‘সেলিব্রেশন’ তুলে রেখে পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ

শুরুতে বিশ্রাম নেওয়ার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত বদলে বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল।

কাঠমান্ডু থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2022, 12:22 PM
Updated : 8 Sept 2022, 12:22 PM

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ে শুরুর উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাস্তবের শক্ত জমিনে পা রাখছেন খেলোয়াড়রা। তাই তো ম্যাচের পর টিম হোটেলে ফিরে প্রথাগত কোনো আনন্দ-উৎসব, হৈ-হুল্লোড় কিছুই করেনি সাবিনা-মারিয়ারা। মালদ্বীপ ম্যাচের জয়টিকে স্রেফ লক্ষ্য পূরণের ‘প্রথম সিঁড়ি পেরুনো’ হিসেবে দেখছেন তারা।

খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা, সবার কথায় মিলল একই ইঙ্গিত-বড় উপলক্ষের জন্য উদযাপন তুলে রেখেছে বাংলাদেশ।

মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আগের দিন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের ধকল কাটিয়ে উঠতে বৃহস্পতিবার বিশ্রাম নেওয়ার কথা ছিল খেলোয়াড়দের। বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েও দিয়েছিলেন কর্মকর্তারা। কিন্তু হঠাৎ করে আসে সিদ্ধান্ত বদল। সকালে দল নিয়ে কাঠমান্ডুর আর্মড পুলিশ ফোর্স মাঠে ছোটেন গোলাম রব্বানী ছোটন।

ভারি অনুশীলন অবশ্য করাননি। রানিং, স্ট্রেচিং, হালকা ব্যায়াম-এগুলো দিয়ে শেষ করেছেন প্রস্তুতি। মালদ্বীপের ম্যাচে না খেলাদের নিয়ে যা একটু কাজ করেছেন বাংলাদেশ কোচ। মেয়েরাও ছিলেন খোশমেজাজে। মাঠের এক কোণে কয়েকজন দৌড়াচ্ছেন, তো অদূরেই ছোট্ট জটলা পাকিয়ে গল্প-গুজব করছেন সাবিনা খাতুন-আঁখি খাতুনরা। হালকা অনুশীলন সেরে কৃষ্ণা রানী সরকার নেমে গেলেন ফটোগ্রাফারের ভূমিকায়-এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে অধিকাংশ সময়।

বিশ্রামের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রস্তুতিতে নেমে পড়ার কারণও মালদ্বীপ ম্যাচ! তিন পয়েন্ট নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শুভসূচনার তৃপ্তি মিলেছে, কিন্তু আরও বেশি গোল না পাওয়ার অতৃপ্তিটুকু রয়ে গেছে কোচের। পাকিস্তান ম্যাচ সামনে রেখে তাই একেবারে শুয়ে-বসে থাকতে চাননি ছোটন।

কোচের মনোভাব মালদ্বীপ ম্যাচের পর বুঝে নিয়েছেন খেলোয়াড়রাও। প্রস্তুতির ফাঁকে সাবিনা-মারিয়ারা যে সুরে কথা বললেন মালদ্বীপ ম্যাচ নিয়ে, তাতে পরিষ্কার হয়ে উঠল, এ জয়কে তারা গোণায়ই ধরছেন না! অধিনায়ক সাবিনা জানালেন লক্ষ্য পূরণের পর উদযাপনে মাতবেন তারা।

“উৎসব করার কিছু নেই তো…মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতে যদি সেলিব্রেশন করতে চাই-তাহলে কিভাবে হবে? প্রথম ম্যাচে জিতেছি বলে আমরা খুশি, কিন্তু মাস্তি করার সময় এখনও আসেনি। আমাদের যে লক্ষ্য, সেটা এখনও অর্জিত হয়নি। সেমি-ফাইনালে জিততে পারলে তখন উদযাপন করব।”

মারিয়া মান্দার ভাবনাও একই। মালদ্বীপ ম্যাচে মাঝমাঠের সুর বেঁধে দিয়েছেন, মাসুরা পারভীনের গোলের আক্রমণের উৎসও ছিলেন ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। এক জয়ের আত্মতৃপ্তিতে ভেসে যেতে চান না তিনিও।

“হাসিখুশি বলতে…যেহেতু সামনে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের দ্বিতীয় ম্যাচ, তাই এখনই এত আনন্দিত হওয়ার কোনো মানে আসে না। আমরা দুইটা ম্যাচ খেলার পর আনন্দ করব।”

মালদ্বীপ ম্যাচে এক গোল করা মাসুরা ছোট্ট কথায় বুঝিয়ে দিলেন বড় উপলক্ষের জন্য উদযাপন তুলে রেখেছে দল।

‘মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়…সেভাবে উল্লাস করা হয়নি, লক্ষ্যপূরণ করে তারপর করব।”

সেমি-ফাইনালে খেলার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণের জন্য আগামী শনিবার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। গত রাতের টিম মিটিংয়েও মালদ্বীপ ম্যাচের জয়ের চেয়ে পাকিস্তান ম্যাচের করণীয় নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে বলে জানালেন টিম ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু।

“জয় তো জয়ই, মেয়েরা খুশি, কিন্তু কোনো সেলিব্রেশন হয়নি। মালদ্বীপ ম্যাচের জয় তো আমাদের কাছে কিছুই না। আমাদের জয়ের দরকার ছিল, জয় পেয়েছি। মালদ্বীপের বিপক্ষে মেয়েরা যেভাবে খেলেছে, পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমাদের সেভাবে খেলতে হবে। আগে আমাদের সেমি-ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করতে হবে, এরপর উদযাপন করব।”

“টিম মিটিংয়ে জয়ের জন্য মেয়েদের ধন্যবাদ দিয়েছি। আমাদের মতো মেয়েদেরও মূল মনোযোগ সেমি-ফাইনাল নিয়ে। তারাও জানে মালদ্বীপ ম্যাচের চেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও ভালো খেলতে হবে তাদের।”

কোচ, কর্মকর্তা, খেলোয়াড়-সবাই এমন করেই ‘উপযাপন’ তুলে রাখছেন আপাতত।