১৭ বছর বয়সী যে ডিফেন্ডারের কাছে বল গেলেই নিশ্চিন্ত থাকেন বার্সেলোনা কোচ

নাপোলির বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে অসাধারণ খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বার্সেলোনার বিস্ময় বালক পাউ কুবারসি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2024, 07:58 AM
Updated : 13 March 2024, 07:58 AM

ম্যাচে গোল হয়েছে চারটি। বার্সেলোনা জিতেছে ৩-১ গোলে। কিন্তু ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মনোনীত হয়েছেন গোল না করা এক ডিফেন্ডার। নজর কাড়ার জন্য যথেষ্ট স্রেফ এটুকুই। তবে পাউ কুবারসিকে নিয়ে মুগ্ধতার উপকরণের শেষ নয় এখানেই, এটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার অভিষেক ম্যাচ, বয়স মোটে ১৭। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঝিলিক তো দেখালেনই, পাশাপাশি যেন বার্তা ছড়িয়ে দিলেন, তিনি বার্সেলোনার বর্তমানও। 

নাপোলির বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে পা রাখে বার্সেলোনা। নাপোলির মাঠে প্রথম লেগের লড়াই শেষ হয়েছিল ১-১ সমতায়। দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার ফের্মিন লোপেস ও জোয়াও কান্সেলোর গোলে ১৭ মিনিটের মধ্যেই দুই গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। নাপোলি পরে একটি গোল ফিরিয়ে দিলেও ৮৩তম মিনিটে জয় নিশ্চিত করে দেন রবের্ত লেভানদোভস্কি। 

তবে তাদের কেউ নন, ম্যাচ সেরার ট্রফি ওঠে পাউ কুবারসির হাতে। বয়সের তুলনায় অবিশ্বাস্য রকমে স্থির, শান্ত, বিচক্ষণ ও পরিণত ছিল তার পারফরম্যান্স। নাপোলির আক্রমণভাগকে খুব একটা সুবিধা করতে দেননি যিনি। বিশেষ করে, সবচেয়ে বড় হুমকি হওয়ার কথা ছিল যার, সেই ফরোয়ার্ড ভিক্টর ওসিমেনকে তিনি একরকম অকার্যকর করেই রাখেন। 

১৭ বছর ৫০ দিন বয়সে মাঠে নেমে রেকর্ড বইয়েও নাম লেখান পাউ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ট ডিফেন্ডার তিনি। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ১৭ বছর ২৫৮ দিন বয়সে মাঠে নেমে আগের রেকর্ডটি ছিল ডাভিড আলাবার, এখন যিনি খেলেন রেয়াল মাদ্রিদে। 

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যে কোনো পর্যায়ে বার্সেলোনার হয়ে খেলা সর্বকনিষ্ঠ ডিফেন্ডারও তিনিই। ১৭ বছর ১৩৩ দিন বয়সে খেলে আগের রেকর্ডটি এই মৌসুমের শুরুর দিকেই গড়েছেন এক্তর ফর্ত। 

রেকর্ড গড়া ম্যাচের উপলক্ষ তিনি রাঙিয়েছেন অসাধারণ পারফরম্যান্সে। ম্যাচ শেষে সেই উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল তার কণ্ঠে। পারফরম্যান্সে যেমন তিনি পরিণত, তার প্রতিক্রিয়াতেও ফুঠে উঠল তা। 

“আমার জীবনের সেরা দিনগুলির একটি এটি। কঠিন কয়েকটি বছরের পর আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছেছি।” 

“গোটা দলেরই এই এমভিপি (মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার) ট্রফি প্রাপ্য, শুধু আমার নয়। আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ দল।” 

কাতালুনিয়ার জিরোনা প্রদেশের ছোট্ট শহর বেসকানোতে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে জন্ম পাউয়ের। স্রেফ চার বছর বয়সেই তিনি যোগ দেন জিরোনার একাডেমিতে। পরে তার ওপর নজর পড়ে বার্সেলোনার স্কাউটদের। ১১ বছর বয়সে তাকে আনা হয় বার্সেলোনার বিখ্যাত একাডেমি ‘লা মাজিয়া’-তে। সেখানেই নিজেকে বিকশিত করেন তিনি। 

একাডেমি থেকে মূল দলের সঙ্গে প্রথম অনুশীলন করেন তিনি গত এপ্রিলে। প্রথম পেশাদার চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিন মাস পরই। এই জানুয়ারিতে কোপা দেল রের ম্যাচ দিয়ে মূল দলের হয়ে তার অভিষেক। এরপর চলছে এগিয়ে যাওয়ার পালা। 

পাউকে এই সুযোগ করে দিয়েছেন শাভি এর্নান্দেস। বলার অপেক্ষা রাখে না, কোচের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি। আগেও নানা সময়ে তরুণ এই ডিফেন্ডারের প্রশংসা করেছেন শাভি। এই ম্যাচের পারফরম্যান্সের পর তো পাউকে স্তুতির জোয়ারে ভাসালেন কোচ। 

“যখন সে বল পায়, আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় না। তার কাছে বল থাকলে আমি পুরোপুরি নিশ্চিন্তে থাকি। পাউ কুবারসির সেরা সারসংক্ষেপ এটিই।” 

“সে কখনোই নার্ভাস হয় না। পেছন থেকে সে যেভাবে খেলে, অসাধারণ তা। সবসময়ই সে ফাঁকা কাউকে খুঁজে নেয়, মিডফিল্ডারদের সঙ্গে খুব ভালো সংযোগ তৈরি করে এবং রক্ষণভাগ থেকে আক্রমণ তৈরি করার স্থিরতা তার আছে। তাকে খেলতে দেখাটা অসাধারণ।”