রিয়ালকে উড়িয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতল বার্সা

বার্সেলোনার জয়ের নায়ক ১৮ বছর বয়সী গাভি গোল করার পাশাপাশি করেন দুটি অ্যাসিস্ট।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2023, 08:54 PM
Updated : 15 Jan 2023, 08:54 PM

শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে মাঠে নেমে নিজেদের হারিয়ে খুঁজল রিয়াল মাদ্রিদ। রক্ষণ ও মাঝমাঠে বিক্ষিপ্ত প্রতিপক্ষের ওপর পুরোটা সময় আধিপত্য ধরে রেখে স্প্যানিশ সুপার কাপ ঘরে তুলল বার্সেলোনা।

রিয়াদে কিং ফাহাদ স্টেডিয়ামে রোববার ফাইনালে ৩-১ গোলে জিতেছে কাতালান ক্লাবটি। তাদের জয়ের নায়ক গাভি একটি গোল করার পাশাপাশি রবের্ত লেভানদোভস্কি ও পেদ্রির গোলেও অবদান রাখেন।

২০২১ সালের নভেম্বরে তখনকার ছন্নছাড়া বার্সেলোনার ডাগআউটে যোগ দেন শাভি। দায়িত্ব নিয়েই দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেন তিনি। তার ছায়ায় ঘুরে দাঁড়ানো দল মৌসুমে কোনো শিরোপা না জিতলেও লা লিগা শেষ করে দুইয়ে থেকে। খেলোয়াড় হিসেবে কাতালান দলটিকে অনেক সাফল্য উপহার দেওয়া সাবেক তারকা এই মিডফিল্ডার এবার পেলেন এখানে কোচ হিসেবে প্রথম ট্রফির স্বাদ।

ম্যাচের পুরোটা সময় দ্বিতীয় সেরা দল হয়েই ছিল রিয়াল। কখনোই তেমন কোনো সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি তারা। চোট শঙ্কা কাটিয়ে মাঠে নামা করিম বেনজেমা একেবারে শেষ মুহুর্তে করেন সান্ত্বনাসূচক গোলটি।

স্প্যানিশ সুপার কাপের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনার এটি ১৪তম শিরোপা। তবে চার দলের নতুন আঙ্গিকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতাটি প্রথম জিতল তারা।

শুরু থেকেই চাপ বাড়ানো বার্সেলোনা ম্যাচে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় একাদশ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে রবের্ত লেভানদোভস্কি লাফিয়ে কোনোমতে মাথা ছোঁয়ালেও বল লক্ষ্যে থাকেনি।

পরের মিনিটে থিবো কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় রিয়াল। এবার লেভানদোভস্কির নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক, বল তার হাতে লেগে পোস্টে বাধা পায়।

কয়েক মিনিটের চাপ সামলে অষ্টাদশ মিনিটে আক্রমণ শাণায় রিয়াল। তবে ছয় গজ বক্সের সামনে বল পেয়ে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি বেনজেমা। এরপর আবারও কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা।

প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগে ৩৩তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় বার্সেলোনা।

নিজেদের সীমানায় সতীর্থ কামাভিঙ্গাকে দুর্বল পাস দিয়ে প্রথম ভুলটা করেন আন্টোনিও রুডিগার, তরুণ ফরাসি মিডফিল্ডারও পারেননি যথেষ্ট ক্ষিপ্রতার পরিচয় দিতে। হারিয়ে ফেলেন বল। সতীর্থের পা ঘুরে লেভানদোভস্কি বাড়ান বক্সে এবং বল ধরে নিখুঁত শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন গাভি।

প্রায় এক বছরের মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোল করলেন গাভি। আগেরটি করেছিলেন ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে।

৪৫তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা। মাঝমাঠ থেকে ফ্রেংকি ডি ইয়ং অসাধারণ থ্রু পাসে সুর বেঁধে দেন আর বল ধরে দারুণ গতিতে বক্সে ঢুকে পড়েন গাভি। এরপর সুযোগ বুঝে ডান দিকে বাড়ান পাস, ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন লেভানদোভস্কি।

ক্লাসিকোয় পোলিশ ফরোয়ার্ডের এটা প্রথম গোল। আর এই প্রতিযোগিতায় টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জালের দেখা পেলেন তিনি; গত সপ্তাহে সেমি-ফাইনালে রিয়াল বেতিসের জালে দলের প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি উসমান দেম্বেলে। প্রতি-আক্রমণে আলেহান্দ্রো বালদের পাস ফাঁকায় পেয়ে জোরাল শট নেন ফরাসি ফরোয়ার্ড, পা দিয়ে ঠেকান কোর্তোয়া।

রিয়াল তৃতীয় গোলটিও হজম করে নিজেদের সীমানায় বল হারিয়ে। প্রতিপক্ষের থেকে বল কেড়ে নিয়ে বাঁ দিকে গাভিকে পাস দেন লেভানদোভস্কি। আর তরুণ সতীর্থের পাস অন্যপাশে পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান পেদ্রি।

বার্সেলোনার বর্তমানের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুই খেলোয়াড় গাভি ও পেদ্রি এই প্রথম একইসঙ্গে একই ম্যাচে গোলের দেখা পেলেন।

৮০তম মিনিটে ম্যাচে প্রথম কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হনে বার্সেলোনা গোলরক্ষক। রদ্রিগোর দূর থেকে নেওয়া শট দারুণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে জাল অক্ষত রাখেন মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।  

চার মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ব্যবধান কমান বেনজেমা। বক্সে তার প্রথম শট প্রতিহত হওয়ার পর ফিরতি বল নিচু শটে জালে পাঠান ফরাসি তারকা। তবে সময় ফুরিয়ে যাওয়ায় এই গোলে রিয়ালের উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো কিছু ছিল না।

এর পরপরই শেষের বাঁশি বাজান রেফারি, এক মৌসুমের অপেক্ষা শেষে আবারও শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাসে বার্সেলোনা।