কারিগরি ত্রুটির কারণে সোমবার ডিএসইর লেনদেন বন্ধ ছিল ৩ ঘণ্টার বেশি সময়।
Published : 25 Oct 2022, 01:31 AM
বারবার লেনদেনে বিঘ্ন ও বন্ধের ঘটনায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর প্রযুক্তি ব্যবস্থার সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
হঠাৎ কারিগরি ত্রুটির কারণে সোমবার তিন ঘণ্টার বেশি সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন বন্ধ থাকার পর পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কমিশন। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
লেনদেন ব্যবস্থাসহ প্রযুক্তি ব্যবস্থার দুর্বলতায় পেছনে কারও দায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও কমিশন ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এর আগেও ডিএসইর লেনদেন ব্যবস্থায় টেকনিক্যাল প্রবলেম (কারিগরি ত্রুটি) দেখা দিয়েছে। বারবার কেন এমন হচ্ছে, এর কারণ বের করতে ডিএসইর আইটি সিস্টেমের সার্বিক সক্ষমতা ও লেনদেন ব্যবস্থার কার্যক্রম যাচাই করে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা করা হয়েছে। এর সঙ্গে কেউ জড়িত আছে কি না তাও দেখবে কমিটি।
“যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কমিশন। লেনদেন বন্ধ থাকলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন বিধায় বিষয়টি কমিশন খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে “
পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসানকে।
সার্ভারে গোলযোগ দেখা দেওয়ায় দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে সোমবার দিনের অর্ধেক সময়ও লেনদেন হতে পারেনি।
ডিএসইতে বন্ধ থাকলেও সিএসইতে যথারীতি সাড়ে নয়টা থেকে শেষ পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।
লেনদেন ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ২০২১ সালের ১৮ জুলাইতেও লেনদেন বন্ধ রেখেছিল ডিএসই।
লেনদেন ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ২০২১ সালের ১৮ জুলাইতেও লেনদেন বন্ধ রেখেছিল ডিএসই। এর আগে কারিগরি ত্রুটির কথা জানিয়ে ২০১৫ সালের ২৪ মে কয়েক ঘণ্টা দেরি করে লেনদেন শুরু হয়েছিল এ বাজারে। এরপর গত কয়েক বছরে একাধিকবার ট্রেডিং সফটওয়্যার সমস্যা করেছে।
চলতি বছরেও এর আগে একবার ডিএসইর ব্যবহৃত ট্রেডিং সফটও্যয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় নিয়েছিল। ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অফিস খোলা রাখতে হয়েছিল লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট করতে।
এদিকে কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইতে দিনের অর্ধেক সময়ও লেনদেন করতে না পারায় ক্ষতির কথা জানিয়েছেন ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা।
ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল আনাম সোহেল বলেন, “প্রতিদিন আমার প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ লেনদেন হয়, আজ তার ১০ ভাগ হওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যায়। দিনের লেনদেনের পিক আওয়ারে লেনদেন বন্ধ হয়। এতে নতুন করে অনেক বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে পারেননি।“
লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী খন্দকার সাফ্ফাত রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বাভাবিকের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ লেনদেন সম্পন্ন করা গেছে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সুযোগগুলো ব্যবহার করা যায়নি।’’
তবে ঠিক কী কারণে এ সমস্যা তৈরি হল, সে বিষয়ে ডিএসইর স্পষ্ট কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।
ডিএসইর জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মো. শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ডিএসইর নিজস্ব আইটি টিম ও সার্ভার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাসডাক যৌথভাবে ত্রুটি বের করে তা সমাধান করেছে।’’
লেনদেন বিঘ্নের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ বলেছে, “ট্রেডিং সিস্টেমে কারিগরি সমস্যার কারণে সোমবার বেলা ১০টা ৫৮ মিনিটে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ডিএসইর আইটি ও সার্ভার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাসডাক টিমের যৌথ প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান শেষে ২টা ১০ মিনিটে পুনরায় লেনদেন শুরু হয়, যা বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে।”
কারিগরি ত্রুটির এই দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। অপর দুটি সূচক ডিএসইএস ১৪ দশমিক ২৭ ও ডিএস৩০ ১৬ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট হারিয়েছে।
মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার, যা আগের দিন ছিল ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১৮টির, কমেছে ৮২টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২১৫টির, যেগুলোর প্রায় সবই ফ্লোর প্রাইসে ঘুরপাক খাচ্ছে।