দরপতনে ‘ভয়’: ডিএসই সূচক ফের ৭ হাজারের নিচে

টানা উত্থানের পর মূল্য সংশোধন দীর্ঘ হলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ‘ভীতি’ থেকে শেয়ার বিক্রির হিড়িকে আরও বড় দরপতন হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2021, 01:41 PM
Updated : 25 Oct 2021, 01:41 PM

সোমবার একদিনে সূচক কমেছে ১২০ পয়েন্ট, লেনদেনের এক পর্যায়ে যা নেমেছিল ১৬০ পয়েন্টেরও বেশি।

এদিন লেনদেনের শেষ দিকে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম গত কয়েকদিনের মধ্যে অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা বাড়লে আরও বড় দরপতনের হাত থেকে রক্ষা পায় বাজার।

শেষ আধঘণ্টায় কিছু শেয়ারের দাম বাড়ায় হারানো পয়েন্টও কিছুটা ফিরে পায় প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স।

এরপরও দিন শেষে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ দরপতনের হার ছিল ছয় মাস ২১ দিনের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ। এতে এক মাস ২০ দিন পর ৭ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে গেল ডিএসই সূচক।

এর আগে এর চেয়ে বেশি পতন হয়েছিল চলতি বছরের ৪ এপ্রিল। সেদিন ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছিল ডিএসই সূচক।

এদিন চট্টগ্রামের পুঁজিবাজার সিএসইতেও বড় দরপতন হয়েছে। এ বাজারের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪০০ দশমিক ৮০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২০ হাজার ১৬৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে।

এদিকে ডিএসই সূচক গত ৬ জুলাই ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে ছিল, যা একপ্রকার টানা বেড়ে ১০ অক্টোবর ২৩ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ১ হাজার ৩৯২ পয়েন্ট বেড়ে ৭ হাজার ৩৫০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। এরপর থেকে আবার টানা পতনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ৬ শতাংশ কমে তা সোমবার ৭ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়।  

দিন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৮৮৫ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। এ সপ্তাহের প্রথম দুই দিনের বড়পতনে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ১০ দিনের মধ্যে ৯ দিনই সূচক কমেছে ঢাকার পুঁজিবাজারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুনাফা তুলে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু দর সংশোধনের প্রবণতা এক পর্যায়ে আরও কমবে শেয়ারদর এমন আশঙ্কায় টানা দরপতনে রূপ নেয়।

এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গুজব ও গুঞ্জণ যোগ হলে বিনিয়োগকারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে কার হাতে থাকা শেয়ার কে আগে বিক্রি করবেন এমন প্রতিযোগিতা থেকে বিক্রির হিড়িকে দরপতন দীর্ঘ হয়।

ব্রোকারেজ হাউস রশিদ ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ রশিদ লালীও মনে করেন সূচকের টানা উত্থানের পর শুরু হওয়া মূল্য সংশোধনে বিনিয়োগকারীরা ভয় পেয়ে গেছেন। তার ভাষ্য, সব মিলিয়ে পতনটি একটু বেশি হয়েছে।

তার মতে, “সূচক যা কমার তা কমে গেছে, আর সামান্য কমতে পারে। দুই একদিনের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে।”    

এমন পতনের পেছনে গুজবও কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক এই সভাপতি।

তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার ফেলে দেওয়ার জন্য কিছু গুজব কাজ করেছে। বিএসইসি এর মধ্যে শনাক্ত করেছে কারা গুজব ছড়িয়েছে।”

জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এর কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “দেশের পুঁজিবাজার খুব কম সময়ে বেড়েছিল বলে এই পতন খুব স্বাভাবিক। এখন ভয় পেয়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পরবেন। আমি মনে করি খুব কম সময়ে পুঁজিবাজার ঘুড়ে দাঁড়াবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পতনটা একটু বেশি হয়েছে। তবে এটা ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির এমন কোনো পরিবর্তন হয় নাই যে, পুঁজিবাজার কমে যাবে।”

এদিকে পুঁজিবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে বেলা দেড়টার সময় মতিঝিলে ডিএসইর পুরনো ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন কিছু বিনিয়োগকারী।

এদিন সূচকে বড়পতন হলেও লেনেদেনে খুব একটা হেরফের হয়নি। ঢাকার বাজারে এদিন এক হাজার ৪৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের কর্মদিবসে ছিল ১ হাজার ৪৭১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

সোমবার ডিএসতে ৮১ দশমিক ৬০ শতাংশের দাম কমেছে। এর বিপরীতে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশের দাম বেড়েছে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম।

এ বাজারে লেনদেন হওয়া ৩৭৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪৭টির। কমেছে ৩০৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দর।

ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ২২ দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪৬৫ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।

ডিএস৩০ সূচক ৫৩ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।

লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি

ডেল্টা লাইফ, বেক্সিমকো লিঃ, ফরচুন সুজ, ওরিয়ন ফার্মা, বিএটিবিসি, স্কয়ার ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, আইএফআইসি, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও এনআরবিসি ব্যাংক।

দাম বাড়ার তালিকায় শীর্ষ ১০টি

শেফার্ড  ইন্ডাস্ট্রিজ, সিভিও পিআরএল, ফু-ওয়াং সিরামিকস, সোনালি পেপার, ফরচুন সুজ, ন্যাশনাল ফিডস, ম্যাকসন স্পিনিং, বিবিএস কেবলস, মেট্রো স্পিনিং ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

সবচেয়ে বেশি দর হারানো ১০টি কোম্পানি

ওএএল, সামিট পাওয়ার, ডিএসএসএল, ইসলামিক ফাইন্যান্স, টুংহাই, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, মেঘনা পিইটি, তাল্লু স্পিনিং, এস আলম কোল্ড ও জাহিন স্পিনিং।

সোমবার সিএসইতে ২৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ২৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির দর।

এদিন চট্টগ্রামের এ বাজারে সূচক কমলেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ২১ দশমিক ২১ শতাংশ বা ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা বেড়েছে।

মোট ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৪৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।