নারীদের জন্য নিরাপদ বিশ্বকাপ

অনেক দেশ থেকে আসা নারী সমর্থকরা বলছেন কাতারে তারা খুবই নিরাপদ বোধ করছেন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2022, 12:51 PM
Updated : 6 Dec 2022, 12:51 PM

কাতার বিশ্বকাপে যেখানে-সেখানে অ্যালকোহলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আগে থেকেই ছিল। আসর শুরুর আগে স্টেডিয়াম অ্যারেনায়ও তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হলে কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে আয়োজকরা। বিশ্বকাপটি ঘিরে এমন সব নানা নেতিবাচক খবরের মাঝে এবার কিছু ইতিবাচক দিকও প্রকাশ হতে শুরু করেছে। এই যেমন, অনেক দেশ থেকে আসা নারী সমর্থকরা বলছেন কাতারে তারা খুবই নিরাপদ বোধ করছেন। 

বিশ্বকাপের আয়োজক স্বত্ব কাতার পাওয়ার পর থেকেই ফিফার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু সমালোচনা। মুসলিম কট্টরপন্থী ছোট্ট দেশটিতে এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্তে ঘোরবিরোধী ছিলেন মূলত ইউরোপিয়ানরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে থাকে। 

আসর শুরুর আগের কয়েক বছরে নিয়মিত খবর হতো কাতারে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কাজ করা শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক আচরণ। আসর শুরুর আগে আগে যা বিস্তার লাভ করে সমকামিতার প্রতি দেশটির কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি ও আইন এবং সবশেষ ফুটবল-যজ্ঞ মাঠে গড়ানোর আগে আগে স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত। 

তবে ফুটবলের লড়াই মাঠে গড়াতেই আশেপাশের সব নেতিবাচক খবর পেছনে পড়ে যেতে শুরু করে। তারই ফাঁক গলে এবার যেমন মিলল ভালো কিছু। 

এলি মলোসন নামে এক ইংল্যান্ড সমর্থকের কাছে, এখানে যে এতটা নিরাপদ বোধ করবেন, ভাবেননি তিনি।

“আমার ধারণা ছিল, মেয়েদের জন্য এটা ভয়ানক জায়গা। জানতাম না যে এখানে আমি এতটা নিরাপদ থাকব…দেশটিতে ভ্রমনে যাওয়া একজন নারী সমর্থক হিসেবে আমি বলতে পারি যে আমি খুব নিরাপদ বোধ করেছি।” 

ফুটবলে ‘সেক্সিজম’ দূর করতে কাজ করা ‘হারগেমটু’ নামের একটি ক্যাম্পেইনের দূত হিসেবে কাজ করেন মলোসন। তারই অংশ হিসেবে তিনি ছিলেন কাতারেও। তবে রক্ষণশীল একটা দেশে মেয়েকে একা ছাড়তে কিছুতেই রাজি ছিলেন না মলোসনের বাবা, তাই তিনিও সঙ্গে যান। কিন্তু পরে দেখা যায়, এটার কোনো দরকারই ছিল না। 

১৯ বছর বয়সী মলোসন বলেছেন, অ্যালকোহল পানে রাশ টানার সিদ্ধান্ত একটা জায়গায় দারুণ কাজে লেগেছে, আর সেটা হলো বিশ্বকাপ প্রাঙ্গনে তুলনামূলক কম বাজে পরিস্থিতির দেখা মিলেছে। তার মতে, এখানকার সবকিছুই বেশ সাংস্কৃতিক, সুন্দর।  

“আমার মনে হয়, সামাজিকভাবে (কাতার) রক্ষণশীল হওয়ার কারণেই এমন নিয়ম (এখানে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ)। আমার মতে, অ্যালকোহল মানুষকে কিছুটা উগ্র করে তোলে, একে অপরের মাঝে সমস্যার সৃষ্টি করে এবং এ কারণে যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনাও ঘটে।” 

“সবার মধ্যে বন্ধুভাবাপন্ন কথাবার্তা, হাসি-কৌতুক পছন্দ করি। সুন্দর আবহ ভালোবাসি-এসব এখানে খুব বেশি পাবেন না। তবে এখানকার পরিবেশ আরও আনন্দদায়ক, অনেক বেশি সহায়ক পরিবেশ… তবে ইংল্যান্ডের মতো পরিবেশ এখানে পাবেন না।” 

২১ বছর বয়সী আর্জেন্টিনা ভক্ত আরিয়ানা গোল্ড রয়টার্সকে জানান, মধ্যপ্রাচ্যে সফরের আগে তিনি খুব নার্ভাস ছিলেন, কেননা জানতেন না এখানকার পরিবেশ কেমন হবে।  

“নারীদের জন্য এখানকার পরিবেশ খুব ভালো। আমি ফুটবল খুব ভালোবাসি। দেশে থাকতে আমার ধারণা ছিল, কাতার হয়তো কেবল পুরুষদের জন্য (নিরাপদ) এবং হয়তো মেয়েদের জন্য এখানে হয়তো ঠিক স্বস্তিকর পরিবেশ নয়। কিন্তু না, আমি এখানে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে আছি এবং এখানকার সবকিছু খুব ভালো।” 

কাতারে পানশালা ও হোটেলে অ্যালকোহল পাওয়া যাচ্ছে, তারপরও ফুটবলের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে যেভাবে অ্যালকোহল পান করতে দেখা যায়, এখানে তা নয়। 

ইংলিশ সমর্থক এমা স্মিথও বেশ খুশি কাতারে এসে। 

“এখন পর্যন্ত এখানকার আবহ খুব ভালো, যদিও অ্যালকোহল পানে বাধা আছে এবং এ ব্যাপারে সবাই বেশ সংবেদনশীল। বিষয়টার সঙ্গে সবাই মানিয়ে নিচ্ছে এবং সবাই খুশি।”

এখানকার পরিবেশ কি নিরাপদ? এমন প্রশ্নের জবাবে শেফিল্ড থেকে আসা ৩৩ বছর বয়সী এমা বললেন, “হ্যাঁ অবশ্যই, অবশ্যই…কারণ এখানে কোনো অ্যালকোহলজনিত সমস্যা নেই, খুবই নিরাপদ।”