বর্ণময় ক্যারিয়ারের ইতি টেনে ইব্রাহিমোভিচ বললেন, ‘আমার মতো কেউ নেই’

২৪ বছরের ঘটনাবহুল পেশাদার ক্যারিয়ার থামিয়ে অবশেষে ৪১ বছর বয়সে অবসরের ঘোষণা দিলেন সুইডিশ তারকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 05:18 AM
Updated : 5 June 2023, 05:18 AM

সবাইকেই একটা সময় থামতে হয়। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ তবু ছিলেন এক বিস্ময়। বয়স ৪১ পূর্ণ হয়েছে বেশ আগেই। অথচ দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন, ‘এখনই অবসর নয়।’ তবে দ্রুতই বদলে গেল তার ভাবনা। অনেকটা হুট করেই পথচলা থামানোর ঘোষণা দিলেন সুইডিশ তারকা। বিদায় বেলায়ও অবশ্য আপন চরিত্রে ভাস্বর হয়ে বললেন, ‘জ্লাতান একজনই।’

এসি মিলানের সঙ্গে তার চুক্তি শেষ এই মৌসুম দিয়েই। চোট জর্জর মৌসুম শেষে সেই মেয়াদ আর বাড়ছে না। ইব্রাহিমোভিচ খুঁজছিলেন নতুন ঠিকানা। শেষ পর্যন্ত সেই অভিযানে ক্ষান্তি দিলেন ৪১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। মৌসুমে মিলানের শেষ ম্যাচ দিয়ে রোববার ইতি টানলেন ২৪ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ারের। সমাপ্তি হলো সাফল্য আর বিতর্কে ভরপুর বর্ণাঢ্য এক অধ্যায়ের।

১৯৯৯ সালে স্বদেশি ক্লাব মালমে এফএফ দিয়ে তার পথচলা শুরু। এরপর আয়াক্স হয়ে খেলেছেন ইউভেন্তুস, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনা, এসি মিলান, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, এলএ গ্যালাক্সিতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় মিলানে ফেরেন তিনি ৬ মাসের চুক্তিতে। সেই অধ্যায়কে দীর্ঘায়িত করে শেষ পর্যন্ত থামলেন তিনি এখানেই।

গত মৌসুমে মিলানের লিগ শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন তিনি। এবার চোটের কাছে পর্যদুস্ত হয়ে মাঠে থাকতে পারেননি নিয়মিত। বিদায় বেলায় সান সিরোর দর্শকদের ভালোবাসায় অবশ্য সিক্ত হলেন তিনি। এল্‌লাস বেরোনার বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে গ্যালারিতে দর্শকরা মেলে ধরে বিশাল ‘টিফো’, যেখানে ফুটে ওঠে ‘GODBYE’.

সিদ্ধান্তটি যে আচমকাই ছিল, তা জানালেন তিনি বিদায়ী ম্যাচ শেষে, “এমনকি আমার পরিবারও এটি জানত না… কারণ আমি চেয়েছিলাম, যখন অবসরের ঘোষণা দেব, সবাই একসঙ্গেই তা জানতে পারবে।”

ম্যাচ শেষে বিদায়ী আয়োজন ছিল ইব্রাহিমোভিচের জন্য। সতীর্থ ও স্টাফরা তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়। এসময় আবেগ স্পর্শ করে ইব্রাহিমোভিচকেও। তার চোখে দেখা যায় জল। মিলানের সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ফুটবলকে বিদায় বলছি, তবে আপনাদেরকে নয়। প্রথমবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখন আপনারা আমাকে খুশি করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় আপনারা আমাকে উপহার দিয়েছেন ভালোবাসা।”

সুদীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে ৯৮৮ ম্যাচে ৫৭৩ গোল করেছেন তিনি। ট্রফি জিতেছেন ৩২টি। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পাননি কখনও। সেই ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু করে প্রতি বছরই অন্তত একটি করে গোল করেছেন। লিগ ম্যাচে গোল করেছেন ভিন্ন চারটি দশকে। ৯০ মিনিটের প্রতি মিনিটেই গোল করার কৃতিত্ব আছে তার।

৬২ গোল করে তিনি সুইডেনের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। ২০১৬ ইউরোর পর জাতীয় দলকে বিদায় বলেছিলেন তিনি। তবে ফিরে আসেন ২০২১ সালে। দলকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বৈতিরণী অবশ্য পার করাতে পারেননি।

তবে গোল, ট্রফি, নানা অর্জন আর আক্ষেপ, সব কিছু ছাপিয়ে ইব্রাহিমোভিচ এক বর্ণময় চরিত্র। সীমাবদ্ধতার থাকলেও নিজেকে বিশ্বের সেরাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তা জানান দিতে পিছপা হননি কখনোই। নিজেকে তিনি সবসময়ই সেরা মেনেছেন এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেছেন অকপটে। নানা সময়ে নিজেই নিজেকে বলেছেন ‘সুপারম্যান।’

বিতর্কিত সব ঘটনায় জড়ানো, প্রতিপক্ষ ও অন্য তারকা ফুটবলারদের নিয়ে চাঁছাছোলা মন্তব্য ছিল ক্যারিয়ারজুড়ে তার সঙ্গী। চোটের সঙ্গে লড়াইও কম করতে হয়নি। সব মিলিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে ছিল তিনি প্রায় সবসময়ই। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে যেমন সেটির প্রকাশ ঘটালেন।

“সংবাদকর্মীদের আমি ধন্যবাদ জানাই আপনাদের ধৈর্যের জন্য। এখন আমি নেই, আপনাদের কাজ অনেক কমে গেল… আগামীকাল থেকে এই ফুটবলের জগৎ থেকে আমি মুক্ত।”

খেলোয়াড়ী জীবন শেষে কী করবেন, তা এখনও ঠিক করেননি বলে জানালেন তিনি।

“দীর্ঘ এক ক্যারিয়ার ছিল এটি…সত্যিই দীর্ঘ। যারা আমাকে শক্তি জুগিয়েছে, চালিয়ে যাওয়ার তাড়না ও প্রেরণা জুগিয়েছে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।”

“এই মুহূর্তে আপাতত কিছুটা সময় নিতে চাই এবং ক্যারিয়ারে ফিরে তাকিয়ে উপভোগ করতে চাই। তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই, এখন অনেক বেশি আবেগ খেলা করছে। এই গ্রীষ্মে ছুটি কাটাতে চাই, ফিরে তাকাতে চাই এবং এরপর দেখা যাবে।”

ইব্রাহিমোভিচের জায়গা পূরণ করতে পারে কে, এই প্রশ্নে বেরিয়ে এলো তার চেনা সেই সহজাত চরিত্র।

“অসম্ভব… আমার মতো কেই নেই। জ্লাতান কেবল একজনই। আমি যখন ছোট ছিলাম, আমাকে তুলনা করা হতো মার্কো ফন বাস্তেনের (নেদারল্যান্ডসের সাবেক স্ট্রাইকার) সঙ্গে। তবে সে তার মতো, আমি আমার মতো। মিল থাকতে পারে কারও সঙ্গে কারও, তবে তুলনা করা ঠিক নয়। আমার মতো এমন অহম নিয়ে আরেক জ্লাতান পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ আছে।”