ভিনিসিউসের ঘটনার পর ফুটবল নিয়ে কথা বলতে চান না আনচেলত্তি

রিয়াল মাদ্রিদ কোচের ধারণা, ভিনিসিউসের প্রতি বর্ণবাদী আচরণের ঘটনায় এবারও কোনো পদক্ষেপ নেবে না লা লিগা কর্তৃপক্ষ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 06:13 AM
Updated : 22 May 2023, 06:13 AM

ভালেন্সিয়ার সঙ্গে ম্যাচের পর মাঠের ফুটবল নিয়ে কোনো কথাই বলতে চাননি কার্লো আনচেলত্তি। রিয়াল মাদ্রিদ কোচের কাছে মাঠের ফুটবল বা জয়-পরাজয় ছাপিয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণবাদ নিয়ে সোচ্চার হওয়া। রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিউস জুনিয়রের প্রতি আরও একবার বর্ণবাদী আচরণের পর ক্ষুব্ধ আনচেলত্তি। তবে তার ধারণা, এবারও কোনো ব্যবস্থা নেবে না লা লিগা কর্তৃপক্ষ।

লা লিগায় রোববার ভালেন্সিয়ার মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ভিনিসিউসের বর্ণবাদের শিকার হওয়ার ঘটনায় খেলা বন্ধ থাকে মিনিট দশেক। শেষ দিকে আবার ভিনিসিউসকে ঘিরেই মাঠের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। দুই দলের ফুটবলারদের হাতাহাতি শুরু হয়। পরে ভিনিসিউসকে লাল কার্ড দেখান রেফারি।

এটিই প্রথম নয়, লা লিগার ম্যাচে ভিনিসিউসের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ আগেও খবরের শিরোনাম হয়েছে নানা সময়ে। আনু্ষ্ঠানিক অভিযোগও করা হয়েছে বারবার, তদন্ত হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনও।

ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে হেরে যায় রিয়াল। লিগে তাদের রানার্সআপ হওয়ার সম্ভাবনায় তাতে চোট লাগে আরেক দফায়। তবে ম্যাচ শেষে মুভিস্টার প্লাসকে আনচেলত্তি বললেন, এমন ম্যাচের পর মাঠের ফুটবল নিয়ে কথা বলার অর্থ নেই।

“আজকে আমি ফুটবল নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। এখানে যা হয়েছে, সেসব নিয়ে বলতে চাই। পরাজয়ের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এখানে যা হয়েছে, তা উচিত হয়নি… এই লিগে খুব বাজে কিছু ব্যাপার হচ্ছে।”

বর্ণবাদের বিরুদ্ধ লা লিগার লড়াইয়ে বড় ঘাটতি দেখছেন আনচেলত্তি। তার মতে, ভিনিসিউসের প্রতি বর্ণবাদী আচরণের পর খেলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।

“এটা অযৌক্তিক একটি লাল কার্ড, কারণ এখানে আক্রমণাত্মক কিছু ঘটেনি। আমার মতে, ভিনিসিউস এখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার, সবচেয়ে শক্তিশালী ফুটবলার। লা লিগার ভয়ঙ্কর সমস্যা আছে। আমার মতে, এই ধরণের বর্ণবাদের ঘটনায় খেলা বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, স্রেফ একজনের ব্যাপার নয় এটি, গোটা স্টেডিয়াম মিলে একজন ফুটবলারকে অপমান করছে। খেলা বন্ধ করা উচিত ছিল। আমরা যদি ৩-০ গোলে জয়ের পথে থাকতাম, তবু একই কথা বলতাম। আর কোনো উপায় নেই এখানে।”

“রেফারিকে বলেছিলাম খেলা বন্ধ করে দিতে। সে বলল, ‘লিগের বর্ণবাদ বিরোধী প্রটোকল হলো আগে দর্শকদের জানিয়ে দেওয়া এবং এরপরও তারা তা করতে থাকলে খেলা বন্ধ করা।”

এই ম্যাচে ঘটনার সূত্রপাত ৭০তম মিনিটে। বাঁদিক থেকে বল নিয়ে ঢুকছিলেন ভিনিসিউস। গ্যালারি থেকে তখন আরেকটি বল ছুড়ে মারা হয় মাঠে। ভালেন্সিয়া ডিফেন্ডার এরাই কুমার্ট সেটি মেরে বসেন ভিনিসিউসের দিকেই। কুমার্টকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে রিয়ালকে ফ্রি কিক দেন রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচিয়া।

ফ্রি কিক নেওয়ার প্রস্তুতির সময় ভালেন্সিয়ার গোলবারের পেছনে গ্যালারির দর্শকদের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ছুটে যান ভিনিসিউস। নিশ্চিতভাবেই সেখান থেকে কিছু বলা হয়েছিল তার উদ্দেশে। রিয়ালের আরও কয়েকজন ফুটবলার সেখানে ছুটে গিয়ে দর্শকদের দিকে কিছু বলতে থাকেন। ভিনিসিউস পরে রেফারির কাছে গিয়ে দেখিয়ে দেন গ্যালারির সেই অংশের দর্শককে।

লম্বা সময় খেলা থমকে থাকার এক পর্যায়ে ভিনিসিউসকে দেখা যায় আনচেলত্তির সঙ্গে কথা বলতে। পরে খেলা শুরু হয়। স্টেডিয়ামের মেগাফোনে দর্শকদের সতর্ক করে দেওয়া হয় বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে।

রিয়াল মাদ্রিদ কোচ ম্যাচ শেষে জানালেন, ভিনিসিউস চাইছিলেন মাঠ ছেড়ে যেতে। তিনি তা হতে দেননি। এখন কোচ অপেক্ষায় এটি দেখার জন্য যে, লা লিগা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় কি না। 

“(ভিনিসিউস) খেলা চালিয়ে যেতে চায়নি। আমিও ওকে তখন বলি যে, ‘খেলা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। এখানে তো তোমার দায় নেই! তুমি কোনো দোষ করোনি, বরং তুমি (অন্যায়ের) শিকার।’ এরপর সে খেলা চালিয়ে যায়।”

“ভিনিসিউসের অবশ্যই মন খারাপ। তার কষ্ট হচ্ছে, তবে রাগ নেই। তার ওই প্রতিক্রিয়া (যে ঘটনায় লাল কার্ড) খুবই স্বাভাবিক। কোনো সংশয় নেই। গোটা স্টেডিয়াম বর্ণবাদী আচরণ করছিল। দেখা যাক কী হয়। আমি কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষায়… তবে কিছুই হবে না। সাধারণত, কিছুই করা হয় না।”

ম্যাচের পর সামাজিক মাধ্যমে বর্ণবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে ভিনিসিউসের পাশে থাকার কথা বলেন রিয়াল মাদ্রিদের তারকাদের অনেকেই। অন্যান্য দেশ ও ক্লাবের আরও অনেক তারকাই পাশে দাঁড়ান ভিনিসিউসের। রিয়ালের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া বলেন, ভিনিসিউস মাঠ ছেড়ে গেলে সঙ্গী হতেন তিনিও।

“আমরা এটা মেনে নিতে পারি না, কোনোভাবেই সহ্য করতে পারি না। ভিনি খেলে গেছে বলেই আমরা খেলেছি। ভিনি যদি মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিত, আমিও তার সঙ্গে মাঠ ছেড়ে যেতাম। এই ধরনের ব্যাপার অবশ্যই বরদাশত করার মতো নয়।”

ভালেন্সিয়া অধিনায়ক হোসে লুইস গাইয়া এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, দায়ীদের চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

“এই ধরনের আচরণের নিন্দা জানাই আমরা। এজন্যই তো টিভি ক্যামেরাগুলো আছে। এটা যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, দর্শকদের মধ্যে কারা এটা করেছে, আশা করি, তাদেরকে আর মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের লিগ কর্তৃপক্ষকে আরও শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আহবান জানালেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা।

“আমাদের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের প্রতি সংহতি জানাত চাই আমি। দরিদ্র ঘরের একটি ছেলে, যে জীবনে সফল হয়েছে এবং বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের একজন হয়ে উঠছে, রিয়াল মাদ্রিদের সেরা তো নিশ্চিতভাবেই, তাকেই আক্রমণ করা হচ্ছে প্রতিটি স্টেডিয়ামে।”

“আমার মনে হয়, ফিফা, স্প্যানিশ লিগ ও অন্য দেশের লিগগুলোর কর্তৃপক্ষের উচিত সত্যিকারের ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ ফুটবল মাঠে ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদের দাপট হতে দিতে পারি না আমরা।”