ইতিহাদ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে কখনোই এগিয়ে যেতে পারেনি রিয়াল। শুধু লড়ে গেছে পেছন থেকে। শেষ পর্যন্ত ৪-৩ গোলে জিতেছে পেপ গুয়ার্দিওলার দল।
কেভিন ডে ব্রুইনের গোলে সিটি এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গাব্রিয়েল জেসুস। বেনজেমা একটি গোল শোধ দিয়ে আশা জাগালেও ফিল ফোডেনের হেডে আবারও তা মিউয়ে যায়।
তবে নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে শেষ বলে যেন কিছু ছিল না। ফোডেন গোল করতেই চমৎকার গোলে ব্যবধান কমান ভিনিসিউস। এরপর বের্নার্দো সিলভার ঘটনাবহুল গোল এবং শেষে গিয়ে বেনজেমার সফল স্পট কিক।
ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতাটিতে এই নিয়ে টানা তিনবার রিয়ালকে হারাল সিটি।
শুরুর বাঁশি থেকে পজেশন ধরে রেখে দ্বিতীয় মিনিটেই সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান ডে ব্রুইনে। ডান দিকে সতীর্থের পাস পেয়ে দুই জনের বাধা পেরিয়ে ছয় গজ বক্সের মুখে ক্রস বাড়ান রিয়াদ মাহরেজ। আর ডাইভিং হেডে গোলটি করেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার।
একাদশ মিনিটে লক্ষ্যে দ্বিতীয় শটেই দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যায় সিটি। বাঁ দিক থেকে বক্সে বল বাড়ান ডে ব্রুইনে। গত শনিবার প্রিমিয়ার লিগে ওয়াটফোর্ডের জালে ৪ গোল করা জেসুসের সঙ্গে লেগেই ছিলেন দাভিদ আলাবা; কিন্তু দলকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে রিয়ালের বিপক্ষে এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে জালের দেখা পেলেন জেসুস। ২০১৯-২০ আসরে সবশেষ দেখা হয়েছিল দুই দলের। দুই লেগেই ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল সিটি এবং দুই ম্যাচেই একটি করে গোল করেছিলেন জেসুস।
রিয়াল ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ পায় ৩৩তম মিনিটে। মাহরেজের থেকে বল কেড়ে বাঁ দিকে ফেরলঁদ মঁদিকে বাড়ান লুকা মদ্রিচ। আর ফরাসি এই লেফট-ব্যাক ক্রস বাড়ান ডি-বক্সে। খুব একটা ভীতি জাগানিয়া কিছু ছিল না; তবে সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষের বাধা এড়িয়ে বাঁ পায়ের দারুণ শটে গোলটি করেন রিয়ালের হয়ে সব মিলিয়ে ৬০০তম ম্যাচ খেলতে নামা বেনজেমা। পোস্টে লেগে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
নকআউট পর্বে এই নিয়ে টানা ৪ ম্যাচে জালের দেখা পেলেন বেনজেমা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গোল খেতে বসেছিল রিয়াল। আলাবার বদলি নামা নাচো ফের্নান্দেসের ভুলে বল ধরে সবাইকে পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মাহরেজ। কোনাকুনি শটও নেন তিনি, ভাগ্যের ফেরে বল লাগে পোস্টে। তারপরও সুযোগ ছিল, কিন্তু ফিরতি বল ধরে ফোডেনের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন দানি কারভাহাল।
এ যাত্রায় পাল্টা জবাব দিতে একেবারেই দেরি করেনি রিয়াল এবং এর পুরো কৃতিত্ব ভিনিসিউসের। দুই মিনিট পর বাঁ দিকের সাইডলাইনে মঁদির পাস ধরতে গিয়ে অসাধারণ নৈপুণ্যে ডজ দেন ডিফেন্ডার ফের্নান্দিনিয়োকে, বল বেরিয়ে যায় তার দুই পায়ের ফাঁক গলে। ঘুরে বল ধরেই ভিনিসিউস দেন ছুট। তার গতির সঙ্গে পেরে ওঠেনি কেউ। বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে ব্যবধান কমান তরুণ ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৬৭তম মিনিটে নিশ্চিত সুযোগ পেয়েছিলেন এমেরিক লাপোর্তে; তবে গোলমুখ থেকে তার দুর্বল শট রুখে দেন দেন থিবো কোর্তোয়া। এর সাত মিনিট পর ব্যবধান আবারও দুই গোলে বাড়ান সিলভা।
৮২তম মিনিটে সফল স্পট কিকে স্কোরলাইন ৪-৩ করেন বেনজেমা। বক্সে হেড নিতে যান তিনি। তার সঙ্গে লাফিয়ে ওঠা লাপোর্তের হাতে বল লাগায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে এই নিয়ে সবশেষ চার ম্যাচে দুটি হ্যাটট্রিকসহ বেনজেমার গোল হলো ৯টি। আসরে হলো ১৪ গোল, গোলদাতার তালিকার রবের্ত লেভানদোভস্কিকে ছাড়িয়ে বসলেন শীর্ষে।
মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বেনজেমার গোল হলো ৪১ ম্যাচে ৪১টি।
বল দখলে আধিপত্য করা সিটি শেষ দিকেও সুযোগ পেয়েছে বেশ কয়েকটি। তবে সেগুলো কেবলই প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরাতে পেরেছে, স্কোরলাইনে আর পরিবর্তন আনতে পারেনি।
তবে সুযোগ পেয়েও ব্যবধানটা আরও বাড়িয়ে নিতে না পারায় আফসোস করতেই পারে সিটি। কেননা ফিরতি লেগ যে হবে প্রতিপক্ষের মাঠে, সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে।
আগামী বুধবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে চেনা আঙিনায় নামবে কার্লো আনচেলত্তির দল। আর সিটির লক্ষ্য থাকবে ব্যবধান ধরে রাখার, টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠার।