কাম্প নউয়ে রোববার লা লিগার ম্যাচে ৪-২ গোলে জিতেছে দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময় এক জন কম নিয়ে খেলা বার্সেলোনা। ইয়ানিক কারাসকোর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর জর্দি আলবা, গাভি ও রোনালদ আরাহোর লক্ষ্যভেদে প্রথমার্ধেই নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধে দানি আলভেস ব্যবধান আরও বাড়ানোর পর একটি গোল শোধ করেন লুইস সুয়ারেস।
নতুন শুরুর আশা জাগানো এই জয়ে লিগ টেবিলেও উন্নতি হয়েছে বার্সেলোনার। আতলেতিকোকে পেছনে ঠেলে চতুর্থ স্থানে উঠেছে কাতালান ক্লাবটি।
আসরে প্রথম দেখায় গত অক্টোবরে আতলেতিকোর মাঠে ২-০ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। দাপুটে পারফরম্যান্সে এবার মধুর প্রতিশোধ নিল তারা।
ছন্দ খুঁজে ফেরা দল দুটির মুখোমুখি লড়াই অবশ্য শুরু থেকেই দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ালো। প্রথম ১৫ মিনিটে তারা একবার করে লক্ষ্যে বল রাখতে পারল এবং দুটিই খুঁজে পেল কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা।
বার্সেলোনা অবশ্য গোল পেতে পারত পঞ্চম মিনিটেই। তবে ফেররান তরেসের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর তিন মিনিট পরই এগিয়ে যায় আতলেতিকো। ডান দিক থেকে লুইস সুয়ারেসের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন কারাসকো।
এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ অবশ্য দুই মিনিটও স্থায়ী হয়নি আতলেতিকোর। তাদের উদযাপন শেষে আবার খেলা শুরু হতেই অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে সমতা টানেন আলবা।
বার্সেলোনার জার্সিতে আলবার এটি ১৪তম গোল। আগের ১৩ গোলের ম্যাচের ১২টিতেই জয় পেয়েছিল দলটি। সংখ্যাটা এবার বাড়ল আরও।
২১তম মিনিটে আবারও গোল উদযাপন করে বার্সেলোনা। কদিন আগে দলে আসা ত্রাওরে ডান দিক থেকে ডি-বক্সের মাঝ বরাবর ক্রস বাড়ান। লাফিয়ে হেডে দলকে এগিয়ে নেন তরুণ মিডফিল্ডার গাভি।
এগিয়ে গিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বার্সেলোনা প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগই দিচ্ছিল না। একের পর এক আক্রমণে চাপ ধরে রেখে ৪৩তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় তারা।
আলভেসের ফ্রি কিকে জেরার্দ পিকের হেড ক্রসবারে লেগে ফিরলে লাফিয়ে শট নেওয়ার চেষ্টা করেন তরেস। ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারেননি তিনি। তবে কাছেই দাঁড়ানো আরাহো কোনো ভুল করেননি। ডান পায়ের জোরাল শটে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন উরুগুয়ের এই ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয় মেয়াদে বার্সেলোনায় ফিরে এই প্রথম গোল পেলেন অভিজ্ঞ ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার। দলটির হয়ে আগের সবশেষ গোলটি তিনি করেছিলেন ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে, কোপা দেল রেতে ভিয়ানোভেন্সের বিপক্ষে। আর লিগে সবশেষ গোল করেছিলেন ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, সেভিয়ার জালে।
প্রথম ৫০ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে মোট আটটি শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখতে পারে বার্সেলোনা, যার প্রতিটিই খুঁজে নেয় ঠিকানা। বাকি সময়ে উল্লেখযোগ্য আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা।
৫৮তম মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে নাটকীয়তার আভাস দেয় আতলেতিকো। কর্নারে উড়ে আসা বলে জোসে মারিয়া হিমেনেসের হেডে গোলমুখে বল পেয়ে হেডেই বল জালে পাঠান সুয়ারেস। গোলের পর সাবেক ক্লাবের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করেন উরুগুয়ে স্ট্রাইকার।
১০ মিনিট পর বড় থাক্কা খায় বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার কারাসকোকে পেছন ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন আলভেস।
২০০৪-০৫ মৌসুমের পর বার্সেলোনার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লা লিগায় এক ম্যাচে গোল করলেন, করালেন এবং শেষে লাল কার্ডও দেখলেন ৩৮ বছর বয়সী এই রাইট-ব্যাক।
শেষ ২০ মিনিটে আতলেতিকোর দুই ও স্বাগতিকদের এক খেলোয়াড়ও দেখেন হলুদ কার্ড। তবে এদিনের বার্সেলোনা ছিল ভিন্ন মেজাজে, যাদের দমানো যায় না।
পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশ্যে সফরকারীরা ১০ শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখতে পারে। তবে শুরুর ওই গোল আর শেষের কয়েক মিনিটের মাঝে বার্সেলোনাকে খুব বেশি ভাবাতে পারেনি তারা।
কাম্প নউয়ের গ্যালারিতেও যেন অনেক দিন পর ফিরল প্রাণ। ম্যাচ শেষে তুমুল করতালিতে ঘরের ছেলেদের অভিবাদন জানায় তারা।
২২ ম্যাচে ১০ জয় ও আট ড্রয়ে বার্সেলোনার পয়েন্ট হলো ৩৮। ২ পয়েন্ট কম নিয়ে পঞ্চম স্থানে নেমে গেছে আতলেতিকো।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে শাভি বলেছিলেন, এ মৌসুমে এখন তাদের মূল লক্ষ্য লিগের শীর্ষ চারে থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়া। শীর্ষে চারে ফেরা হলো, এবার তাদের সামনে অবস্থানটাকে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।