স্পেনের উইলিয়ামস এখন ঘানার

জন্ম-বেড়ে ওঠা স্পেনের বিলবাওয়ে। আথলেতিক বিলবাওয়ের একাডেমিতে ফুটবল শিখে বছরের পর বছর ধরে এই ক্লাবেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ইনাকি উইলিয়ামস। স্পেনের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন এই ফরোয়ার্ড। সেই তিনি এবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের দল হিসেবে বেছে নিলেন ঘানাকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 06:50 AM
Updated : 6 July 2022, 08:09 AM

২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন। তার মা-বাবার দেশ ঘানা।

উইলিয়ামস যখন মায়ের গর্ভে, তখনই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন মা-বাবা। উন্নত জীবনের আশায় তারা ওই অবস্থায়ই পাচারকারীদের সহায়তায় দেশ ছাড়েন। ঘানা থেকে কিছু অংশ ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে পাচারকারীরা তাদেরকে ছেড়ে দেয় সাহারা মরুভূমির মাঝে। খাবার ও পানি ছাড়া বাকি পথ পায়ে হেঁটে তারা পাড়ি দেন মরুভূমি।

এরপর মরক্কো-স্পেন সীমানা টপকে তারা স্পেনে পৌঁছান। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে গ্রেপ্তারও হন। পরে স্থানীয় এক আইনজীবীর সহায়তায় ছাড়া পান তারা। ওই আইনজীবীর পরামর্শেই ঘানার পরিচয় মুছে নিজেদেরকে যুদ্ধবিধ্বস্ত লাইবেরিয়ার নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় পান স্পেনে। সেখানেই ১৯৯৪ সালে জন্ম উইলিয়ামসের।

বিলবাওয়ের একাডেমি থেকে যুব দল হয়ে মূল দলে খেলে আসছেন তিনি আট বছর ধরে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বিলবাওয়ের হয়ে এখনও পর্যন্ত খেলেছেন তিনি ২৭২ ম্যাচ। লা লিগায় টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার অসাধারণ রেকর্ড আছে তার, খেলেছেন টানা ২৩৩ ম্যাচ!

২০১৫ সালে স্পেনের অনূর্ধ্ব-২১ দলে ডাক পান তিনি। ওই বছরের মার্চে তার অভিষেকও হয়ে যায়। স্পেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। পরের বছর ডাক পান জাতীয় দলেও। স্পেনের ২০১৬ ইউরোর দলে তিনি ছিলেন ‘স্ট্যান্ড বাই’ তালিকায়। ওই বছরের মে মাসে স্পেনের জার্সিতে মাঠে নামেন তিনি বসনিয়া-হার্জেগোভিনার বিপক্ষে মার্কো আসেন্সিওর বদলি হিসেবে।

ওই এক ম্যাচের পর আর কখনোই স্পেনের হয়ে সুযোগ পাননি তিনি। অপেক্ষার অনেক প্রহর শেষে গত বছর বলেছিলেন, জাতীয় দল হিসেবে ঘানাকে বেছে নিতে পারেন তিনি। অবশেষ সেটিই এবার বাস্তবে রূপ নিল।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, ২১ বছর বয়স হওয়ার আগে কোনো দেশের হয়ে তিনটি ম্যাচ না খেললে ও বিশ্বকাপ কিংবা মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে না খেললে জাতীয় দল বদল করা যাবে। উইলিয়ামসের জন্য তাই বাধা নেই।  

ভিডিও বার্তায় উইলিয়ামস বলেন, নিজের মূলে ফিরে যাওয়ার তাড়না থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

“সামনে এগোনোর প্রতিটি পদক্ষেপেরই আলাদা অর্থ আছে… ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় যা ছাপ রেখে যায়। উত্তরাধিকার রেখে যায়। আমার মা-বাবা আমাকে গড়ে তুলেছেন বিনয়, শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসার মূল্যবোধ দিয়ে। এজন্যই আমার মনে হয়েছে, আফ্রিকা ও ঘানায় নিজের শিকড় নিজেই খোঁজার সময় এখন হয়েছে এবং আমার ও আমার পরিবারের কাছে এটির মূল্য অনেক।”

আগামী নভেম্বরে বিশ্বকাপের আগে উইলিয়ামসকে পাওয়া ঘানার জন্য বড় এক প্রেরণা। বিশ্বকাপে তাদের গ্রুপসঙ্গী পর্তুগাল, উরুগুয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া।