প্রথমার্ধে যেন মাঠে খুঁজেই পাওয়া গেল না জাপানকে। তারাই বিরতির পর ফিরে এলো ভিন্ন চেহারায়। তিন মিনিটের মধ্যে স্পেনের জালে বল পাঠাল দুইবার। আরেকটি দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে স্মরণীয় জয় তুলে নিল এশিয়ার দেশটি। উঠে গেল বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে ২-১ গোলে জিতেছে জাপান। শুধু শেষ ষোলোর টিকেটই নয়, গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে তারাই।
একই সময়ে শুরু আরেক ম্যাচে কোস্টা রিকার বিপক্ষে ৪-২ গোলে জিতেও টানা দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে জার্মানি। তাদের সমান ৪ পয়েন্ট হলেও গোল পার্থক্যে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছে স্পেন।
শীর্ষে জাপানের পয়েন্ট ৬, সবার নিচে কোস্টা রিকার ৩।
শেষ রাউন্ডে চার দলই মাঠে নামে নকআউটে যাওয়ার সম্ভাবনায়, একই সঙ্গে ছিটকে পড়ার শঙ্কায়ও। ভাগ্য নিজেদের হাতে রেখে পরের ধাপে যেতে স্পেনের প্রয়োজন ছিল শুধু হার এড়ানো।
সের্হিও বুসকেতসের ভুলে অষ্টম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় জাপান। দুরূহ কোণ থেকে জুনিয়া ইতোর শট লাগে পাশের জালে।
দশম মিনিটে দানি ওলমোর ক্রসে ডি-বক্সে মোরাতার দুর্বল হেডে সহজেই বল ধরে ফেলেন গোলরক্ষক শুইচি গোন্দা।
পরের মিনিটেই দলকে এগিয়ে নেন মোরাতা। সেসার আসপিলিকুয়েতার ক্রসে ছয় গজ বক্সে লাফিয়ে হেডে গোলটি করেন আতলেতিকো মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড।
গ্রুপে স্পেনের তিন ম্যাচেই একবার করে জালের দেখা পেলেন তিনি। আগের দুই ম্যাচে গোল করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে।
জাতীয় দলের হয়ে ৬০ ম্যাচে তার গোল হলো ৩০টি।
প্রথমার্ধের বাকি সময়েও আধিপত্য ধরে রাখে স্পেন। বিরতির আগে ৮৩ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য পাঁচটি শট নেয় তারা, যার তিনটি ছিল লক্ষ্যে। জাপানের দুই শটের দুটিই লক্ষ্যভ্রষ্ট।
সেই জাপান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে এগিয়ে যায়।
৪৮তম মিনিটে প্রথম গোলে যথেষ্ট দায় আছে স্পেনের রক্ষণের। আলগা বল পেয়ে ইতো খুঁজে নেন রিতসু দোয়ানকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি নামা এই মিডফিল্ডারের শট গোলরক্ষক উনাই সিমোনের হাত ছুঁয়ে জালে জড়ায়।
আসরে জার্মানির বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয়েও দলের প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি।
পরের গোলের উৎসও দোয়ান। ডান দিক থেকে তার নিচু শট চলে যাচ্ছিল বাইরে। বাইলাইনের ওপর থেকে ক্রস দেন কাওরো মিতোমা, আর কাছ থেকে হাঁটুর টোকায় জাল খুঁজে নেন আও তানাকা।
শুরুতে অবশ্য গোল দেননি রেফারি। টিভিতে রিপ্লে দেখে মনে হচ্ছিল, বল বাইলাইন পেরিয়ে গেছে। ভিএআরের সাহায্যে শেষ পর্যন্ত গোলের বাঁশি বাজান তিনি।
৭০তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন তাকুমা আসানো। ওয়ান-অন-ওয়ানে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন তিনি।
ঠিক ওই মুহূর্তে আরেক ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কোস্টা রিকা। পয়েন্ট টেবলে শীর্ষ দুইয়ে তখন জাপান ও কোস্টা রিকা, জার্মানি ও স্পেনের সামনে বিদায়ের শঙ্কা।
অবশ্য তিন মিনিট পর জার্মানি সমতা ফেরালে টেবিলে দুইয়ে উঠে আসে স্পেন।
শেষ দিকে কিছু সুযোগ পেয়েছিল স্প্যানিশরা। দুটি দারুণ সেভ করে জাপানের ত্রাতা গোন্দা। শেষের বাঁশি বাজতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে তারা।
এই বিশ্বকাপে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানো রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছে জাপান। প্রথম ম্যাচে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষেও প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। বিরতির পর আট মিনিটে দুই গোলে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় দলটি।
পরের ম্যাচে কোস্টা রিকার কাছে তারা হেরে যায় ১-০ গোলে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবার তারা দেখাল চমক, একইভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে হারাল ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে।
স্প্যানিশদের বিপক্ষে জাপানের প্রথম জয় এটিই। এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। ২০০১ সালের ওই প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছিল স্পেন।
শেষ ষোলোয় আগামী সোমবার ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলবে জাপান। পরদিন স্পেন লড়বে মরক্কোর বিপক্ষে।