‘জাদুকর’ গ্রিজমানকে পেয়ে নিজেদের ভাগ্যবান ভাবছেন আতলেতিকো কোচ

অতিরিক্ত সময়ে ফরাসি তারকার চমৎকার গোলেই জয়ের পথ পেয়ে যায় আতলেতিকো মাদ্রিদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2024, 10:01 AM
Updated : 19 Jan 2024, 10:01 AM

গেল সপ্তাহে ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়েও মুহূর্তটা রাঙিয়ে রাখতে পারেননি অঁতোয়ান গ্রিজমান। দল যে সেদিন জিততে পারেনি। ভিন্ন প্রতিযোগিতায় সেই একই প্রতিপক্ষ পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন তিনি। দৃষ্টিনন্দন এক গোলে দলকে দেখালেন জয়ের পথ। সেই পথ ধরে রেয়াল মাদ্রিদকে হারানোর পর ফরাসি তারকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন আতলেতিকো মাদ্রিদ কোচ দিয়েগো সিমেওনে।

আট দিন আগে স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমি-ফাইনালে দুইবার এগিয়ে গিয়েও ব্যবধান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় আতলেতিকো। দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় রেয়াল। সেখানে আর পারেনি সিমেওনের দল। ৫-৩ গোলে জিতে ফাইনালে ওঠে কার্লো আনচেলত্তির দল। পরে শিরোপা লড়াইয়ে তারা হারিয়ে দেয় বার্সেলোনাকে।

নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ওই হারের কষ্ট নিয়েই বৃহস্পতিবার ফের তাদের মুখোমুখি হয় আতলেতিকো। মঞ্চটা এবার কোপা দেল রের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার। এবারও অনেকটা একইরকম নাটকীয়তায় চলতে থাকে লড়াই।

ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় সামুয়েল দিয়াস লিনোর গোলে আতলেতিকো এগিয়ে যাওয়ার পর তাদের গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাকের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরে রেয়াল। আলভারো মোরাতা স্বাগতিকদের ফের লিড এনে দেওয়ার পর সমতা টানেন হোসেলু।

ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এরপরই গ্রিজমানের ওই অসাধারণ গোল; সঙ্গে লেগে থাকা দ্রুত গতির ভিনিসিউসকে পেছনে ফেলে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি, এরপর বাঁ পায়ের জোরাল শটে জালে বল পাঠান সাবেক বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। আর শেষ দিকে রদ্রিগো রিকেলমের গোলে জয় নিশ্চিত হয় আতলেতিকোর।

গ্রিজমানের ওই গোল দেখে যেন মুগ্ধতার শেষ নেই সিমেওনের। ম্যাচ শেষে তাই শিষ্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন কোচ।

“(দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে) গ্রিজমানের মতো এক জাদুকরী ফুটবলার নিজেকে মেলে ধরল। লম্বা দৌড়ে সে গতিতে ভিনিসিউসকে হারাল, যে কিনা খুবই ক্ষিপ্র এবং এরপর উপরের কোণা দিয়ে বল জালে পাঠাল।”

“অঁতোয়ান চমৎকার একটি গোল করেছে, হয়তো আমার দেখা তার সেরা গোল। তাকে এখানে পেয়ে আমরা ভাগ্যবান এবং সেও এখানে থাকতে চায়। আশা করি, সে এরকম আরও অনেক রাত আমাদের উপহার দেবে।”

স্প্যানিশ সুপার কাপে রেয়ালের বিপক্ষে ওই হারের ম্যাচে দলের দ্বিতীয় গোলটি করে ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ডটি একার করে নেন গ্রিজমান। পেছনে ফেলেন ১৭৩ গোল নিয়ে ৫০ বছর ধরে তালিকার শীর্ষে থাকা লুইস আরাগোনেসকে।

দুই মেয়াদে আতলেতিকোর জার্সিতে সাত বছর খেলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৭৫ গোল হলো গ্রিজমানের। সতীর্থের এই অর্জনে দারুণ খুশি আতলেতিকো অধিনায়ক কোকেও।

“গ্রিজমানের এই কীর্তিতে আমরা খুব খুশি। সে অসাধারণ একটি গোল করেছে।”

“গত সপ্তাহে ক্লাবের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড গড়ার ম্যাচে আমরা তাকে জয় উপহার দিতে পারিনি। আজ পেরেছি। সবসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিজেদের স্টেডিয়ামে হারাতে পারাটা দুর্দান্ত।”

সবশেষ এই ম্যাচের আগে চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে একটি ম্যাচই শুধু হেরেছিল রেয়াল, গত সেপ্টেম্বরে লা লিগায় এই আতলেতিকোর মাঠেই। এরপর তারা ছুটছিল দারুণ ছন্দে। টানা ২১ ম্যাচ ছিল অপরাজিত। সেই মেত্রোপলিতানোয় ফিরেই আরেকটি হারের স্বাদ পেল আনচেলত্তির দল। ছেদ পড়ল তাদের অপরাজেয় যাত্রায়।

রেয়ালকে আবারও হারাতে পেরে, গত সপ্তাহের হারের ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিতে পেরে এবং সবচেয়ে মুল্যবান কোপা দেল রের শেষ আটে উঠতে পেরে খুব খুশি সিমেওন। বিশেষ এই ক্ষণে ক্লাব সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে ভুল করলেন না এই আর্জেন্টাইন কোচ।

“হোটেল থেকে আমরা স্টেডিয়ামে আসার সময় এমন কিছু দেখি, যা আমাদের গর্বিত করে এবং দলের জন্য পরিশ্রম করে যেতে আরও শক্তি যোগায়।”

“এমন কিছু দেখার পর, এই ক্লাবে কত বছর ধরে আমরা আছি, তা ভুলে যাবেন। মনে হচ্ছে, আমরা যেন কেবলই ক্লাবে এসেছি…স্টেডিয়ামে পৌঁছে দেখলাম আমাদের সমর্থকরা কত রোমাঞ্চিত এবং ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছে, ম্যাচটা তো কেবলই কোপা দেল রের শেষ ষোলো পর্বের…শেষ ষোলোর একটা লড়াই মাত্র! আর আমাদের সমর্থকদের এই রূপে দেখে সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা ঢেলে না দেওয়াটা তো অসম্ভব।”