রূপকথার প্রত্যাবর্তনে সিটিকে হারিয়ে ফাইনালে রিয়াল

চোখ রাঙাচ্ছিল আরেকটি পরাজয়। ঘনিয়ে আসছিল বিদায়ের ক্ষণ। তবে এই রিয়াল মাদ্রিদ তো শেষের আগে শেষ হওয়ার নয়! শেষ মুহূর্তে পরপর দুই মিনিটে দুই গোল করে দলের আশা বাঁচিয়ে রাখলেন রদ্রিগো। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে জালের দেখা পেলেন করিম বেনজেমা। চেনা আঙিনায় আরেকটি প্রত্যাবর্তনের অসাধারণ গল্প লিখে, ম্যানচেস্টার সিটির আশা গুঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল কার্লো আনচেলত্তির দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2022, 09:37 PM
Updated : 5 May 2022, 09:42 AM

সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে বুধবার রাতে সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৮৯ মিনিট পর্যন্তও ১-০ গোলে, দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ গোলে এগিয়ে ফাইনালের প্রহর গুনছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে রিয়াল ম্যাচ জিতে নেয় ৩-১ গোলে। ৬-৫ গোলের অগ্রগামিতায় নিশ্চিত করে প্যারিসের ফাইনালের টিকেট।

আগামী ২৮ মে শিরোপা লড়াইয়ে আরেক ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলের মুখোমুখি হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে প্রথম লেগে সাত গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৪-৩ গোলে জিতেছিল সিটি। ব্যবধান বড় না হওয়ায় রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তাই ছিলই।

যদিও প্রথম ৮৯ মিনিটে স্বাগতিকদের কোনো শট ছিল না লক্ষ্যে। এরপরই তাদের দুর্দান্ত ফেরা। সব মিলিয়ে ম্যাচে গোলের জন্য রিয়ালের ১৪ শটের ৫টি ছিল লক্ষ্যে। সিটির ১৫ শটের ১০টি লক্ষ্যে ছিল। তবু তাদের মাঠ ছাড়তে হলো হারের বেদনা সঙ্গী করে।

লা লিগা শিরোপা নিশ্চিত করার পর প্রথমবার মাঠে নামা রিয়াল পঞ্চম মিনিটে পায় প্রথম সুযোগ। দানি কারভাহালের ক্রসে ডি-বক্সে লাফিয়ে বেনজেমার নেওয়া হেড উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। নবম মিনিটে কেভিন ডে ব্রুইনেকে কাসেমিরো ফাউল করার পর হাতাহাতিতে জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখেন লুকা মদ্রিচ ও এমেরিক লাপোর্ত।

অষ্টাদশ মিনিটে ডি-বক্সে বেনজেমাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যাওয়া রুবেন দিয়াসের পায়ে লেগে বল পান ভিনিসিউস জুনিয়র। তবে ছয় গজ বক্সের কোণা থেকে ভলি লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

দুই মিনিট পর প্রথম ভালো সুযোগ পায় সিটি। কাছ থেকে বের্নার্দো সিভার শট ফিরিয়ে জাল অক্ষত রাখেন থিবো কোর্তোয়া। ৩৮তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফিল ফোডেনের জোরাল শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান এই বেলজিয়ান গোলরক্ষক।

৪৩তম মিনিটে ফেরলঁদ মঁদির থ্রু বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ওয়ান-অন-ওয়ানে উড়িয়ে মারেন বেনজেমা। যদিও অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সুযোগ পান ভিনিসিউস। ডান দিক থেকে কারভাহালের বাড়ানো বলে কাছ থেকে অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মারেন তিনি। অবশ্য অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইসম্যান।

উল্টো ৭৩তম মিনিটে রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ কঠিন হয়ে যায়। দারুণ এক আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় সিটি। মাঝমাঠের কাছাকাছি থেকে বল ধরে এগিয়ে বক্সে ঢুকে ডান দিকে বাড়ান সিলভা। বাঁ পায়ের কোণাকুণি শটে বল জালে পাঠান রিয়াদ মাহরেজ।

৮৭তম মিনিটে দ্বিগুণ হতে পারত ব্যবধান। বাঁ দিক থেকে জ্যাক গ্রিলিশের প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে ফেরান ফেরলঁদ মঁদি।

রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু এরপরই। ৯০তম মিনিটে বেনজেমার ক্রসে কাছ থেকে পায়ের টোকায় সমতা টানেন রদ্রিগো। দ্বিতীয়ার্ধে টনি ক্রুসের বদলি নামা এই ব্রাজিলিয়ান যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে আবার জালে বল পাঠান। কারভাহালের ক্রসে ঠিক মতো হেড করতে পারেননি মার্কো আসেনসিও, তার পেছনেই থাকা অরক্ষিত রদ্রিগো কাজে লাগান সুবর্ণ সুযোগ।

দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-৫। যোগ করা সময়েই দুই দলের সামনে সুযোগ আসে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার। রদ্রিগোর হ্যাটট্রিক হওয়া ঠেকান এদেরসন। ডি-বক্সে অরক্ষিত ফোডেন উড়িয়ে মারেন বল।

ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর কিছুক্ষণ পরই আবারও সিটির জালে বল! ৯৫তম মিনিটে সফল স্পট কিকে রিয়ালকে এগিয়ে নেন বেনজেমা। ডি-বক্সে ফরাসি ফরোয়ার্ডকে সিটির দিয়াস ফাউল করায় পেনাল্টি পেয়েছিল রিয়াল।

ম্যাচ টাইব্রেকারে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল সিটি। তবে ফোডেনের হেড ফিরিয়ে দেন ম্যাচ জুড়ে ব্যস্ত সময় কাটানো কোর্তোয়া।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বের্নাবেউয়ে নকআউট পর্বের ম্যাচ মানেই রিয়ালের প্রত্যাবর্তনের গল্প যেন অবধারিত। শেষ ষোলোয় পিএসজির বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে ৬০ মিনিট পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল তারা। এরপর বেনজেমার দারুণ এক হ্যাটট্রিকে তারা পা রাখে পরের ধাপে।

শেষ আটে চেলসির মাঠে ৩-১ ব্যবধানে জেতার পর ঘরের মাঠে এক পর্যায়ে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। আবারও জাগে বিদায়ের শঙ্কা। ঠিক তখনই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। দুই গোল শোধ করে পা রাখে শেষ চারে।

এবার ফিরে আসার আরেকটি গল্প লিখল তারা সিটির বিপক্ষে।

২০১৮ সালের পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠল রিয়াল। সেবার ফাইনালে লিভারপুলকে হারিয়েই শিরোপা উৎসব করেছিল তারা। ইংলিশ দলটি এবার পারবে প্রতিশোধ নিতে? নাকি আরও সমৃদ্ধ হবে স্পেনের সফলতম দলটির রেকর্ড? সময় দেবে জবাব!