তিন নতুনের স্বপ্ন এবং কাবরেরার ভাবনা

ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ম্যাচের দলে রাখা তিন নতুন মুখকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Feb 2024, 10:51 AM
Updated : 29 Feb 2024, 10:51 AM

জাতীয় দলের তিন নতুন মুখের একজন কাজেম কিরমানি শাহ, যিনি সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর ছেলে। অন্যজন তাজ উদ্দিন, যিনি জাতীয় দলের হয়ে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গোল করা সাদ উদ্দিনের ছোট ভাই। তৃতীয় জন রাব্বি হোসেন রাহুল, যার পেছনে আছে পোড় খাওয়া অতীত! এই তিন তরুণই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় খুলে দিলেন মনের আগল।

প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার রোমাঞ্চ সঙ্গী তিন জনেরই এবং তিন জনই নির্ভার। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে যে ঝলক দেখিয়ে অর্জন করেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরার আস্থা, সেই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে লাল-সবুজের জার্সিতে আলো ছড়াতে উন্মুখ হয়ে আছেন তারা।

কোচ কাবরেরাও তিন নতুনকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী। বাফুফে ভবনে বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দল নিয়ে কথা বলতে এসে কাজেম, রাহুল ও তাজকে বেছে নেওয়ার কারণ জানালেন এই স্প্যানিশ কোচ।

পুলিশ এফসির হয়ে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম পর্বে ৯ ম্যাচের সবগুলোতেই খেলেছেন কাজেম। ২৫ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার লিগে জালের দেখাও পেয়েছেন একবার। ফেডারেশন কাপেও শেখ জামাল ধানমন্ডির বিপক্ষে গোল করেছিলেন একটি। মাঝমাঠে দ্যুতি ছড়ানোর পাশাপাশি গোল করায় পারদর্শী কাজেমকে চোখে চোখে রেখেছিলেন বলে জানালেন কাবরেরা।

“কাজেমকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চোখে রেখেছিলাম, গত বছর যখন থেকে সে পুলিশ এফসিতে যোগ দিয়েছিল, তখন থেকে। এরপর আমরা তার কিছু ট্রেনিং সেশন দেখেছিলাম, যেটা আমাদেরকে ভীষণ মুগ্ধ করেছিল। আমাদের মনে হয়েছিল, আমাদের যে ধরন, ফুটবল খেলার যে দর্শন, তার সঙ্গে সে মানানসই।”

“দেড় মৌসুম পুলিশ এফসির হয়ে খেলার পর …এর আগেও তাকে আমরা ডাকার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু চোট পাওয়ার কারণে ক্যাম্পের দলে ডাকতে পারেনি। এখন তার সামনে সুযোগ। তাকে নিয়ে আমরা ধীর পদক্ষেপে এগোব। আশা করি, সে দলের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নেবে।”

কাজেমও আশাবাদী নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে। বাবা হালিম শাহ ক্রিকেটার ছিলেন বলে কোনো চাপ অনুভব করছেন না তিনি। জানালেন, নির্ভার থেকে সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার মানসিকতা তার সহজাত।

“আমি নিজের ওপর অতিরিক্ত চাপ নেই না। বাবাও কখনও চাপ দেননি। সহজাতভাবেই আমি খেলাধুলায় এসেছি, ফুটবল খেলছি। এখন যে কাজটা করছি, সৌদি আরবের ক্যাম্পেও একই চেষ্টা অব্যাহত রাখব। বিষয়গুলো নিয়ে আমি খুব বেশি ভাবি না, চাপও নেই না। নিজের যেটা স্বাভাবিক, সেটাই করার চেষ্টা করি।”

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলা তাজের পজিশনে বর্তমান দলে আছেন বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়ার মতো অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্যরা। এই ২১ বছর বয়সীকেও মনে ধরেছে কাবরেরার।

“সে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হয়ে খেলেছে গত মৌসুমে। এবার শেখ জামালের হয়ে সবশেষ তিন ম্যাচে বেশি সময় খেলতে পারেনি, কিন্তু আগের ম্যাচগুলোতে সে যে মান দেখিয়েছে, দলের সঙ্গে আশা করি সে মানিয়ে নিতে পারবে। এর আগেও এশিয়ান গেমসের দলে সে ছিল, কিন্তু চোটের কারণে খেলতে পারেনি।”

তাজ এবার সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। যদিও চোটের কারণে সাদ উদ্দিনের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, কিন্তু বড় ভাইয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতীয় দলে খেলার সম্ভাবনায় দারুণ রোমাঞ্চিত তিনি।

“আলহামদুলিল্লাহ, খুবই ভালো লাগছে। তবে চাপ নিচ্ছি না। কখনও কল্পনাও করিনি, বড় ভাইয়ের সাথে জাতীয় দলে খেলব, কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি লিগে ভালো খেলার। সে কারণেই হয়ত কোচের চোখে পড়েছে, আমাকে ডেকেছে। আমরা দুই ভাই এখন জাতীয় দলে-অবশ্যই খুব আনন্দের। এখন আমাকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বলতে পারেন বাড়িতে ঈদের আনন্দ-উৎসব চলছে।”

লিগ টেবিলে ব্রাদার্স ইউনিয়ন আছে তলানিতে। কিন্তু বিবর্ণ দলটির আক্রমণভাগে আলো ছড়িয়েছেন রাহুল। ৯ ম্যাচে ৫ গোল করা ১৭ বছর বয়সী এই তরুণ নাকি শুরুতে কাবরেরার ভাবনাতেই ছিল না!

“সত্যি বলতে রাহুল এ মৌসুমের শুরু থেকে আমাদের স্কাউটিংয়ের নজরে ছিল না। এরপর সে আস্তে আস্তে ভালো পারফরম্যান্স করতে শুরু করল। এবং লিগের প্রথম পর্বে আট জন ৫ বা তার বেশি গোল করেছে, তাদের মধ্যে সে একজন। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় দলের অনুশীলনের আবহে থাকাটা তার প্রাপ্য। এরপর দেখব, এত অল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে সে আমাদের কী দিতে পারে।”

‘লম্বা সময় ধরে জাতীয় দলকে দিতে এসেছি’, প্রত্যয়ী কণ্ঠে বললেন রাহুল। গত বছর বাবাকে হারিয়ে একসময় হতাশায় ফুটবলকে বিদায় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাবা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করেছেন তিনি। যশোরের স্থানীয় কোচ সাব্বির আহমেদ পলাশের পরিচর্যায়, নিজের প্রচেষ্টায় কঠিন সময়কে পেছনে ফেলে এখন শুধু সামনের দিকেই তাকাতে চান রাহুল।

“এই আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রতিটি খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলারও। আমি তার ব্যতিক্রম না। যেহেতু প্রথমবার ক্যাম্পে যাচ্ছি, বয়সও অল্প, একটু চাপ তো অনুভব করছিই। তবে আমার যারা কোচ আছেন, সাব্বির আহমেদ পলাশ বা আরও যারা আছেন, তারা নানা উপদেশ দিচ্ছেন; সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করছি।”

“আমি বসুন্ধরা কিংসের প্লেয়ার, ধারে খেলছি ব্রাদার্সে, কিংসে জাতীয় দলের অনেকে আছেন। তাদের সঙ্গেই ট্রেনিং করেছি, এই বিপিএলে তাদের বিপক্ষে খেলেছি, গোলও করেছি, তো এই ব্যাপারগুলো আমি আগে থেকেই জানি। তাই প্রথম ডাক পাওয়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

এখন শুধু স্বপ্নপূরণের পথ ধরে ছুটে যেতে চান রাহুল।

“জাতীয় দলে জায়গা পাকা করার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। কিন্তু আমি যে জায়গা থেকে উঠে এসেছি, আমার কোচ যেভাবে আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন বা আমি যেভাবে স্বপ্ন দেখছি নিজেকে নিয়ে…আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিল আমি জাতীয় দলে খেলব, তিনি গত বছর মারা গেছেন…বাবা দেখে যেতে পারলেন না, আমি জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছি…এগুলো ভাবতে গেলে আমার মনে হয়, যেভাবেই হোক সবার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাকে জাতীয় দলে খেলতেই হবে, যতদিন সম্ভব দেশকে সর্বোচ্চটা দিতে হবে।”