর পর আর হিসাব প্রকাশ না করা মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে। দর বেড়েছে ৯.৮৪ শতাংশ।

এছাড়া ইনটেক অনলাইনের দর ৮.৮১ শতাংশ, দর সংশোধন হতে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার দর ৮.৭১ শতাংশ, লোকসানে ডুবে যাওয়া আরামিট সিমেন্টের দর ৮.২২ শতাংশ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭.৪৫ শতাংশ, সংশোধনে থাকা এডিএন টেলিকমের দর ৬.৯১ শতাংশ, মেয়াদ ফুরাতে থাকা জিবিবি পাওয়ারের দর ৫.৮৪ শতাংশ এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫.৭৮ শতাংশ।

শীর্ষ দলের বাইরে আরও ছয়টি কোম্পানির দর ৫ শাতংশের বেশি, আটটির দর যথাক্রমে ৪ ও ৩ শতাংশের বেশি, ছয়টির দর দুই শতাংশের বেশি এবং ২২টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।

পতনের শীর্ষে যেসব কোম্পানি

সবচেয়ে বেশি ৫.৪৫ শতাংশ দর হারিয়েছে পাট খাতের সোনালী আঁশ।

এই তালিকার শীর্ষ দশের বাকি কোম্পানিগুলো প্রায়ই দর বৃদ্ধির শীর্ষস্থানে উঠে আসে। কিন্তু পরেই আবার কমে। শেয়ার বিক্রির উপযোগী হওয়ার আগেই দাম কমে আসায় বিনিওয়াগকারীরা লোকসানে পড়ছেন।

এর মধ্যে খান ব্রাদার্স ৫.০৭ শতাংশ, জাহিন স্পিনিং মিলস ও ইভিন্স টেক্সটাইল ৪.৫৪ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৩.৮৫ শতাংশ, নাভানা ফার্মা ৩.৩২ শতাংশ, আগের দিন ১০ শতাংশ দর বেড়ে যাওয়া জেনারেশন নেক্সট ৩.০৩ শতাংশ, জিলবাংলা সুগার মিলস ২.৯৫ শতাংশ, ইউনিলিভার ২.৭৪ শতাংশ এবং ইয়ানিক পলিমার ২.৭০ শতাংশ দর হারিয়েছে।

আরও ছয়টি কোম্পানির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ১৬টি কোম্পানি দর হারিয়েছে এক শতাংশের বেশি।