৬০ বছরের ইতিহাস পাল্টে দিতে পারবে ফ্রান্স?

অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে চোখ গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2022, 05:15 PM
Updated : 4 Oct 2022, 05:15 PM

আক্রমণভাগ তারকায় ঠাসা। মাঝমাঠে অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের দারুণ মিশেল। রক্ষণেও আছে ভরসার কিছু নাম। ছোটখাট কিছু ‘কিন্তু’ বাদে ফ্রান্স দলটি দারুণ সম্ভাবনাময়। তবে ওই কিন্তুগুলো হয়ে উঠতে পারে বড় দুর্ভাবনার; গত দুই ফিফা উইন্ডোতে তাদের পারফরম্যান্স ছিল বড্ড বিবর্ণ। অবশ্য সেসব মলিনতা ঝেড়ে ফেলতে পারলে কাতার বিশ্বকাপে আলোই ছড়াবে দিদিয়ের দেশমের দল। 

আর এসব সম্ভাবনার দোলাচলের মাঝেই উঁকি দিচ্ছে একটি প্রশ্ন-৬০ বছরের ফুটবল ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে কি ফরাসিরা পারবে বিশ্বসেরার মুকুট ধরে রাখতে? সবশেষ যে কীর্তি গড়েছিল ব্রাজিল; ১৯৫৮ ও ১৯৬২ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। 

গত বছর নেশন্স লিগ জয়ের পর ২০২২ এর প্রথম আন্তর্জাতিক বিরতিতে মার্চের দুটি প্রীতি ম্যাচেও জিতেছিল ফ্রান্স। কিন্তু পরের ফিফা উইন্ডোতেই পথ হারিয়ে ফেলে তারা; জুনে নেশন্স লিগের গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচ খেলে থাকে জয়শূন্য (দুটি করে ড্র ও হার), সেপ্টেম্বরে দুটি ম্যাচ খেলে জিততে পারে একটিতে এবং হেরে বসে অন্যটি। 

সবশেষ দুই ম্যাচে অবশ্য সেরা দল পাননি দেশম। এক ডজনের মতো নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন চোটের কারণে বাইরে। তারপরও তাদের এমন ছন্দহীনতা অনেককেই অবাক করে। বিশ্বকাপের ফেভারিটদের তালিকায়ও পিছিয়ে পড়ে কিছুটা। 

তবে সাম্প্রতিক ব্যর্থতার পরও নিজেদের সামর্থ্যে পূর্ণ আস্থা আছে বাঁজামাঁ পাভার্দের। কদিন আগে ফিফাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলটির এই ডিফেন্ডার বলেছিলেন, “কাতার বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলকে সবাই হারাতে চাইবে।” 

দেশমের সহকারী গি স্তিফানও নিজেদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখেন। তবে সেজন্য অনেক পরিশ্রম করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। 

“আমাদের সামনে বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ।” 

বিশ্ব সেরার অভিযানে দেশমের সবচেয়ে বড় দুই হাতিয়ার হলেন করিম বেনজেমা ও কিলিয়ান এমবাপে। তাদের সঙ্গে আক্রমণভাগের আরও দুই বড় নাম অঁতোয়ান গ্রিজমান ও উসমান দেম্বেলে। মাঝমাঠে সুর বেঁধে দিতে পারেন এনগোলো কঁতে। রাশিয়া বিশ্বকাপ জয়ের আরেক তারকা পল পগবার খেলা নিয়ে অবশ্য আছে অনিশ্চয়তা। 

পরীক্ষিত এসব সৈনিকের পাশে তরুণ কিন্তু দারুণ কার্যকর কিছু খেলোয়াড় আছে দেশমের শিবিরে; রিয়াল মাদ্রিদের অহেলিয়া চুয়ামেনি, লাইপজিগের ক্রিস্টোফার এনকুনকু, আর্সেনালের উইলিয়াম সালিবা ও বার্সেলোনার জুল কুন্দে। 

এমন শক্তিশালী দল নিয়ে ফ্রান্সের গ্রুপ পর্ব উতড়ানো হয়তো তেমন কঠিন হবে না। 

প্রতিপক্ষ তিউনিসিয়া শক্তি কিংবা অভিজ্ঞতা- দুইয়ের বিচারেই ফ্রান্সের চেয়ে অনেক পিছিয়ে; এর আগে মাত্র পাঁচবার বিশ্বকাপ খেলেছে আফ্রিকার দলটি, যেখানে ফরাসিরা খেলেছে ১৫বার, সঙ্গে জিতেছে দুটি শিরোপা। আরেক প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া টানা চারবার সহ মোট পাঁচবার বিশ্বকাপ খেলেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে তাদের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জিতেই বিশ্ব জয়ের পথে অভিযান শুরু করেছিল ফ্রান্স। 

‘ডি’ গ্রুপে তাদের হয়তো সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে ডেনমার্কের বিপক্ষে। ডেনিশদের বিপক্ষে এবারের নেশন্স লিগে দুইবারের দেখায় প্রতিবারই হেরেছে এমবাপেরা। 

১০ বছর আগে ফ্রান্সের দায়িত্ব নেওয়া দেশম নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট বা কৌশলে সবসময় আস্থা রাখেন না। তিনি বরং সময়ের প্রয়োজনে কৌশল সাজানোয় বিশ্বাসী। অনেকবার তিনি নিজেও বলেছেন যে, দলে উপস্থিত খেলোয়াড়দের ভিত্তিতেই উপযোগী ফরম্যাট সাজান তিনি। 

স্তিফানের কণ্ঠে অবশ্য একটা ধারণা পাওয়া গেল যে কাতারে কীভাবে দলকে খেলাতে চান দেশম। 

“ম্যাচে গতিময় ফুটবল দেখতে পছন্দ করেন দিদিয়ের। তিনি এমন কোচ নন যে কেবল পজেশনের স্বার্থেই বল দখলে রাখতে চায়। সরাসরি লাইন ধরে আক্রমণ শাণাতে চান তিনি, তাই ট্রানজিশন গুরুত্বপূর্ণ।” 

দেশমের কৌশলে ফুল-ব্যাকদেরও প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৮ আসরে শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পাভার্দের চমৎকার গোলটি হতে পারে তার সঠিক উদাহরণ।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ৪-২-৩-১ এ বাজিমাত করেছিল ফ্রান্স। তবে গ্রিজমান, এমবাপে ও বেনজেমাকে আক্রমণে রাখতে এবার দলকে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলাতে পারেন দেশম।

এই আক্রমণত্রয়ী জ্বলে উঠলে এবং সঙ্গে মাঝমাঠ সুর বেঁধে দিতে পারলে দেশম-বাহিনীর ছুটে চলা দেখাটা হবে দারুণ রোমাঞ্চকর।  

বেনজেমা হতে পারেন কান্ডারি 

অপ্রীতিকর এক কারণে পাঁচ বছরের বেশি সময় জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন বেনজেমা। খেলতে পারেননি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬ ও রাশিয়া বিশ্বকাপ-২০১৮ তে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার শেষে গত বছরের ইউরোর আগে দলে ফেরেন তিনি। 

সেই থেকে দেশমের একাদশে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন বেনজেমা। গত নেশন্স লিগ জয়েও তার ছিল বড় অবদান; চার দলের ফাইনালসের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে গোল করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচ খেলে ১০টি গোল করেছেন বেনজেমা। 

গত বছর রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যের মূল কারিগরও ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার; ছিলেন দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরেরও। 

এবার আরও বড় পরীক্ষা, সবচেয়ে বড় মঞ্চ। জাতীয় দলে তার পাশে এমবাপেও বর্তমানের সফল ফরোয়ার্ড। তবে অভিজ্ঞতা ও কার্যকারিতার বিচারে বেনজেমাই হতে পারেন দেশমের মূল অস্ত্র। 

পাভার্দের চোখে বেনজেমাই সেরা। 

“বর্তমানে করিম সবচেয়ে সেরা নাম্বার নাইন। ফ্রান্সের হয়ে মাঠে নামলেই সে পারফর্ম করে, আমাদের তুলে ধরে।” 

শিষ্যকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন দেশমও। 

“এই বিশ্বকাপ বেনজেমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আট বছর কেটে গেছে, যদিও অনেক কিছু হতে পারে, এটাই হয়তো তার শেষ বিশ্বকাপ।” 

নিজের সবশেষ বিশ্বকাপ ২০১৪ আসরে শুরুটা দারুণ করেছিলেন বেনজেমা। ফ্রান্সের প্রথম ম্যাচে হন্ডুরাসের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে জোড়া গোল করেছিলেন তিনি। ওই আসরে করেছিলেন তিন গোল। কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল ফ্রান্স। 

আট বছর বাদে, কাতারে কি দলের কান্ডারি হতে পারবেন করিম বেনজেমা?